অস্ত্রোপচারের মাঝপথে যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে গেলে রোগীকে ওই অবস্থায় ফেলে রাখা এবং নার্সিংহোমের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা না-নেওয়ার ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন পরিবারের লোকেরা।
এসএফ রোডের যে নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ গত ১২ মার্চ সেখানে রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, শনিবার সাড়ে ৭ টা নাগাদ অস্ত্রোপচার করতে ওটি’তে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ বাদে চিকিত্সক জানান, যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ায় মাঝপথে অপারেশন বন্ধ রাখতে হয়েছে। যন্ত্র ঠিক না হলে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। অভিযোগ, রোগীকে অন্যত্র নিতে চাইলেও এর পরে নার্সিংহোমের তরফে কোনও সহযোগিতা করা হচ্ছিল না। নার্সিংহোমের মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কথা বলতে চাননি। অথচ মাঝপথে অস্ত্রোপচার বন্ধ করে রোগীকে ওই অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে পুলিশে জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন মহলের চাপে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রোগীকে অন্য নার্সিংহোমে যেতে দিতে বাধ্য হন তাঁর পরিজনেরা।
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রোগীর মাথায় এবং রাইট হিপবোনে অস্ত্রোপচারের দরকার হয়। মাথার চিকিত্সা আগেই হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেন। ওই দিন সাড়ে ৭ টা নাগাদ হিপবোনের অস্ত্রোপচার শুরু হয়। তাতে সমস্যা হলে রোগীর পরিবারের নার্সিংহোমের কর্ণধার মলয় চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলতেচান। অথচ তিনি কথা বলেননি বলে অভিযোগ।
নার্সিংহোমের কর্ণধার মলয়বাবু বলেন, “কথা বলার ব্যাপার নেই। আমি তার আগে অন্য অপারেশন করে নার্সিংহোম রাউন্ড দিয়ে ৯ টা নাগাদ বাড়ি ফিরেছি। ওই রোগীর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকেরই কথা বলার কথা।”
দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অস্ত্রোপচারের সময় সি-আর্ম যন্ত্র খারাপ হওয়ায় মাঝপথে তা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের সভাপতি পীযূষ রায় জানান, ঠিক কী হয়েছে তা জানতে খোঁজ নিচ্ছি।
রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে একটি ছোট গাড়ির দুর্ঘটনায় আহত হয় তাপস সাহা নামে ওই রোগী। তাঁর মাথায় ও কোমরে চোট লাগে। তাঁকে শিলিগুড়ির এসএফ রোডে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবহারে ও চিকিত্সার পদ্ধতি পছন্দ না হওয়া পরিবারের লোকেরা তখনই অন্যত্র নিয়ে যেতে চান। তাপসবাবুর বৌদি বনশ্রীদেবী বলেন, “আমরা বৃহস্পতিবারই তাঁকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে অন্যত্র নিতে দিতে চাননি। তাঁরা হুমকি দেন, এখান থেকে নিয়ে গেলে অন্যত্র যাতে চিকিত্সা না হয় তার ব্যবস্থা করবেন।”তাতে ঘাবড়ে গিয়ে পরিবারের লোকেরা আর রোগীকে সরাননি। নার্সিংহোমের দাবি, যন্ত্র খারাপ হলেও তা সারিয়ে পর দিন অস্ত্রোপচার করা যেত। তবে রোগীর পরিবারের একাংশ তা শুনতে চাননি।