অয়ন মণ্ডলের খুনের ঘটনায় উঠে এসেছে ত্রিকোণ সম্পর্কের প্রসঙ্গ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মা ও মেয়ে দু’জনে কী ভাবে একই ব্যক্তির প্রেমে পড়লেন? এমনও কি হয়!
হরিদেবপুরে এক যুবকের খুনের ঘটনায় উঠে এসেছে ত্রিকোণ সম্পর্কের প্রসঙ্গ। পুলিশের সন্দেহ, মৃত অয়ন মণ্ডলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তাঁর বান্ধবীর মা-ও। তার পরেই শুরু হয় টানাপড়েন। আর সেই টানাপড়েনের জেরেই খুন করা হয় অয়নকে। অয়নের খুনের তদন্ত এখনও চলছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন অনেকেই। এ খুনের কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। একই সঙ্গে মা-মেয়ে কী ভাবে প্রেমে পড়লেন অয়নের? তা ভাবাচ্ছে বহু জনকেই।
কিন্তু একই ব্যক্তির সঙ্গে মা ও মেয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ততটাও বিরল নয়। এমন কিছু জনজাতি রয়েছে, যেখানে এক কালে মায়ের স্বামীর সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চল ছিল। মাণ্ডি জনজাতির মধ্যে এই প্রথা এককালে প্রচলিত ছিল। বাবার মৃত্যুর পর মা যদি আবার বিয়ে করতে চান, তবে তাঁর মেয়েরও বিয়ে হতে হবে একই পুরুষের সঙ্গে। সকলের পছন্দ হোক, না হোক মাতৃতান্ত্রিক সেই সমাজে এটাই ছিল প্রথা। যেমন বাংলাদেশের মা-মেয়ে ওরোলা ও মিত্তামণি দু’জনের বিয়ে হয় নোটেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। সে জনজাতির অনেকেই ধীরে ধীরে খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছেন। তাই মাণ্ডিদের পুরনো বহু প্রথা হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এক কালে এমনটাই ছিল নিয়ম।
২০০৫ সালে এমন ঘটেছে লন্ডনেও। সেখানকার বাসিন্দা লরেন হল বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের মাকেও। লরেনের বয়স তখন ১৯। তাঁর বরের সঙ্গে মায়ের এত বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে দেখে খুশিই হয়েছিলেন লরেন। কিন্তু সে বন্ধুত্ব কোন দিকে গড়াচ্ছে, তা টের পাননি। মধুচন্দ্রিমা সেরে বাড়ি ফেরার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লরেনকে ছেড়ে চলে যান তাঁর স্বামী। পরে তরুণী জানতে পারেন যে তাঁর মা জুলির সঙ্গে সংসার পেতেছেন স্বামী পল।
বিহারের বাসিন্দা, ৪২ বছর বয়সি আশা দেবীও ২০১৬ সালে বিয়ে করেন ২২ বছরের যুবক সুরজকে। তবে এই সুরজ অন্য কেউ নন, আশার ১৯ বছর বয়সি মেয়ে ললিতার স্বামী। সুরজ এক সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময়ে তাঁর দেখাশোনা করতে মেয়ের বাড়িতে কিছু দিন ছিলেন আশা। তখনই শাশুড়ি আর জামাইয়ের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। পরবর্তীকালে বিয়ে করেন দু’জনে। আশার বিয়ের আগেই সুরজের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ললিতা। তাই আশা চান, তাঁরা সকলে এক পরিবার হিসাবেই থাকবেন। একসঙ্গে থাকতে বলেন আশার আগের পক্ষের স্বামী, ললিতার বাবাকেও।
মা মেয়ের সম্পর্ক কেমন হয় এ ক্ষেত্রে?
অনেকেই এমন সব সম্পর্কের কথা শুনে অবাক হবেন। কিন্তু সম্পর্কের সমীকরণ এক এক ক্ষেত্রে এক এক রকমই হয়ে থাকে। টানাপড়েন কি তৈরি হয় না? অবশ্যই হয়। যেমন ওরোলা ও মিত্তামণির মধ্যে হয়েছে। মিত্তামণির চেয়ে বুঝি ওরোলাকেই বেশি ভালবাসেন নোটেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন মা। মেয়েও সংসার করতে শুরু করার পর থেকে বোঝেন, মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। কথায় কথায় তাঁর পরামর্শ চাইতে পারেন না তিনি। আবার এক ছাদের তলায় বসবাস। তাই মিলেমিশে থাকেনও।
লরেন পরবর্তীকালে অন্য বিয়ে করেছেন। চার সন্তানের মা হয়েছেন। তবে নিজের সবচেয়ে কাছের দু’জন যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন, এমন ভাবতে পারেননি। তাই কষ্ট পেয়েছেন। সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
ললিতার সঙ্গে কেমন আশার সম্পর্ক? তা অবশ্য জানার সুযোগ পায়নি সমাজ। স্থানীয় পঞ্চায়েত আশা আর সুরজের বিয়ে মঞ্জুর করে দেয়। আর আশাও ঠিক করে নেন যে একসঙ্গে সুখী পরিবার হিসাবেই থাকবেন তাঁরা সকলে।