চুলের স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই, কিন্তু ভুলে যাই গোড়ার কথা অর্থাৎ স্ক্যাল্পের যত্ন। বিষয়টা অনেকটা চাষের জমির মতো। মাটিই যদি ভাল না হয়, তা হলে ফসল ভাল হবে কী করে? ঝলমলে চুল পেতে গেলে যত্ন নিতে হবে গোড়ার।
ত্বকের যত্নে যেমন স্ক্রাবিং, ক্লেনজ়িং, ময়শ্চারাইজ়িংকে গুরুত্ব দিই, স্ক্যাল্পের ক্ষেত্রেও তেমনই। তবে পরিচর্যার এই ধাপগুলো কতটা সময়ের ব্যবধানে করবেন, সেটা আগে জেনে নিতে হবে। স্ক্যাল্পে সমস্যা থাকলে কিন্তু চুল ভাল হবে না। তাই আগে জেনে নিন মাথার ত্বকে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না।
সমস্যা ও তার সমাধান
অনেকের স্ক্যাল্পে চুলকানি হয়, লালচে ভাব থাকে, ফুসকুড়ি হয়। খুশকির সমস্যায় তো অধিকাংশই জেরবার। এই সমস্যাগুলোর সমাধান না করলে চুল পড়া বন্ধ হবে না এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়াও সম্ভব নয়। এ ধরনের সমস্যা হয় ইনফ্ল্যামেশন থেকে। অনেক সময়েই ভুল শ্যাম্পু ব্যবহার করার ফলে ইচিং ও লালচে ভাব আসে। ভাল সালঁ কিংবা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন। সালফেট, অ্যালকোহল আছে, এমন প্রডাক্ট স্ক্যাল্পে ব্যবহার করবেন না।
শ্যাম্পুর প্রয়োজনীয়তা
স্ক্যাল্পের যত্ন নিতে শ্যাম্পুর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাথায় জমে থাকা ময়লা, ঘাম, ব্যাক্টিরিয়া দূর করে শ্যাম্পু। আপনার মাথার ত্বক অনুযায়ী শ্যাম্পু বাছবেন। তৈলাক্ত ও রুক্ষ ত্বকের শ্যাম্পু আলাদা। খুশকি থাকলে বিশেষ ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করলে ফল পাবেন। অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে শ্যাম্পু বাছাই করুন। এখন প্রশ্ন সপ্তাহে কতবার শ্যাম্পু করবেন? অনেকের মতে, দু’বারের বেশি শ্যাম্পু করা ভাল নয়। বিউটি এক্সপার্ট প্রিসিলা কর্নার বলছেন, ‘‘বারবার শ্যাম্পু করলে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায়, চুলের গোড়া আলগা হয়। শীতের সময়ে আরও বেশি করে স্ক্যাল্পের যত্ন নিতে হবে। ঘনঘন শ্যাম্পু স্ক্যাল্প আরও রুক্ষ করে দেবে। শ্যাম্পু হয়ে গেলে এক মগ জলে দু’টেবিল চামচ ভিনিগার নিয়ে মাথায় ঢালুন। চুল উজ্জ্বল হবে।’’
তবে অনেকেই সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করতে বলেন। হেয়ার অ্যান্ড বিউটি এক্সপার্ট সাবিনা ইয়াহ বলছেন, ‘‘স্ক্যাল্প কেয়ারের গোড়ার কথাই হল মাথা পরিষ্কার রাখা। তৈলাক্ত মাথা হলে তিন দিন শ্যাম্পু করতেই হবে। শুষ্ক ত্বক হলে দু’দিন ঠিক আছে। এক্সফোলিয়েশনের জন্য স্যালিসিলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।’’ নিজের লাইফস্টাইল এবং প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সপ্তাহে ক’দিন শ্যাম্পু করবেন। কড়া রোদ আর দূষণের মধ্য দিয়ে যদি আপনি রোজ যাতায়াত করেন, তা হলে সপ্তাহে তিন বার শ্যাম্পু করতে পারেন। শ্যাম্পু করার সময়ে আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে সার্কুলার মুভমেন্টে মাথায় মাসাজ করবেন। জোরে জোরে ঘষলে চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায়।
স্ক্রাবিং ও ময়শ্চারাইজ়িং
স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশনের জন্য স্ক্রাবিং কার্যকর। কিন্তু মাথায় নিয়মিত স্ক্রাব করলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যাবে। খুব আলতো হাতে মাথায় স্ক্রাব করতে হবে। সাবিনার কথায়, ‘‘স্ক্রাবিং স্ক্যাল্পের কোষগুলোকে তরতাজা করে।’’ চড়া রোদ আমাদের ত্বকের মতো স্ক্যাল্পেরও ক্ষতি করে। তাই রোদে বেশিক্ষণ থাকতে হলে হ্যাট বা স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন। সাবিনা যেমন, সান প্রোটেকশন সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন।
গোড়ার যত্নআত্তি
