নতুন প্রজন্মের জন্য কী ফিটনেস টিপ্স ও দিলেন বিদ্যুৎ? ছবি: সংগৃহীত।
তিনি বলিউডের অ্যাকশন হিরো। ছবিতে চোখের নিমেষে জটিল অ্যাকশন স্টান্ট করে ফেলেন তিনি। কিন্তু তারই পাশাপাশি ফিটনেস আইকন হিসেবে বিদ্যুৎ জামওয়ালের স্বতন্ত্র পরিচিতি রয়েছে। মাত্র ৩ বছর বয়স থেকে মার্শাল আর্টসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দক্ষিণ ভারতীয় মার্শাল আর্টস ‘কালারিপায়াত্তু’ এক্সপার্ট বিদ্যুৎ। এ হেন ব্যক্তিত্বকে হাতের মুঠোয় পেয়ে তাঁর ফিটনেস রহস্য জানতেই হত। কিন্তু সেই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের জন্য ফিটনেস টিপ্সও দিলেন বিদ্যুৎ।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ শহরে এসেছিলেন তাঁর নতুন ছবির প্রচার সারতে। এক ফাঁকে নিজের ফিটনেস ফান্ডা ফাঁস করলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সামনে। তাঁর কাছে ফিটনেস শব্দটির সংজ্ঞা কী? চটজলদি বিদ্যুৎ বললেন, ‘‘খুশি। আমি যখন কোনও মহিলাকে প্রথম দেখি তখন তিনি রোগা না কি মোটা, তা দিয়ে তাঁকে বিচার করি না। তিনি কি খুশি? তিনি যদি সুখী হন, তার মানে তিনি মানসিক এবং শরীরের দিক থেকে ফিট।’’ বিদ্যুৎ নিজে এক জন ভেগান। দীর্ঘ দিন তিনি নিরামিশাষী। তাবে তাঁরও ডায়েটে ‘চিট ডে’ থাকে। বলছিলেন, ‘‘কারও যদি মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হয় খেতেই পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন তা মাত্রাতিরিক্তি না হয়।’’
আনন্দবাজার অনলাইনে নিজের ফিটনেস ফান্ডা ফাঁস করলেন বিদ্যুৎ। ছবি: সংগৃহীত।
আজকের ব্যস্ত জীবনে ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারে প্রলোভন এড়ানো কঠিন। সেখানে স্বাস্থ্য সচেতন হতে চাইলে কী ভাবে সেই প্রলোভনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? এই প্রসঙ্গে বিদ্যুতের পরামর্শ, ‘‘প্রথমে একটু সমস্যা হবে। তবে খাতায় লিখে রাখুন। কখন খিদে পাচ্ছে, বা কতটা খাবার খাচ্ছেন। তাতে একটা ধারণা তৈরি হবে। তার পর সময়ের সঙ্গে শরীরও সেই রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নেবে।’’
বিদ্যুতের কাছে মার্শাল আর্টসের আইকন কে? ছবি: সংগৃহীত।
কেরলে মায়ের আশ্রমে অল্প বয়সে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ শুরু হয় বিদ্যুতের। তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা অগণিত। নিজে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগের অংশ হয়ে সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেন। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হ্যাশট্যাগ ‘আই ট্রেন লাইক বিদ্যুৎ জামওয়াল’। কিন্তু তাঁর কাছে মার্শাল আর্টসের আইকন কে? একটু ভেবে বিদ্যুৎ অ্যাকশন তারকা জ্যাকি চ্যাং এবং জেট লি’র কথা উল্লেখ করলেন। হেসে বললেন, ‘‘ব্রুস লির যুগের মানুষ আমি নই। কিন্তু জ্যাকি চ্যাংয়ের মার্শাল আর্ট খুব উপভোগ করি। এমনকি, জেট লি-ও অত্যন্ত স্মার্ট। মুশকিল হল আমি ওঁদের তুলনায় খুব লম্বা। তাই ইচ্ছে হলেও ওদের মতো কিছু কিছু মুভ্স পারফর্ম করতে পারি না।’’
