ইচ্ছেমতো ডায়েটই সমস্যা বাড়ায় ডায়াবিটিসে

আধুনিক গবেষণা রিপোর্ট বলছে, উপরে লেখা সব ধরনের অভ্যাসই আসলে মারাত্মক ক্ষতিকারক। নিজের মর্জি মতো খাদ্যাভ্যাসেই বাড়ছে ঝুঁকি। যার জেরে ডায়াবিটিসের প্রকোপ তো ছড়াচ্ছেই, সঙ্গে বাড়ছে আরও নানা রোগের আশঙ্কাও।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২০
Share:

ভাত-মাছের ভরপুর ভোজের শুরুতে খান দুয়েক করলা সেদ্ধ খান অজিতবাবু। বছর দশেক ধরে ডায়াবিটিসে ভুগছেন, তাই এমন নিয়ম। কিন্তু অসুখ তো কমেনি, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে ওষুধের মাত্রা।

Advertisement

বছর চল্লিশের রাত্রিদেবীর অভ্যাসও খানিক তেমনই। সকালে উঠে মেথি ভেজানো জল। প্রাতরাশের আগে-পরে দু’দফা ওষুধ। সঙ্গে সমান তালে ভাত-রুটি কিংবা পরোটা। মাঝেমধ্যে বিয়েবাড়ি গেলে দিব্যি চলে দু’-একটা রসগোল্লাও।

অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সজলবাবু আবার ভাত-রুটি কিচ্ছুটি খান না। ব্লাড সুগারটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে যে। তবে রোজ রাতে দু’পাত্তর না হলে ঘুম আসে না। চল্লিশ বছরের অভ্যাস ছাড়েন কী করে? তাই বাকি সব খাবারে আরও কড়াকড়ি। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারেই বন্ধ রাখেন তিনি।

Advertisement

আধুনিক গবেষণা রিপোর্ট বলছে, উপরে লেখা সব ধরনের অভ্যাসই আসলে মারাত্মক ক্ষতিকারক। নিজের মর্জি মতো খাদ্যাভ্যাসেই বাড়ছে ঝুঁকি। যার জেরে ডায়াবিটিসের প্রকোপ তো ছড়াচ্ছেই, সঙ্গে বাড়ছে আরও নানা রোগের আশঙ্কাও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এ দেশে ডায়াবিটিসে আক্রান্তের সংখ্যা আট কোটি ৭০ লক্ষ ছাড়াবে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩-৪ জন করে পৌঁছে যাবেন বিপদসীমার কাছে। যা থেকে রেহাই পাবে না এ শহরও। ফলে সমস্যা আরও বাড়ার আগেই সাবধান হতে বলছেন চিকিৎসকেরা। বিশেষ়জ্ঞেরা বলছেন, জীবনযাপন শুধরে নেওয়াই এই রোগে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায় যেমন মনে করান, ওষুধের থেকে কোনও অংশে কম নয় জীবনযাপন। তিনি বলেন, ‘‘ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে ওষুধের থেকেও বেশি জরুরি খাওয়াদাওয়ায় নজর দেওয়া।’’ তবে তার মানেই ইচ্ছেমতো খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা নয়। নিজের রোজের খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস শুধরোতে হবে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে। সতীনাথবাবুর বক্তব্য, কার কতটা ক্যালোরি প্রয়োজন, তা বিভিন্ন পরীক্ষা করে তবেই বলা যায়। কোনও চিকিৎসকও খালি চোখে রোগীকে দেখে বলে দিতে পারেন না।

ডায়াবেটিক আহার মানে মোটেও শুধু মিষ্টি, আলু, ভাত কমিয়ে দেওয়া নয়। ডায়েটিশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী যেমন জানান, ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে খাদ্যে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণের দিকে নজর দেওয়া জরুরি, কিন্তু কার্বোহাইড্রেট একেবারে যেন বাদ না পড়ে যায়, সে খেয়ালও রাখতে হবে। তবে তার পরিমাণ কখনওই নিজে ঠিক করে নেওয়া যায় না। এক-এক জন রোগীর এক-এক রকম প্রয়োজনীয়তা। শুধু রক্তে সুগারের পরিমাণ নয়, রোগীর বয়স এবং ওজনের উপরেও অনেকটা নির্ভর করে। ফলে কোন রোগীর খাবারে দৈনন্দিন কতটা ক্যালোরি রাখা উচিত, তা ঠিক করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই। সেই ক্যালোরির হিসেব মতো ঠিক করা হয়, কখন কী কী খাবেন এক জন ডায়াবেটিক মানুষ। রেশমী বলেন, ‘‘সাধারণ হিসেব অনুযায়ী শাক-আনাজ, ফল, খই, চিঁড়ে, মুড়ি—এই সব ধরনের খাবার বেশি খাওয়া ভাল ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তবে এক-এক জন রোগীর ক্ষেত্রে এই খাবারের চার্ট এক-এক রকম হয়।’’

সতীনাথবাবু জানান, ডায়াবেটিক রোগীদের ওজনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। না হলে ওজন বেড়ে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সেই কথা অবশ্য ইতিমধ্যে জানেন বহু রোগীই। সেই মতো ওজন কমানোর চেষ্টাও চালান। কিন্তু সেই চেষ্টা এক জন রোগীকে করতে হয়, চিকিৎসাশাস্ত্রের নিয়ম মেনেই। যে কথা মাথায় রাখেন না অনেকেই। সতীনাথবাবু বলেন, ‘‘ওজন বাড়া মানেই শরীরে ইনস্যুলিন কম কাজ করতে পারা। তাতেই ডায়াবিটিসের সমস্যা আরও কঠিন হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওজন কমানোর চেষ্টা করতে হয় ডায়াবেটিকদের।’’ কারণ, এমন অবস্থায় কার শরীর কতটা ধকল নিতে পারবে, তা নিজে বুঝে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।

ডায়াবেটিকদের ওজন বেশি থাকলে হৃদ্‌রোগের চিন্তা যে থাকে, সে কথাও জানেন অনেকে। হার্টের চিকিৎসক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করান, ওজন একটু বেশির দিকে থাকলেই খাদ্যে ক্যালোরির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া জরুরি। কিন্তু তাঁর পরামর্শ, ‘‘ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবার আগে কড়া ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে। ইচ্ছেমতো দু’-একটা খাবার বাদ দিয়ে, নিজের ডায়েট নিজে বানিয়ে নিলে ক্ষতি আরও বাড়বে।’’ তাতে ডায়াবিটিসের সমস্যা তো বাড়েই, সঙ্গে অন্য বহু রোগ বাসা বাঁধে শরীরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement