Gold Investment Tips

ধনতেরসের আগে কমছে সোনার দাম! বিনিয়োগের এটাই কি সময়? কী ভাবে কিনবেন সোনা?

কারও বিশ্বাস এই সময়ে সোনা কিনলে অর্থলাভ হবে, কেউ আবার বিভিন্ন ধরনের ছাড় পাওয়া যায় বলে দীপাবলির আগে সোনায় বিনিয়োগ করেন। সোনায় বিনিয়োগ করতে হলে গয়না ছাড়া আর কী কী ভাবে করা যায়? কোনটায় লাভ বেশি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৩
Share:

সোনায় বিনিয়োগের আগে জেনে নিন খুঁটিনাটি। ছবি: শাটারস্টক।

গত কয়েক দিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সোনার দাম। অবশেষে বৃহস্পতিবারে খানিকটা কমল সোনার দাম। বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর কলকাতার খুচরো বাজারে ১০ গ্রাম সোনার দামে ৬০০ থেকে ৪৫০ টাকা পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। এ দিন তিলোত্তমায় ২৪ ক্যারেট হলুদ ধাতু বিক্রি হচ্ছে ৭৯,৪৭০ টাকা/১০ গ্রাম দরে। আর ৭২ হাজার ৮৫০ টাকায় নেমেছে ২২ ক্যারেটের দাম। ধনতেরসের সময় বাঙালিদের মধ্যে সোনা কেনার হিড়িক ওঠে। তাই এই মধ্যবিত্তের মুখের হাসি সামান্য হলেও বেড়েছে।

Advertisement

কারও বিশ্বাস, এই সময়ে সোনা কিনলে অর্থলাভ হবে, কেউ আবার বিভিন্ন ধরনের ছাড় পাওয়া যায় বলে দীপাবলির আগে সোনায় বিনিয়োগ করেন। শেয়ার মার্কেট, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদি সমস্ত বাজারে লগ্নি নিয়ে দু’বার ভাবলেও বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, সোনায় বিনিয়োগের করা সব সময়ই বুদ্ধিমানের কাজ। সঞ্চয়ের দুনিয়ায় সোনা সব সময়েই লম্বা রেসের ঘোড়া। হঠাৎ সোনার বাজারে ধস নামার ঘটনা ঘটে না। বরং গত ১০ বছরে সোনার দাম বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। মন্দার বাজারে সোনার কদর থাকে তুঙ্গে।

ধনতেরসের আগে কী কী ভাবে সোনায় বিনিয়োগ করতে পারেন?

Advertisement

গয়না: গয়না তৈরি করা সোনায় বিনিয়োগ করার সবচেয়ে সহজ পথ। তবে এর ভাল-মন্দ দুই দিকই আছে। সোনার গয়নায় বিনিয়োগ করলে সেই সোনা পরতে পারেন। তবে সোনার গয়না কিনতে গেলে প্রায় ১০ শতাংশ মজুরি দিতে হয়। বিক্রির সময়ে সেই মজুরির অর্থ ফেরত পাওয়া যায় না। তার উপর গয়না কিনলে ৩ শতাংশ জিএসটি-ও দিতে হয়। গয়না রাখার জন্য ব্যাঙ্কের লকারের খরচাও রয়েছে। এ ছাড়া গয়না কতটা খাঁটি, সে দিকটাও যাচাই করা জরুরি। শহরের এক সোনার দোকানের কর্মচারী সুমি মণ্ডল বলেন, ‘‘বিনিয়োগের জন্য সোনা কিনতে হলে আমি বলব চেন কিংবা নকশা ছাড়া সলিড চুড়ির মতো গয়না কিনুন। এতে মেকিং চার্জ খুব বেশি লাগবে না। গয়নায় যত নকশা থাকবে, ততই বাড়বে মেকিং চার্জ। সঙ্গে ৩ শতাংশ জিএসটিও লাগবে। এ ছাড়া, সোনা খাঁটি কি না জানতে অবশ্যই হলমার্ক আছে কি না, তা যাচাই করে নেবেন। তা হলেই আর কোনও চিন্তা থাকবে না। বিনিয়োগ করতে হলে ২২ ক্যারেট সোনার গয়না কিনুন, তাতে লাভ বেশি। হালকা ১৮ কিংবা ১৬ ক্যারেটের গয়না বিনিয়োগের কথা ভেবে না কেনাই ভাল।’’

কয়েন কিংবা বার: সোনার গয়নার থেকেও ভাল বিনিয়োগের জন্য বিকল্প হতে পারে সোনার বার কিংবা কয়েন কেনা। এ ক্ষেত্রে মজুরি তেমন লাগে না। তবে ৩ শতাংশ জিএসটি এতেও দিতে হয়। সুমি বলেন, ‘‘নামী যে কোনও সোনার দোকানে ১ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রামের বার কিনতে পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে হলমার্ক চিহ্ন যাচাই করে কিনে নিতে পারেন।’’ তবে এই ক্ষেত্রে সেই বার কিংবা কয়েন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লকারের খরচ বইতে হবে।

সঞ্চয়ের দুনিয়ায় সোনা সব সময়েই লম্বা রেসের ঘোড়া। ছবি: সংগৃহীত।

ডিজিটাল গোল্ড: ৫০০ টাকা থেকেও আপনি এ ধরনের সোনায় বিনিয়োগ করতে পারেন। বিভিন্ন সোনার দোকান এবং অর্থ লগ্নিকারী সংস্থা অনলাইন সাইট থেকে ডিজিটাল গোল্ড আপনি কিনতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে মেকিং চার্জ দিতে হবে না, সোনা খাঁটি কি না তা নিয়েও ভাবতে হবে না, কোথায় জমা করবেন সেই নিয়েও ভাবতে হবে না। প্রতি মাসে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে এই ডিজিটাল গোল্ড আপনি কিনতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রেও জিএসটি দিতে হবে।

গোল্ড ইটিএফ (গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড): ডিজিটাল পদ্ধতিতে সোনায় বিনিয়োগের আরও একটি পদ্ধতি হল গোল্ড ইটিএফ। সাধারণত সোনার গয়না ক্রয়ের সময়ে ক্রেতাকে অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হয়। তবে ইটিএফ-এর ক্ষেত্রে এই খরচ অনেকটাই কম। কোনও বিনিয়োগকারীর কাছে প্রকৃত সোনার দামের কাছাকাছি মূল্যে গোল্ড ইটিএফে বিনিয়োগের সুযোগ থাকে। এখানে সোনার দামের উপর নির্ভর করে ইটিএফ-এর মূল্য। এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর শেয়ার ব্রোকার-সহ একটি ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন পড়ে একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্টেরও। এই প্রকল্পে কোনও বিনিয়োগকারীর কাছে খুব সামান্য পরিমাণ সোনাতেও বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকে। ইটিএফে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা কোনও চার্জের প্রয়োজন হয় না। তবে, ক্রয় বা বিক্রয়ের সময় ব্রোকার খরচ লাগে। এই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লিক্যুইডিটিও অনেক বেশি। অর্থাৎ, ইচ্ছামতো গোল্ড ইটিএফ বিক্রি করা যায়।

গোল্ড বন্ড: ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার গোল্ড বন্ড প্রকল্প চালু করে। এর মাধ্যমে কোনও বিনিয়োগকারী হাতে সোনা না পেলেও সোনায় বিনিয়োগ করতে পারবেন। যদিও যে কোনও সময়ে এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যায় না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে গোল্ড বন্ড সাবস্ক্রিপশনের একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়। একটি অর্থবর্ষে কোনও বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ চার কিলোগ্রাম পর্যন্ত সোনার সাবস্ক্রিপশন করতে পারেন। তবে ট্রাস্টের ক্ষেত্রে এই সাবস্ক্রিপশনের পরিমাণ ২০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত। গোল্ড বন্ডের মেয়াদ হয় আট বছরের। তবে পাঁচ বছর পার হয়ে গেলে বিনিয়োগকারী অর্থ তুলতে পারেন। সেই সময়ের মূল্য অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে অর্থ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি, এই প্রকল্পে পাওয়া যায় ২.৫০ শতাংশ সুদ। বিনিয়োগের দিক থেকে এই পদ্ধতি বেশ সুরক্ষিত। তবে কখন সরকার সাবস্ক্রিপশনের তারিখ ঘোষণা করবে, সে দিকে নজর রাখতে হবে ক্রেতাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement