জয়ের ‘জীবন’ জালিয়াতি। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিট্রিশ ‘লাইফ কোচ’ জয় শেট্টির ইনস্টাগ্রাম বলছে, তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫৩ লক্ষ। ৩৬ বছর বয়সি জয়ের রয়েছে নিজস্ব পডকাস্ট চ্যানেলও। বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যক্তিদের জীবনের নানা ঘটনা থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রায়শই চ্যানেলের অতিথি আসন আলো করে বসতেন আমেরিকার প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, হলিউড অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ানের মতো ব্যক্তিত্বরা। শুধু তাই নয়, জীবনে চলার পথ মসৃণ করার পাঠ নিতে হাজার হাজার ডলার খরচ করে তাঁর স্কুলেও ভর্তি হতেন ছাত্র-ছাত্রীরা। সেই জয়ের জীবনদর্শন নিয়েই শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সময়ের বহুল বিক্রিত ‘থিঙ্ক লাইক আ মঙ্ক: ট্রেন ইয়োর মাইন্ড ফর পিস অ্যান্ড পারপাস এভরি ডে’ বইটির লেখক জয়ের এই জীবনকাহিনির পুরোটাই সাজানো।
ঠিক কী করতেন জয়? তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে?
জীবন আসলে নদীর মতো। নিজের গতিতে বয়ে চলে। তবে তফাত একটু রয়েছে। চলার পথে কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকলে, নদী কিন্তু নিজেই তার গতিপথ ঠিক করে নেয়। জীবনের ক্ষেত্রে বিষয়টা তত সহজ নয়। জীবনে চলার পথে বাধা এলে কখনও কখনও পথপ্রদর্শক বা ‘লাইফ কোচ’-এর প্রয়োজন হয়। তাঁরা তাঁদের নিজের জীবনের অভি়জ্ঞতা, ব্যর্থতার উদাহরণ দিয়েই অন্যদের জীবনে আলোকস্তম্ভ হয়ে দাঁড়ান। ভারতীয় বংশোদ্ভূত জয় শেট্টিও তেমন ভাবেই রক্তমাংসের এক ‘সুপারহিরো’ হয়ে উঠেছিলেন জীবনের পথভ্রষ্টদের কাছে। সমাজমাধ্যম জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর জীবনদর্শন। স্কুলে পড়াকালীনই বিভিন্ন সময়ে তিনি নাকি সাধুসঙ্গ শুরু করেন। তাঁদের শিক্ষা, জীবনদর্শন দেখে অনুপ্রাণিত হন জয়। কিন্তু ভারতে কোনও একটি মন্দিরে জীবনের তিনটি বছর অতিবাহিত করার যে কথা তিনি লিখেছেন, তা-ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে একটি সংবাদমাধ্যম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্নাতক হওয়ার পর সাধুর বেশে জয় আসলে রাজার মতো জীবন যাপন করছিলেন। তিন বছর পর জয় দাবি করেন, তিনি শুধু সাধুর মতো জীবনযাপন করতে আসেননি। বরং তাঁর কথার বলার যে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে, তা দিয়ে তিনি গোটা পৃথিবীর মানুষের মন জয় করতে এসেছেন। ঠিক এই সময় থেকেই শুরু হয় জয়ের শূন্য থেকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছনোর যাত্রা। তা ছাড়া জয়ের আত্মজীবনীতে এমন অনেক কিছুই লেখা রয়েছে, যা নাকি পুরোপুরি মিথ্যে। শুধু তা-ই নয়, বিহেভিয়ারাল সায়েন্স নিয়ে তিনি যে ‘বিজ়নেস স্কুল’ থেকে পড়াশোনা করেছেন, সেখানে এমন কোনও বিষয়ে নিয়ে পড়ানো হয় না বলে জানা গিয়েছে। জয়ের স্বঘোষিত গুরু হওয়ার প্রচেষ্টা শুধুই অর্থ এবং খ্যাতির জন্য। তা ছাড়াও জয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে কুম্ভিলকবৃত্তির অভিযোগ। ২০১৯ সালে নেটপ্রভাবী নিকোল আরবার একটি ভিডিয়োয় জয়ের বিরুদ্ধে কনটেন্ট 'চুরি'র অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, যাঁদের সমাজমাধ্যমে এখনও তেমন পরিচিতি হয়নি, যাঁদের অনুগামীর সংখ্যা অতি নগণ্য, মূলত তাঁদের কনটেন্ট চুরি করে নিজের নামে চালাতেন জয়। অভিযোগ, এই বিষয়গুলি প্রকাশ্যে আসার পর নিজের অন্তত ১০০টি পোস্ট মুছেও ফেলেছিলেন জয়। যে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ঘিরে এত বিতর্ক, তাদের কাছে এ কথা দাবি করেছিলেন নিকোল।