ওজন কমাতে ভাতই থাকুক পাতে। ছবি: শাটারস্টক।
শরীরের বাড়তি মেদ যখন জানান দেয় বিপদের, তখনই তা ঝরিয়ে ফেলার জন্য অতিমাত্রায় সতর্ক হয়ে উঠি আমরা। বাদ চলে যায় ভাত। কঠিন ও কঠোর ডায়েটে অভ্যস্ত হতে চাই প্রথম থেকেই। শরীরের ফ্যাট পোড়ানোর জন্য যে সব প্রচলিত উপায় আমরা জানি, সে সবের প্রয়োগও করতে থাকি পর পর।
কিন্তু মুশকিল হল, নিজেদের ইচ্ছামতো ডায়েট বাছতে গিয়ে বিপদ বাড়ান অনেকেই। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়ে ডায়েট বাছতে গিয়ে শরীরে ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। ভাত বাদ দিয়ে হয়তো বাছেন এমন কোনও সিরিয়াল যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই ডায়েট বাছার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি।
পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহ জানালেন, ভাত আদ্যন্ত নিরীহ খাবার। প্যাকেটজাত সিরিয়ালগুলোর চেয়ে অনেক গুণে ভাল। ভাতকে বলে ‘ফ্রি ফুড’। কারণ এতে সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, গ্লুটেন ইত্যাদি ক্ষতিকর উপাদান থাকে না। চর্বি থাকেই না প্রায়৷ বিশেষ করে ট্রান্স ফ্যাট, যা খেলে কোলেস্টেরল বাড়ার আশঙ্কা থাকে৷ স্যাচুরেটেড ফ্যাটও থাকে না। বরং থাকে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা স্টার্চ, শরীরকে শক্তি জোগাতে যার বিরাট ভূমিকা। ফাইবারের উপস্থিতিও পেটের সমস্যা কমাতে, ওজন–সুগার–রক্তচাপ বশে রাখতে যার ভূমিকা আছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভাত খেলে মেদ জমার যে ধারণা রয়েছে তাতেও রয়েছে ভাবনার অনেক গলদ। ভাত যদি নিয়ম মেনে খাওয়া যায়, তা হলে তা থেকে শরীরে মেদ জমে না তেমন। মূলত ভাতের গ্লাইকোজেন সহজে গলে না বলেই ভাত এড়িয়ে চলেন অনেকে, নিয়ম মানলে সে ভয়ও কাটে।’’
দিনে যদি ১৫০ গ্রাম চালের ভাতও খান, তাতেও ৫০০ ক্যালোরির বেশি ঢোকে না শরীরে। দিনে ২০০০–২২০০ ক্যালোরি খাওয়ার বরাদ্দ থাকলে এর সঙ্গে স্যালাড, স্যুপ, কম তেলে রান্না করা ডাল–তরকারি–মাছ–মাংস, যাই খান না কেন, এক দিকে যেমন সুষম খাবারের হিসেব মেলে কাঁটায় কাঁটায়, অন্য দিকে ক্যালোরি বজায় রাখাও সহজ হয়।
হোল গ্রেন রাইসে বদলে ফেলুন আপনার বাড়ির সাদা চালকে। ছবি: শাটারস্টক।
কী ভাবে ভাত খেলে জমবে না মেদ? রইল হদিশ।
ভাতের সঙ্গে সমপরিমাণে স্যালাড ও সব্জি খান। এক কাপ ভাত খেলে, সমান কাপের মাপে স্যালাড ও সব্জি থাকুক পাতে। এতে ভাতের গ্লাইকোজেন জমে থাকবে না, সহজে গলার সুয়োগ পাবে। তাই লোভে পড়ে অনেকটা ভাত একসঙ্গে নয়। ততটাই ভাত খান, যতটা তরিতরকারি সঙ্গে নিচ্ছেন। ভাতের পরিমাণটা কমান। বরং তার জায়গায় পেট ভরাতে বেশি করে মাছ, মাংস বা উদ্ভিজ্জ্ নানা প্রোটিন খান। ডাল, সব্জির পরিমাণ বাড়িয়েও ভাত খেতে পারেন। ভাত খেয়ে উঠেই চা-কফি নয়। এতে ভাতের স্টার্চ শরীরে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। ভাত খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন অনেকে। সকাল থেকে তেমন কিছু না খেয়ে নানা কাজের পর দুপুরে পেটে কিছু পড়লেই ঝিমুনি আসবে, সে আপনি ভাত হোক বা অন্য কিছু৷ কিন্তু ভরপেট খেয়ে ঘুমোলেই বিপাকহার কমে শরীরে জমে মেদ। তাই ভাত খেয়ে ভাতঘুম নয়। হোল গ্রেন রাইসে বদলে ফেলুন আপনার বাড়ির সাদা চালকে। এর উপকারের প্রমাণ পেয়ে আজকাল তা চাষও হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এক কাপ বাদামি, লাল, কালো বা ওয়াইল্ড রাইস খেলে সারা দিনে যতটা হোল গ্রেন খাওয়ার কথা তার দুই–তৃতীয়াংশই পূরণ হয়ে যায়৷ বাড়ে না ওজনও।