করোনার ভ্যাকসিন কাজ লাগতে পারে আরও বহু অসুখের ক্ষেত্রেও। —ফাইল চিত্র
কোভিড থেকে শুধু নয়, নতুন ভ্যাকসিন নাকি মুক্তির আলো দেখাতে পারে ক্যানসার থেকেও। সাম্প্রতিক গবেষণা এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মডার্না এবং ফাইজারের টিকায় উত্তর থাকতে পারে এই মারণব্যাধির, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
হালে কোভিড ভাইরাসের বেশ কিছু নতুন স্ট্রেন কপালে ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। ইংল্যান্ডে তো বটেই, নাইজেরিয়াতেও পাওয়া গিয়েছে এই ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে, যে ভাবে কোভিডের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ এগোচ্ছে, তাতে অন্য বহু রোগের নিরাময়ের রাস্তাও খুলে যাবে ভবিষ্যতে।
কোথায় আলাদা এই ভ্যাকসিন
অন্যান্য ভ্যাকসিনের কাজের ধরনের সঙ্গে কোভিডের ভ্যাকসিনের কাজের ধরনের পার্থক্য আছে। অন্য ভ্যাকসিন শরীরে ঢুকে জীবাণুকে দুর্বল করে দেয়। ফলে শরীর সেই জীবাণুঘটিত অসুখটির সঙ্গে লড়াই করার শক্তি পেয়ে যায়। ভবিষ্যতে ওই জীবাণু আবার আক্রমণ করলেও শরীর তাকে অনেকাংশে প্রতিহত করার অবস্থায় থাকে। কিন্তু কোভিডের ভ্যাকসিন এই পদ্ধতিতে কাজ করছে না। এর উপাদানে রয়েছে নিউক্লেইক অ্যাসিড। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয়, এমআরএনএ। এটি শরীরকে লড়াই করার জন্য বিশেষ ধরনের ভাইরাল প্রোটিন তৈরির নির্দেশ দেয়, যা কোভিডের মতো রোগের জীবাণুদের সঙ্গে লড়াই করার অ্যান্টিজেন উৎপাদন করতে সাহায্য করে। শুধু কোভিডই নয়, যেমন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, তার প্রয়োজন মতো অ্যান্টিজেন উৎপাদনের নির্দেশই দেয় এই এমআরএনএ। আর সেখান থেকেই উঠে আসছে ক্যানসারের মতো রোগের বিরুদ্ধে এই এমআরএনএ-কে কতটা কাজে লাগানো যাবে, সেই প্রশ্ন।
চলছে এমআরএনএ ভ্যাকসিনের কাজ
ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এমআরএনএ-র ভূমিকা
ক্যানসারের বিরুদ্ধে এমআরএনএ টিকার প্রয়োগের পরিকল্পনা আজকের নয়। এমনটাই বলছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিজিৎ রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়: ‘‘গত ১০-১২ বছর ধরেই ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এমআরএনএ ভ্যাকসিনের প্রয়োগ নিয়ে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এত দিন গবেষণার কাজটা যে গতিতে চলছিল, কোভিডের কারণে সেই গতি অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।’’ ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক চট্টোপাধ্যায়েরও একই মত, ‘‘এমআরএনএ নিয়ে কাজ চলছিলই। এক দিন না এক দিন বিশেষ কিছু ক্যানসারের চিকিৎসায় এর প্রয়োগ শুরু হতই। সেটাই বেশ খানিকটা ত্বরাণ্বিত হল। অচিরেই ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা, কিডনির ক্যানসার-সহ আরও বেশ কয়েকটি ক্যানসারের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ শুরু হতেই পারে।’’
কোভিড টিকা কেন ক্যানসারের চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে
যে কোনও ভ্যাকসিনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে তার ‘ক্লাস এফেক্ট’ বোঝা প্রয়োজন। বলছেন কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। ‘‘এখন একসঙ্গে ৮৪ হাজার রোগীর উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা যাচ্ছে, তার ক্লাস এফেক্ট কী হতে পারে। অর্থাৎ, ভ্যাকসিনটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে শুরু করে আর কী কী প্রভাব রয়েছে, তা চট করে জানা যাচ্ছে ৮৪ হাজার কোভিড আক্রান্তের থেকেই। কিন্তু একই সংখ্যক ক্যানসার রোগীর শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর তার ক্লাস এফেক্ট বুঝতে দীর্ঘ সময় লাগত’’, এমনটাই বলছেন তিনি। কোভিড এসে এ ক্ষেত্রে সুবিধা করে দিল বলে মত অরিজিৎ রায়চৌধুরীরও। ‘‘যে কাজটা ‘হচ্ছে-হবে’ করে চলছিল, সেটা এখন ‘হতেই হবে’ পর্যায়ে চলে এসেছে। প্রচণ্ড গুরুত্ব দিয়েএমআরএনএ ভ্যাকসিনের কাজ চলছে। এবং এখন বিপুল পরিমাণে অর্থ এখানে ঢালা হচ্ছে। সেটা গবেষণাটার কাজকে অনেকটা এগিয়ে দেবে’’, মত অরিজিতের।
কোভিডের কারণে ভয়ঙ্কর এক পৃথিবীকে প্রত্যক্ষ করল মানুষ। কিন্তু দীর্ঘ রাতের শেষেও যে ভাবে ভোর আসে, সে ভাবেই এই টিকার মাধ্যমে আরও বহু দুরারোগ্য অসুখের অবসানের স্বপ্ন দেখছে চিকিৎসা বিজ্ঞান।
আরও পড়ুন: বার্ড ফ্লুর ভয়ে ডিম বা চিকেন খাওয়া বন্ধ নয়
আরও পড়ুন: করোনা-আবহে শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্যে জোর