প্রতিটি খাবারের নিজস্ব পুষ্টিগুণ রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
ডায়েট করতে গিয়ে জানতে পেরেছিলেন শরীরে মেদ জমার পিছনে হাত রয়েছে কার্বোহাইড্রেটের। তাই এই উপাদান বেশি রয়েছে এমন খাবার যেমন ভাত, রুটি খাওয়ার পরিমাণে রাশ টানতে পারলেই ভাল। তবে সমাজ তো শুধু খারাপদের নিয়ে নয়। তাই ভাত, রুটি না খেয়ে পুষ্টিবিদেরা ডাল, দানাশস্য, কিনোয়া, জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা কিংবা বার্লির মতো ‘ভাল’ কার্বোহাইড্রেট খাবারের তালিকায় যোগ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু দ্রুত ফল লাভের আশায় অনেকেই ভাত, রুটি খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এমন অভ্যাসে লাগাম টানা জরুরি। শুধু কার্বোহাইড্রেট খাবেন না বলে তিন বেলা শুধু কিনোয়া কিংবা মিলেট খেয়ে যাওয়া শরীরের জন্য মোটেও ভাল নয়। ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্যটি।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিন-এর সহকারী অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান কিথ আয়ুব বলেন, “ভাত, রুটির মতো কার্বোহাইড্রেটের বদলে কিনোয়া, ডালিয়া কিংবা মিলেটজাতীয় কার্বোহাইড্রেট খেলে ক্ষতি হবে না, এটা ভাবতে ভাল লাগে। কিন্তু প্রতিটি খাবারের নিজস্ব পুষ্টিগুণ রয়েছে। কার্বোহাইড্রেট গোত্রের হলেও তারা নিজগুণে একে অপরের থেকে আলাদা। প্রতিটি খাবারে ভিটামিন এবং খনিজের তালিকাও ভিন্ন।”
এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে কিথ, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের শুধুমাত্র এক দিন আলুর মতো স্টার্চ কিংবা শর্করাজাতীয় খাবারের বিকল্প হিসাবে ভাত এবং রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ফলাফল জানার জন্য তাঁদের প্রত্যেকের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, রক্তে পটাশিয়াম ২১ শতাংশ, ভিটামিন বি৬ ১৭ শতাংশ, ভিটামিন সি ১১ শতাংশ এবং ফাইবারের পরিমাণ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছে। এই যুক্তির সাপেক্ষে কিথ এক দিনের জন্য দু’টি ভিন্ন খাবারের মডেল তৈরি করেন। প্রথম মডেলটিতে দুপুর এবং রাতের জন্য স্টার্চজাতীয় সব্জি রাখা হয়। অন্য মডেলটিতে রাখা হয় ভাত এবং হোলগ্রেন পাউরুটি। কিথ বলছেন, স্টার্চযুক্ত সব্জির তুলনায় এই ধরনের দানাশস্যে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি-এর পরিমাণ কম। আবার, স্টার্চজাতীয় সব্জির চেয়ে দানাশস্যে থায়ামিন, ভিটামিন ই এবং জ়িঙ্কের পরিমাণ অনেকটাই বেশি।
কিথ বলেন, “স্টার্চজাতীয় সব্জি পটাশিয়ামের উৎস। সেই সব সব্জির বদলে যদি সারা দিন ধরে দানাশস্য খাওয়া অভ্যাস করেন, তা হলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম পৌঁছবে না। আবার দানাশস্যের বদলে যদি শুধু আলুই খেয়ে যান সে ক্ষেত্রে ফাইবারের ঘাটতি হবে।” সুতরাং শরীর ভাল রাখতে এবং সমস্ত উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরে জোগান দিতে কোন খাবার কখন খাবেন এবং কার সঙ্গে কোন খাবারের তালিকা তৈরি করবেন— এই বিষয়টি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।