কী খেয়ে শক্তিমান শিউলি? ছবি: রয়টার্স
কমনওয়েলস গেমসে দেশকে সোনা এনে দিয়েছেন বাংলার অচিন্ত্য শিউলি। ভারোত্তোলনের ৭৩ কিলোগ্রাম বিভাগে সোনা জিতেছেন হাওড়ার সোনার ছেলে। ‘স্ন্যাচিং’ ও ‘ক্লিন অ্যান্ড জার্ক’ মিলিয়ে মোট ৩১৩ কিলোগ্রাম তুলে কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে রেকর্ডও গড়েছেন অচিন্ত্য। কেমন ছিল অচিন্ত্যর যাত্রা?
শুধু খেলার মঞ্চেই নয়, ছোট থেকেই জীবনের লড়াইতেও সংসারের ভার নিজের কাঁধে তুলতে হয়েছে অচিন্ত্যকে। হাওড়ার দেউলপুরের অচিন্ত্য বেড়ে উঠেছেন চরম দারিদ্রের মধ্যে। বাবা পেশায় ছিলেন ভ্যানচালক। টানাটানির সংসারেও দুই ভাই অলোক আর অচিন্ত্য স্বপ্ন দেখতেন ভারোত্তোলক হওয়ার। কিন্তু দু’বেলা খেতে পেতেই যেখানে করতে হয় লড়াই, সেখানে স্বপ্ন দেখা সহজ নয়। তার উপর ন’বছর আগে মারা যান বাবা। বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাইও পেটের দায়ে জরির কাজে মাকে সাহায্য করতেন। শেষমেশ ভাইয়ের স্বপ্নপূরণ করতে খেলা ছেড়ে দেন দাদা অলোক। এখনও অচিন্ত্যর মা জরির কাজ করেন। সাপ্তাহিক রোজগার মেরেকেটে ৫০০ টাকা। দাদা অলোক দমকল দফতরের অস্থায়ী কর্মী।
২০১০ সাল থেকে অচিন্ত্যর দাদা অলোক ভারোত্তোলনের অনুশীলন শুরু করেন। দাদার দেখাদেখি পরের বছর ভারোত্তোলন শুরু করেন অচিন্ত্যও। ২০১৩ সালে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন দুই ভাই। সে বার অচিন্ত্য চতুর্থ হয়েছিলেন। পরের বছর হরিয়ানায় জাতীয় গেমসে ব্রোঞ্জ পান তিনি।
আনন্দবাজার অনলাইনকে অচিন্ত্যর দাদা অলোক বলেন, ‘‘ছোটবেলায় এক দিন মাংস খেতে চেয়ে কেঁদে ভাসিয়েছিল ভাই। কিন্তু পরে ওইটুকু বয়সেই বুঝে যায় বাড়ির আর্থিক অবস্থার কথা। তার পর আর বায়না করেনি।’’ অলোক জানান, খিদে পেলে, মুখ বুজে ফেনা-ভাতই খেতেন অচিন্ত্য। ক্রমে সেই ফেনা-ভাতই হয়ে ওঠে তাঁর পছন্দের খাবার। আজও বাড়ি ফিরলে মা পূর্ণিমার কাছে ফেনা-ভাত খাওয়ার আবদার করেন তিনি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়াবিদ হতে গেলে তো পুষ্টি দরকার! সুযোগ আসে ২০২০ সালে। ‘স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’-র তরফ থেকে ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকের সম্ভাব্য পদকপ্রার্থীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় অচিন্ত্যকে। সাই-এর চিঠিতে যেন সঞ্জীবনী শক্তি ছিল। দারিদ্রের সংসারে কিছুটা সম্বল জুটবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে পারবেন— এটুকু আশ্বাসেই আবেগে ভেসে গিয়েছিলেন অচিন্ত্য। কমনওয়েলথে পদক জিতেও তাই সন্তুষ্ট থাকতে চান না তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নিজের প্রকৃত লক্ষ্য— অলিম্পিকের পোডিয়াম।