মাথায় তেল দেওয়া নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতের তারতম্য রয়েছে। প্রিসিলা কর্নার বলছেন, ‘‘দশ দিনে একবার তেল দিতে পারেন মাথায়। তেলের মধ্যে মেথি ভিজিয়ে রাখতে পারেন। সেই তেল মাথায় মাসাজ করুন। রোজ়মেরি এসেনশিয়াল অয়েল চুলের জন্য উপকারী। এই তেলের মধ্যে মেথি গুঁড়ো করে ভিজিয়ে রাখতে পারেন।’’ যাঁদের স্ক্যাল্প এমনিতেই বেশি তৈলাক্ত, তাঁরা বুঝেশুনে অয়েল মাসাজ করবেন। তেল লাগানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শ্যাম্পু করে ফেলা উচিত। আবার সাবিনা ইয়াহর মতে, ‘‘তেল লাগানো খারাপ নয়, কিন্তু এতে চুলের গ্রোথ হয়, এমনটাও নয়। ভারী তেল লাগালে স্ক্যাল্প তার স্বাভাবিক তেল তৈরির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে চুল তার প্রয়োজনীয় খাদ্য পায় না।’’
অনেক এলাকার জলে আয়রন বা অ্যালকালাইনের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো স্ক্যাল্প ও চুলের ক্ষতি করে। তার জন্য চাই বাড়তি যত্ন। সালঁয় গিয়ে ট্রিটমেন্ট করানোর উপায় তো আছেই, কিছু ঘরোয়া টোটকাও ব্যবহার করতে পারেন। প্রিসিলা কর্নার পরামর্শ দিচ্ছেন, ডিম আর টক দই মিশিয়ে মাথায় লাগানোর। চুলের গোড়া মজবুত করতে ও শাইন আনতে এটি খুবই কার্যকর।
আরও একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। আপনি কোন ধরনের চিরুনি ব্যবহার করছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। হেয়ার ব্রাশ মাথায় রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখে। একটু বড় দাঁড়ার চিরুনি ব্যবহার করবেন চুলের জট ছাড়ানোর জন্য। সরু দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে তা মাসাজের কাজ করবে। রোলার বা ব্রিসলজাতীয় ব্রাশ রোজকার পরিচর্যায় দরকার পড়ে না। এতে চুল বেশি আটকে যায় এবং গোড়া থেকে ছিঁড়ে আসে।
দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
মডেল: দর্শনা বণিক
ছবি: দেবর্ষি সরকার
চুলের স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই, কিন্তু ভুলে যাই গোড়ার কথা অর্থাৎ স্ক্যাল্পের যত্ন। বিষয়টা অনেকটা চাষের জমির মতো। মাটিই যদি ভাল না হয়, তা হলে ফসল ভাল হবে কী করে? ঝলমলে চুল পেতে গেলে যত্ন নিতে হবে গোড়ার।
ত্বকের যত্নে যেমন স্ক্রাবিং, ক্লেনজ়িং, ময়শ্চারাইজ়িংকে গুরুত্ব দিই, স্ক্যাল্পের ক্ষেত্রেও তেমনই। তবে পরিচর্যার এই ধাপগুলো কতটা সময়ের ব্যবধানে করবেন, সেটা আগে জেনে নিতে হবে। স্ক্যাল্পে সমস্যা থাকলে কিন্তু চুল ভাল হবে না। তাই আগে জেনে নিন মাথার ত্বকে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না।
সমস্যা ও তার সমাধান
অনেকের স্ক্যাল্পে চুলকানি হয়, লালচে ভাব থাকে, ফুসকুড়ি হয়। খুশকির সমস্যায় তো অধিকাংশই জেরবার। এই সমস্যাগুলোর সমাধান না করলে চুল পড়া বন্ধ হবে না এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাওয়াও সম্ভব নয়। এ ধরনের সমস্যা হয় ইনফ্ল্যামেশন থেকে। অনেক সময়েই ভুল শ্যাম্পু ব্যবহার করার ফলে ইচিং ও লালচে ভাব আসে। ভাল সালঁ কিংবা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন। সালফেট, অ্যালকোহল আছে, এমন প্রডাক্ট স্ক্যাল্পে ব্যবহার করবেন না।
শ্যাম্পুর প্রয়োজনীয়তা
স্ক্যাল্পের যত্ন নিতে শ্যাম্পুর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাথায় জমে থাকা ময়লা, ঘাম, ব্যাক্টিরিয়া দূর করে শ্যাম্পু। আপনার মাথার ত্বক অনুযায়ী শ্যাম্পু বাছবেন। তৈলাক্ত ও রুক্ষ ত্বকের শ্যাম্পু আলাদা। খুশকি থাকলে বিশেষ ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করলে ফল পাবেন। অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে শ্যাম্পু বাছাই করুন। এখন প্রশ্ন সপ্তাহে কতবার শ্যাম্পু করবেন? অনেকের মতে, দু’বারের বেশি শ্যাম্পু করা ভাল নয়। বিউটি এক্সপার্ট প্রিসিলা কর্নার বলছেন, ‘‘বারবার শ্যাম্পু করলে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায়, চুলের গোড়া আলগা হয়। শীতের সময়ে আরও বেশি করে স্ক্যাল্পের যত্ন নিতে হবে। ঘনঘন শ্যাম্পু স্ক্যাল্প আরও রুক্ষ করে দেবে। শ্যাম্পু হয়ে গেলে এক মগ জলে দু’টেবিল চামচ ভিনিগার নিয়ে মাথায় ঢালুন। চুল উজ্জ্বল হবে।’’
