কিছুটা নুনও যায়। জল-মুড়ির সঙ্গে আখের বা খেজুর গুড় মেশানো যেতে পারে। অরুণাংশুবাবুর মতে, বেলা ১২টা থেকে বিকেল তিনটে বা চারটে পর্যন্ত রোদ এড়ানো উচিত। স্কুলে যাওয়া বা বাড়ি ফেরা তার আগে হলে ভাল হয়।
ফাইল চিত্র।
প্রবল গরমে পড়ুয়াদের সুস্থ রাখা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি স্কুলে এসে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াও। এবং কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে এই গরমেও স্কুল করতে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনটাই মনে করছেন শহরের চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ। আগামী ২ মে থেকে স্কুলে গরমের ছুটি ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা কেউই সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তবে অনেকেরই বক্তব্য, স্কুল ফের দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেলে পড়ুয়াদেরই ক্ষতি হবে।
এমনিতেই করোনার জেরে দু’বছর বন্ধ ছিল ক্লাস। ফের স্কুল খোলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি। করোনা পুরোপুরি বিদায় না নিলেও স্কুল খোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। বলেছিলেন, স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে। ফিরতে হবে স্বাভাবিক জীবনে। আর স্কুল বন্ধ রাখা চলবে না। করোনা পরিস্থিতির বিশেষ অবনতি না হলেও গরমের জন্য নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ২ মে থেকে স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুল ফের খুলবে ১৫ জুন। অর্থাৎ, ৪৫ দিন গরমের ছুটি!
শিশুরোগ চিকিৎসক সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায়ের মতে, পড়াশোনা বন্ধ করলে চলবে না। তবে গরমে যাতে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে না পড়ে, সেটাও দেখতে হবে। তার জন্য স্কুলের সময় এগোনো যেতে পারে। সুচন্দ্রা বলেন, “স্কুলে যেন পড়ুয়ারা প্রচুর পরিমাণ জল খায়। চড়া রোদে ছোটাছুটি চলবে না। শিক্ষকদেরও এটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে খেলার ক্লাস বাদ দিতে হবে। বেশি গরমে ছোটাছুটি করলে ‘এনার্জি লেভেল’ বেড়ে যায়। তাতে নানা ধরনের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে। শরীর খারাপও হতে পারে। তাই রোদে খেলাধুলো না করাই ভাল। রোদ এড়িয়ে স্কুলে যাওয়া বা বাড়ি ফেরায় সমস্যা নেই।”
দু’বছর পরে স্কুল খোলার সময়েই শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, এখন আর স্কুল বন্ধ করলে চলবে না। পড়ুয়াদের দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে হবে। বৃহস্পতিবার অপূর্ববাবু বললেন, “গরমের ছুটি আগে পড়লেও ছুটির দৈর্ঘ্য না বাড়ানোই ভাল। পরিস্থিতি বুঝে ছুটি এগিয়ে-পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ভোরে স্কুল করা যেতে পারে। বেশি গরম পড়লে কয়েক দিন অনলাইন ক্লাসও হতে পারে। তবে তাপপ্রবাহ কমলে ফের স্বাভাবিক রুটিনে ফিরতে হবে।” অপূর্ববাবু জানান, দিনে দু’বার করে স্নান করলে, হালকা পোশাক পরলে, হালকা খাবার ও প্রচুর জল খেলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যাবে। চড়া রোদ এড়াতে হবে।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানালেন, স্কুল খুলে রাখা হবে কি না, সেটা শিক্ষা দফতরের বিষয়। কিন্তু যাঁরা স্কুল খুলে রেখেছেন, তাঁরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে স্কুলে যেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। দেখতে হবে, এই সময়ে পড়ুয়ারা যেন বাইরের খাবার না খায়। তাদের শরীরে যেন জলের ঘাটতি না থাকে। প্রস্রাব সময়মতো হচ্ছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। সেই সঙ্গে হালকা পোশাক, হালকা খাবার, দিনে দু’বার স্নান— এই নিয়মগুলো মানতে হবে। তাঁর মতে, নুন-চিনির শরবতের পাশাপাশি এই গরমে জল-মুড়িও খুব ভাল খাবার। তাতে শরীরে জল ও শর্করা, দুটোই যায়। কিছুটা নুনও যায়। জল-মুড়ির সঙ্গে আখের বা খেজুর গুড় মেশানো যেতে পারে। অরুণাংশুবাবুর মতে, বেলা ১২টা থেকে বিকেল তিনটে বা চারটে পর্যন্ত রোদ এড়ানো উচিত। স্কুলে যাওয়া বা বাড়ি ফেরা তার আগে হলে ভাল হয়।