গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে পছন্দের বিষয়টি হল গরমের ছুটি। গরমের দাপট যত বাড়বে, স্কুলের ছুটিও তত বাড়ার সম্ভাবনা। তা ছাড়া, সারা বছর এমন লম্বা ছুটি তো আর পাওয়া যায় না। ফলে আমবাঙালি মুখিয়ে থাকে এই ছুটির জন্য। আর বাঙালির তো পায়ের তলায় সর্ষে। ছুটি পেলেই মনটা কেমন যেন পালাই পালাই করে। এই ছুটিতে শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। পরিচিত বৃত্তের বাইরে গিয়ে কিছু দিন ঠান্ডার আমেজ উপভোগ করার পরিকল্পনা করছেন?
গরম পড়লেই মনটা পাহাড় পাহাড় করে! গরমেও হিমেল স্বাদ উপভোগ করতে এ বার আপনার গন্তব্য হোক শিমলা। ব্রিটিশদের হাতে তৈরি হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা মানেই ধুপি, পাইন আর দীর্ঘ টানেলের আলো-আঁধারি পথ, চারদিকে পাহাড়ের স্নিগ্ধ রূপ, কালকা থেকে শিমলার রাস্তায় ট্রয় ট্রেনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। শিমলা ঘুরতে হলে হাতে দুই থেকে তিন দিন সময় থাকলেই যথেষ্ট। দেখে নিন শিমলায় গিয়ে কোন কোন জায়গায় ঢুঁ মারতেই হবে।
সামার হিল: প্রায় ২,১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সামার হিল হল সিমলা শহরকে ঘিরে থাকা সাতটি পাহাড়ের মধ্যে একটি অংশ। দেবদারু এবং পাইন গাছে ঘেরা এই পাহাড় পটারস হিল নামেও পরিচিত। মহাত্মা গান্ধী শিমলা সফরের সময় এই শহরতলিতে অবস্থিত রাজকুমারী অমৃত কৌরের বিশাল প্রাসাদে থাকতেন।
গ্রীষ্মের মরসুমে এই অঞ্চলটি ওকস এবং সিডারের ঘন এবং সবুজ বনে ঢাকা থাকে। গ্রীষ্মেও এখানকার হিমেল আবহাওয়া মন কাড়ে পর্যটকদের। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়, চ্যাডউইক ঝর্না, তারাদেবী মন্দির, সঙ্কটমোচন মন্দির আর আনানডেল রেসকোর্স দেখতে দেখতে সারা দিন কোথা দিয়ে কেটে যাবে, তা টের পাবেন না।
আংলেশিয়ান ক্রাইস্ট চার্চ: শিমলার মূল আকর্ষণ সেখানকার মল। এরই শেষ প্রান্তে আংলেশিয়ান ক্রাইস্ট চার্চ। হলদে রঙা এই গির্জাটি ১৮৪৪-৫৭ সালে তৈরি হয়েছিল, নিয়ো-গথিকশৈলীতে।
প্রতি সন্ধ্যায় অপরূপ আলোকমালায় সেজে ওঠে এই গির্জা। ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকেও। আংলেশিয়ান ক্রাইস্ট চার্চ উত্তর ভারতের সবচেয়ে পুরনো গির্জাগুলির মধ্যে অন্যতম।
কুফরি: এই মনোরম শৈলশহরটি হাইকিং এবং ট্রেকিংয়ের জন্য জনপ্রিয়। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তা হলে এক বার এখান থেকে ঘুরে আসতেই পারেন। কুফরি নামটি এসেছে ‘কুফর’ থেকে, যার অর্থ হ্রদ।
কুফরি চিড়িয়াখানা হল বিনোদনের জন্য আর একটি জায়গা। এখানে গেলে মাহাসু চূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। ঘুরে আসতে পারেন কুফরি ফান ওয়ার্ল্ড থেকেও।
জাখু পাহাড়: মন্দিরগুলি হিমাচল পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। হিমাচলকে ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনি মহাভারত এবং রামায়ণের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়। জাখু পাহাড় শিমলার অন্যতম জনপ্রিয় আকর্ষণ এবং এটি হনুমান মন্দিরের জন্য পরিচিত।
কথিত আছে, সঞ্জীবনী বুটি সংগ্রহের সময় হনুমান এই পাহাড়েই খানিক ক্ষণ বিশ্রাম করেছিলেন। হনুমানের সবচেয়ে বড় মূর্তিটি জাখু পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শৈলশহরেই তৈরি করা হয়েছে। জাখুতে রোপওয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে ।
ফাগু: মল রোডের কোলাহল থেকে বিরতি চাইলে আপনার গন্তব্য সবুজ উপত্যকা ফাগু। চা-বাগানের মাঝে ব্রিটিশ আমলের এক-দু’টি বাংলো আছে এখানে। আছে এক বৌদ্ধস্তূপ।
এই অঞ্চলের মাঝবরাবর বয়ে চলেছে চেল নদী। নদীর উপর একটি ছোট্ট লোহার ব্রিজ। নদীর পাড়ে বসে টাটকা ভেজ মোমোর স্বাদ নিতে পারবেন। একান্তে সময় কাটানোর আদর্শ ঠিকানা ফাগু উপত্যকা।