Contagion

ভাইরাসের মরসুমে জনপ্রিয়তা তুঙ্গে মহামারির সাহিত্য-সিনেমার 

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পণ্ডিতমশাই’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গণদেবতা’ ও ‘পঞ্চগ্রাম’ উপন্যাসের কথা মনে করাচ্ছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

সুনীতা কোলে

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৪
Share:

‘কন্টাজিয়ন’ ছবির একটি দৃশ্য।

বিশ্বায়নের রমরমার যুগেও গোটা পৃথিবী এ ভাবে এক সূত্রে বাঁধা পড়েছে কি? ব্যবসা, রাজনীতি, অর্থনীতি, পর্যটন— সব ছাপিয়ে আজ বিশ্ব জুড়ে একটাই আলোচিত বিষয়— নোভেল করোনাভাইরাসের দাপট। কোন দেশে কত জন আক্রান্ত হলেন, রোগ কী ভাবে সংক্রমিত হচ্ছে, লকডাউন কত দিন চলবে, এই আলোচনার মধ্যেই রাতারাতি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সাহিত্য-সিনেমায় মহামারি বা অতিমারির প্রসঙ্গও।

Advertisement

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সারা বিশ্ব জুড়ে একটি সিনেমা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘কন্টাজিয়ন’। এশিয়ার একটি দেশে বাদুড়ের দেহ থেকে শুকরের দেহে সংক্রমণ ছড়ায়। সেই শুকরের মাংস খেয়ে সংক্রমিত হন এক মহিলা। তার পরে সেই এক জনের থেকে কী ভাবে একটি ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং অতিমারির আকার ধারণ করে, সিনেমার বিষয় ছিল সেটাই। যা প্রায় হুবহু মিলে গিয়েছে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে। ফলে নতুন করে ফের সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। প্রযোজক সংস্থার দাবি, ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি দেখা সিনেমার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ‘কন্টাজিয়ন’।

সিনেমার পাশাপাশি সাহিত্যে মহামারির প্রসঙ্গও ভিড় করছে অনেকের স্মৃতিতে। করোনা-সংক্রমণ জাঁকিয়ে বসায় পাঠকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন আলবেয়ার কামুর ‘দ্য প্লেগ’ উপন্যাসের কথা। সাহিত্য সমালোচকদের একাংশ উপন্যাসটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সে নাৎসি বাহিনীর হানার রূপক হিসেবে মানলেও বর্তমান সময়ে গুরুত্ব পাচ্ছে এর আক্ষরিক বর্ণনাই। কোয়রান্টিন, বিশেষ পদ্ধতিতে সৎকার, স্তব্ধ পরিবহণ ব্যবস্থা, চিকিৎসাকর্মীদের উদ্যোগ, প্রিয়জনেদের জন্য উদ্বেগ, বিপর্যয়ে এক সঙ্গে লড়াইয়ের অঙ্গীকার— এ যেন বইয়ের পাতায় বর্তমানেরই প্রতিচ্ছবি। ইউরোপে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করার শুরুতেই ইংল্যান্ডে বইটির চাহিদা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, সেটি পুনর্মুদ্রণ করার নির্দেশ দেয় প্রকাশক সংস্থাটি।

Advertisement

বাংলা সাহিত্যেও বারবার এসেছে প্লেগ, কলেরার বর্ণনা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পণ্ডিতমশাই’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গণদেবতা’ ও ‘পঞ্চগ্রাম’ উপন্যাসের কথা মনে করাচ্ছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আগে দূষিত জল খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তেন, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। সব সময়ে তার ঠিক পরিসংখ্যানও মিলত না। স্বাভাবিক ভাবেই সাহিত্যে তার প্রতিফলন ঘটেছে। তবে বিশ্বজোড়া এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা কোথাও পাইনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দাঙ্গার স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা তো আমাদের কাছেও নতুন।’’

তবে অভূতপূর্ব এই পরিস্থিতিতে এমন সিনেমা দেখা বা বই পড়া কি আরও বেশি আতঙ্ক তৈরি করবে না? মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘করোনা সংক্রান্ত কোনও কিছু দেখবেন না, এটা বলা তো যুক্তিযুক্ত নয়। মানুষ একটা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে‌ন। সময়ের সঙ্গে সিনেমার গল্প মিলে যাওয়ায় তাঁরা সেটা দেখছেন। তবে মনে রাখতে হবে, সিনেমায়, গল্পে অতিরঞ্জন থাকে। শুধু সেই দিকটা যেন বেশি গুরুত্ব না পায়। যে যেমন ভাবে পারছেন, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’ তাঁর পরামর্শ, এমন ধরনের সিনেমার পাশাপাশি মন ভাল করে দেওয়ার মতোও কিছু দেখুন। তবে ঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের উপরে ভরসা করাই উচিত। করোনা-আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার মতো ইতিবাচক তথ্যকেও গুরুত্ব দিতে হবে এই সময়ে।

অনিশ্চয় এই সময়ের তুলনা সাহিত্যে খোঁজার প্রবণতাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। তাঁর মতে, নিরাপদ বাসস্থান রয়েছে যাঁদের, তাঁরাই এ নিয়ে আলোচনা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘দেশের মরণ-বাঁচন সমস্যা। এ সময়ে মহামারি নিয়ে বই পড়ছেন জনসংখ্যার খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ। এটা বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement