প্রচণ্ড গরম। আর গরমেই ভোটের বাদ্যি বাজে প্রতি বার। চড়া রোদে সকাল থেকে প্রচার চলছে পুরোদমে। ঘেমেনেয়ে ক্লান্ত প্রার্থীরা। সারাদিন ঘোরাঘুরির পরে মাথা কাজ করছে না যেন। ঠিক ভাবে খাওয়া-দাওয়া না করলে শরীর সাথ দেবে না বেশি দিন।
শুধু জলপান
প্রচুর জল খেতে হবে প্রার্থীদের। একে গরমে প্রচুর ঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে, তার উপরে ভোটের উত্তেজনায় অ্যাসিডিটি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। এই অবস্থায় শরীরে জলের ভারসাম্য নষ্ট হলে সুস্থ থাকা কঠিন। সঙ্গে জলের বোতল নিয়ে বেরোতে হবে। বাইরে থেকে হুটহাট জল না খাওয়াই ভাল। বিশেষ করে লেবু-জল বা আখের রস কিনে একেবারে নয়। একবার ডায়েরিয়া হয়ে গেলে এই গরমে মুশকিলে পড়বেন। শরীরে এই সময় প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে। একান্তই বাইরে বেরিয়ে খেতে হলে সবচেয়ে নিরাপদ ডাবের জল। সঙ্গে সঙ্গে কেটে দেয় ডাব। নানা ধরনের লবণ, খনিজ পদার্থ থাকে ডাবের জলে। প্রয়োজনে টেট্রা প্যাকেটে যে সব ফলের রস পাওয়া যায়, সেটাও সঙ্গে রাখতে পারেন। কারণ অল্প-সল্প কেমিক্যাল মেশানো থাকলেও এতে ইনফেকশনের ভয় নেই। তবে বাড়িতে নুন-চিনি-লেবু দিয়ে সরবতের তুলনা কোনও কিছুর সঙ্গেই হয় না। বাড়ি ফিরে তাই এক গ্লাস লেবুর সরবত খেয়ে নিন। ক্লান্তি অনেকটা কেটে যাবে।
রাতে ভাত-ঘুম
সারাদিন খাটা-খাটনি। দুপুরবেলা হয়তো দলীয় কার্যালয়ে বা কারও বাড়িতেই খেয়ে নিতে হল। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়া। সেক্ষেত্রে দুপুরের খাবার নিয়ে বেশি কিছু বলছি না। যেমন চলছে, চলুক। কিন্তু রাতের বেলা বাড়ি (ভোটের জন্য অস্থায়ী আস্তানাও হয়ে পারে) ফিরবেন ঠিক। এবার শরীরটাকে একটু ছেড়ে দিন। মানে রিল্যাক্স করুন আর কি। বাঙালির চিরন্তন খাবার ভাত-মাছের ঝোল, সঙ্গে এক বাটি ডাল, তরকারি দিয়ে বেশ তৃপ্তি করে রাতের খাওয়া সারুন। তারপর একটু সময় ছেড়ে (টিভি দেখুন, বই পড়ুন) ভাত-ঘুম। এটা জরুরি। কারণ কার্বোহাইড্রেট কমে গেলে মস্তিস্কের চিন্তা-ভাবনা ভোঁতা হয়ে যাবে। সারাদিনে খাটনিতে যে এনার্জি লস হচ্ছে, বা মানসিক চাপের যে ধকল চলছে, তার মেরামত করতে একটা ভাত-ঘুমের দরকার।
প্রাতরাশে কী
প্রত্যেকের আলাদা খাদ্যাভ্যাস। এক-এক জন এক-এক খাবারে অভ্যস্ত। কেউ হয়তো সকালে পাউরুটি-ডিম সিদ্ধ খাচ্ছেন, কেউ মুড়ি-তরকারি। আপনি যে ধরনের খাবারে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, সেটাই খান। তবে ডিম সিদ্ধ খেতে পারলে ভাল। শরীরে শক্তি আসে। দুধ তেমন ভাল নয়। কারণ দুধ হজম করা একটু কঠিন। অনেকে সকালে সিদ্ধ ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়ে। কেউ আবার পান্তা ভাত। দু’টোই আমার মতে খুব ভাল। বিশেষ করে পান্তা মানে ‘ফারমেন্টেড রাইস’ হজমের জন্য ভাল। দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে। চার-পাঁচ ঘণ্টা চালিয়ে নেওয়া যায়। মোট কথা যে কোনও উপায়ে এই সময় কার্বোহাইড্রেটটা বেশি খেতে হবে।
মন যা চায়
মনের প্রফুল্লতা শরীরকে শক্তি জোগায়। ‘ফিট’ থাকতে খুব বেশি ডায়েট কন্ট্রোল করবেন না। গরমে তেলেভাজা এমনিতে ঠিক নয়। এমন অনেকে আছেন, যাঁরা তেলেভাজা-মুড়ি খেতে ভালবাসেন। সেক্ষেত্রে বিকেলে তা খেতেই পারেন। মন ভাল না রাখলে শরীর ভাল থাকবে না।
পকেটে লজেন্স
প্রচারে বেরিয়ে অনেক সময়ই ঠিক করে খাওয়া-দাওয়া হয় না। সেই হয়তো সকালে একটু খেয়ে বেরিয়েছেন। তারপর দু’টো-তিনটে। কোথাও চা খেয়ে নিচ্ছেন। এই ভাবে খিদে মেরে শরীরেরই ক্ষতি। খালি পেটে বারবার চা খাওয়া ভাল নয়। বরং লজেন্স রাখুন (ক্যাডবেরি নয়)। গলা ভেজাবে, ‘ইনস্ট্যান্ট এনার্জি লেভেল’ ঠিক করবে। সুগারের সমস্যা থাকলে অবশ্য লজেন্স চলবে না।
তেল-মশলা কম
এই গরমে খুব বেশি তেল-মশলা দেওয়া খাবার কিন্তু একেবারেই নয়। শরীর গরম হয়ে যাবে। হজম ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অ্যাসিডিটি হতে পারে। এই একই কারণে কম মশলা দিয়ে মুরগির ঝোল তবু চলতে পারে। কিন্তু মাটন বা বিফ, মানে রেড মিট একেবারে খাবেন না। শরীর গরম হয়ে যাবে।
প্রচুর ফল-সব্জি
‘সলিড’ খাবারও এমন খেতে হবে যাতে শরীরে জলের ভারসাম্যটা বজায় থাকে। এর জন্য ফল বা সব্জি বেশি খেতে হবে। ফলের মধ্যে শসা, তরমুজ শরীরকে খুব ঠান্ডা রাখে। আপেল, পাকা পেঁপে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু বাইরে কাটা ফল একেবারে খাবেন না। বাড়িতে সকালে ব্রেকফাস্টের সময় একটু ফল থাকুক প্লেটে। বিকেলবেলা শসা-মুড়ি খুব ভাল। দুপুর ও রাতের খাবারে সব্জির তরকারি অন্তত একটা যেন থাকে।
আরও পড়ুন: ঝরঝরে থাকুন এই ৭টি উপায়ে