তবে অনেকেই সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করতে বলেন। হেয়ার অ্যান্ড বিউটি এক্সপার্ট সাবিনা ইয়াহ বলছেন, ‘‘স্ক্যাল্প কেয়ারের গোড়ার কথাই হল মাথা পরিষ্কার রাখা। তৈলাক্ত মাথা হলে তিন দিন শ্যাম্পু করতেই হবে। শুষ্ক ত্বক হলে দু’দিন ঠিক আছে। এক্সফোলিয়েশনের জন্য স্যালিসিলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।’’ নিজের লাইফস্টাইল এবং প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সপ্তাহে ক’দিন শ্যাম্পু করবেন। কড়া রোদ আর দূষণের মধ্য দিয়ে যদি আপনি রোজ যাতায়াত করেন, তা হলে সপ্তাহে তিন বার শ্যাম্পু করতে পারেন। শ্যাম্পু করার সময়ে আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে সার্কুলার মুভমেন্টে মাথায় মাসাজ করবেন। জোরে জোরে ঘষলে চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায়।
স্ক্রাবিং ও ময়শ্চারাইজ়িং
স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশনের জন্য স্ক্রাবিং কার্যকর। কিন্তু মাথায় নিয়মিত স্ক্রাব করলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যাবে। খুব আলতো হাতে মাথায় স্ক্রাব করতে হবে। সাবিনার কথায়, ‘‘স্ক্রাবিং স্ক্যাল্পের কোষগুলোকে তরতাজা করে।’’ চড়া রোদ আমাদের ত্বকের মতো স্ক্যাল্পেরও ক্ষতি করে। তাই রোদে বেশিক্ষণ থাকতে হলে হ্যাট বা স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন। সাবিনা যেমন, সান প্রোটেকশন সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন।
গোড়ার যত্নআত্তি
মাথায় তেল দেওয়া নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতের তারতম্য রয়েছে। প্রিসিলা কর্নার বলছেন, ‘‘দশ দিনে একবার তেল দিতে পারেন মাথায়। তেলের মধ্যে মেথি ভিজিয়ে রাখতে পারেন। সেই তেল মাথায় মাসাজ করুন। রোজ়মেরি এসেনশিয়াল অয়েল চুলের জন্য উপকারী। এই তেলের মধ্যে মেথি গুঁড়ো করে ভিজিয়ে রাখতে পারেন।’’ যাঁদের স্ক্যাল্প এমনিতেই বেশি তৈলাক্ত, তাঁরা বুঝেশুনে অয়েল মাসাজ করবেন। তেল লাগানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শ্যাম্পু করে ফেলা উচিত। আবার সাবিনা ইয়াহর মতে, ‘‘তেল লাগানো খারাপ নয়, কিন্তু এতে চুলের গ্রোথ হয়, এমনটাও নয়। ভারী তেল লাগালে স্ক্যাল্প তার স্বাভাবিক তেল তৈরির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে চুল তার প্রয়োজনীয় খাদ্য পায় না।’’
অনেক এলাকার জলে আয়রন বা অ্যালকালাইনের পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো স্ক্যাল্প ও চুলের ক্ষতি করে। তার জন্য চাই বাড়তি যত্ন। সালঁয় গিয়ে ট্রিটমেন্ট করানোর উপায় তো আছেই, কিছু ঘরোয়া টোটকাও ব্যবহার করতে পারেন। প্রিসিলা কর্নার পরামর্শ দিচ্ছেন, ডিম আর টক দই মিশিয়ে মাথায় লাগানোর। চুলের গোড়া মজবুত করতে ও শাইন আনতে এটি খুবই কার্যকর।
আরও একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। আপনি কোন ধরনের চিরুনি ব্যবহার করছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। হেয়ার ব্রাশ মাথায় রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখে। একটু বড় দাঁড়ার চিরুনি ব্যবহার করবেন চুলের জট ছাড়ানোর জন্য। সরু দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে তা মাসাজের কাজ করবে। রোলার বা ব্রিসলজাতীয় ব্রাশ রোজকার পরিচর্যায় দরকার পড়ে না। এতে চুল বেশি আটকে যায় এবং গোড়া থেকে ছিঁড়ে আসে।
মডেল: দর্শনা বণিক
ছবি: দেবর্ষি সরকার