সুস্থ এবং সুঠাম শরীর তৈরি করতে হলে কোনও রকম ‘শর্টকাট’-এ বিশ্বাস করেন না বিদ্যুৎ। তাই বললেন, ‘‘আমি পারলে বছরের প্রতিটা দিন ট্রেনিং করি। কোনও রকম ফাঁকি দিই না।’’ এই প্রসঙ্গেই বিদ্যুৎ ধ্যানের উপর জোর দিতে চাইলেন। জীবনে স্ট্রেস থাকবেই। সেখানে ধ্যান মনকে অনেকটাই শান্ত করতে পারে বলে বিশ্বাস করেন এই অভিনেতা। কখনও খালি গায়ে বরফের মধ্যে ডুবে রয়েছেন। কখনও আবার মার্শাল আর্টসের কসরত করছেন। সমাজমাধ্যমে বিদ্যুতের এই সব ছবি রীতিমতো ভাইরাল। কী ভাবে করেন? হেসে বললেন, ‘‘এ বার কাশ্মীরে গিয়ে ৩ ঘণ্টা বরফের মধ্যে বসে ছিলাম। আসলে সবটাই সাধনা। সময়ের সঙ্গে মনের জোর বাড়াতে হবে। তা হলে সহ্যশক্তিও বাড়বে।’’ যোগশাস্ত্র নিয়েও নিয়মিত চর্চা করেন বিদ্যুৎ। বললেন, ‘‘যোগবিদ্যায় ব্ল্যাকবেল্ট বা ইয়েলো বেল্টের কোনও গুরুত্ব নেই। ভারতীয় যোগবিদ্যায় নিজের ক্ষমতাকে অতিক্রম করার কথা বলা হয়েছে। অভ্যাস এবং একাগ্রতাই শেষ কথা।’’
এখন পাড়ায় পাড়ায় জিমের আধিক্য। সেখানে তরুণরা ভিড়ও জমাচ্ছেন। কিন্তু প্রায়শই আঘাতজনিত সমস্যা, এমনকি মৃত্যুর খবরও কানে আসে। বিপদ ঠেকাতে কিন্তু বিদ্যুৎ ‘গুরুবিদ্যা’য় বিশ্বাসী। বললেন, ‘‘শুধু শরীরচর্চা নয়, জীবনে কোনও কিছু করতে গেলে এক জন গুরুর প্রয়োজন। তিনিই আমাদের পথপ্রদর্শক।’’ নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বিদ্যুৎ বললেন, ‘‘ভাল প্রশিক্ষকের সন্ধান করুন। প্রয়োজনে তাঁর সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি যাচাই করুন। তার পর ট্রেনিং। কারণ, আমি সময় থাকতে বিপদের মোকাবিলা করায় বিশ্বাসী।’’ কিন্তু সমাজে এ রকমও মানুষ রয়েছেন, যাঁদের জিম বা পার্সোনাল ট্রেনারের জন্য খরচ করার সামর্থ্য নেই, তাঁদের পরিত্রাতা হিসাবে বিদ্যুৎ উল্লেখ করলেন ইন্টারনেটের কথায়। অভিনেতার কথায়, ‘‘এখন ইউটিউব দেখে সব কিছু শেখা যায়। বিনামূল্যে অনলাইন ক্লাসও করান অনেকে। তাই ইচ্ছে থাকলেই শেখা যায়।’’ এরই সঙ্গে অভিনেতা জানালেন শরীর ভাল রাখতে নিয়মিত ঘুম আবশ্যিক শর্ত।
ছবি: সংগৃহীত।
এখন তরুণ প্রজন্ম তাঁদের প্রিয় তারকাদের অন্ধ ভাবে অনুকরণ করেন। সে ক্ষেত্রেও হিতে বিপরীতে হতে পারে বলে মনে করেন বিদ্যুৎ। তাঁর আগাম সতর্কবাণী, ‘‘রোগা, না কি পেশিবহুল, কী ধরনের দেহ তৈরি করতে চাইছেন, সেটা আগে নিজেকে বুঝতে হবে। রক্তের গ্রুপ এবং জিনগত কারণে প্রত্যেকের দেহের গঠন আলাদা। কেউ হয়তো আমার মতো খাওয়াদাওয়া করলেও আমার মতো ফিট হতে পারবেন না। এইট প্যাকস্ আছে, অথচ তিনি একদমই স্ট্রং নন, এ রকম মানুষও আমি দেখেছি।’’