Coronavirus In India

পরোক্ষে ঘ্রাণশক্তিকে নষ্ট করে কোভিড-১৯, জানাল গবেষণা

দিল্লির ‘ইন্দ্রপ্রস্থ ইনস্টিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকনোলজি’-র একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এই দাবি করেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৩২
Share:

হঠাৎ ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা হতে পারে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ। ছবি- পিটিআই।

আপনার জ্বর হয়নি। সর্দিও হয়নি। হাঁচি, কাশিও জ্বালিয়ে মারছে না। শুধুই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন হঠাৎ। কোনও কিছুরই গন্ধ অনুভব করতে পারছেন না। এ বার এমন উপসর্গ দেখা গেলেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় আগেভাগে সতর্ক হওয়াই ভাল। রক্তপরীক্ষার আগেই।

Advertisement

সরাসরি না হলেও, ভয়ঙ্কর কোভিড-১৯ ভাইরাস আমাদের ঘ্রাণশক্তিকে নষ্ট করে দেয়, পরোক্ষে। দিল্লির ‘ইন্দ্রপ্রস্থ ইনস্টিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকনোলজি’-র একটি সাম্প্রতিক গবেষণা এই দাবি করেছে। ফলে, নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে হঠাৎ ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা। মাসখানেক আগে ব্রিটেনের চিকিৎসকদের একটি গবেষণাও এমন দাবি করেছিল।

গবেষণাপত্রটি অবশ্য এখনও কোনও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। অন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছেন।

Advertisement

গবেষকরা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনগুলির কোনও ক্ষতি করে না। কিন্তু আমাদের নাসারন্ধ্রের উপরের স্তরে থাকা এক ধরনের কোষের ক্ষতি করে। এই কোষগুলিকে বলা হয়, ‘সাসটেনটাকুলার কোষ’ এবং ‘ব্যাসাল কোষ’। এই ব্যাসাল কোষগুলি নাসারন্ধ্রের উপরের স্তরে সাজানো থাকে সমান্তরাল ভাবে।

নাসারন্ধ্রের এই দু’ধরনের কোষের জন্যই যে আমরা কোনও কিছুর ঘ্রাণ নিতে পারি, তা কিন্তু নয়। এই দু’ধরনের কোষ আদতে আমাদের ঘ্রাণশক্তির সহায়ক। যে কোষগুলির জন্য আমরা বিভিন্ন জিনিসের ঘ্রাণ নিতে পারি, এই দু’ধরনের কোষ তাদের সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন না দিলে ‘ফল’ ভুগতে হবে, ভারতকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

আরও পড়ুন: খুব বিপদে পড়া দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাঠানো হবে: বিদেশমন্ত্রক​

গবেষকরা দেখেছেন, হঠাৎ ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলার ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলির হদিশ মিলতে শুরু করে। তখন জ্বর আসে, কফ খুব শুকনো হয়ে যায়। শুরু হয় শ্বাসকষ্টও।

এই গবেষণা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ‘কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর-জেনারেল, মলিকিউলার বায়োলজিস্ট সমীর ব্রহ্মচারী জানিয়েছেন, এর ফলে ঘ্রাণশক্তি হারালেই কেউ নিজেকে আইসোলেশনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, এটা কিছুটা নতুন ধরনের পর্যবেক্ষণ। এর আগে কেউ কেউ ঘ্রাণশক্তি হারালে পরে তাঁদের কেউ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন জানা যায়নি। তবে ব্রিটেনের চিকিৎসকদের এই পর্যবেক্ষণ অন্য চিকিৎসকদের আরও সতর্ক হতে সাহায্য করবে। জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশি না হলেও যাঁরা হঠাৎ ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বলে এ বার ডাক্তারদের চেম্বারে আসবেন, এখন তাঁদেরও হোম আইসোলেশনে রাখার কথা ভাবতে পারবেন চিকিৎসকেরা। তাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমবে।

এর আগে ব্রিটিশ গবেষকরাও জানিয়েছিলেন, ব্রিটেনে হঠাৎ শুধুই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা কয়েক জনের রক্তপরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তাই এই উপসর্গটিকেও করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ বলে ধরা যেতে পারে। পরে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অটোল্যারিঙ্গোলজির তরফেও মার্কিন মুলুকে এমন পর্যবেক্ষণের কথা জানানো হয়েছে।

চিকিৎসকেরা অবশ্য এও বলছেন, ব্রিটেনের গবেষণা এখনও শেষ হয়নি। করোনা সংক্রমণ শুরুর মাসদু’য়েকের মধ্যেই হয়েছে এই পর্যবেক্ষণ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গেলে আরও তথ্য, আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন।

অরিন্দমের কথায়, ‘‘যাঁরা হঠাৎ ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছিলেন প্রাথমিক ভাবে, তাঁদের মধ্যে কত জন পরে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন এখনও পর্যন্ত তা জানা যায়নি। এও জানা যায়নি, ব্রিটেনের যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে সেখানে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা কত।’’

তবে চিকিৎসকদের মতে, এই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলার উপসর্গটিকেও করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ বলে ধরে নিয়ে এগলে বরং আরও সতর্ক হওয়া যাবে। তাঁরা যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের হোম আইসোলেশনে রাখার কথা আগেভাগেই ভাবতে পারেন ডাক্তাররা। জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো অন্য উপসর্গগুলির জন্য অপেক্ষায় সময় নষ্ট না করে।

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement