মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
‘লোকে কী বলবে’র প্রতিটি পর্বে ইতিমধ্যেই অনেকে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছেন। নিচ্ছেনও। এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বে জীবন এবং সমাজের এমন কিছু দিক নিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনা করা হয়, যা আর পাঁচজন মানুষের সামনে বলা সহজ নয়। সেই সব ছুঁতমার্গ, সামাজিক চাপ যেখানে অনেক লজ্জা, ভয় জুড়ে আছে সেই সব বিষয় নিয়েই ‘লোকে কী বলবে’র প্রতিটি পর্বে বিভিন্ন রকম আলোচনা হয়েছে। কেউ নাম প্রকাশ করেই নিজেদের সমস্যার কথা মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন, কেউ আবার নাম না করেই নিজের জীবনের গোপন সমস্যা ভাগ করে নিয়েছেন মনোবিদের সঙ্গে। কিন্তু প্রতিটি পর্বের আগে এমন অনেক প্রশ্ন এসেছে, যার সঙ্গে শুধু সামাজিক সঙ্কট জুড়ে নেই, আরও অনেক ধরনের বিপন্নতাও থেকে যাচ্ছে। সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব লাইভে এসে তেমনই কিছু সমস্যার কথা সরাসরি শুনলেন এবং সমাধান দিলেন অনুত্তমা।
ফেসবুক লাইভে নিজের সমস্যার কথা ভাগ করে নিয়েছেন দেবশ্রী। দেবশ্রীর প্রশ্ন, “সব কাজেই ভীষণ ধৈর্যের অভাব বোধ করছি। কোনও কাজ এক-দু’বারে না হলে খুব রাগ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি পছন্দের সিনেমা বা ভিডিয়ো শেষ পর্যন্ত দেখারও ধৈর্য থাকছে না। প্রথম দু-তিন মিনিট দেখে মাঝখানটা স্কিপ করে যাচ্ছি। তার পর ইচ্ছে হলে শেষটুকু দেখছি। না হলে আবার নতুন কোনও ভিডিয়োয় চোখ আটকে যাচ্ছে। কারও কথা শোনা বা বই পড়ার ক্ষেত্রেও একই রকম সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কী? ধৈর্য কি আদৌ বাড়িয়ে তোলা যায়?”
মনোবিদ বললেন, “শুধু দেবশ্রী নন। এই সমস্যা কমবেশি সকলেরই আছে। এই সমস্যারও একটি পারিপার্শ্বিক দিক রয়েছে। তার জন্যে সমাজমাধ্যম অনেকাংশে দায়ী। প্রতিনিয়ত এত কনটেন্ট, এত বিষয় আমাদের জোগান দেওয়া হচ্ছে যে, স্বল্প সময়ের মধ্যে সবটা দেখে না ফেলতে পারলে মন খুঁতখুঁত করছে। তাই অনেকটা বড় ভিডিয়ো থেকে কেটে ছোট একটি অংশ রিলের আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সমাজমাধ্যমে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেইটুকু জিনিস দেখে নিলে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে গোটা ভিডিয়ো দেখার প্রয়োজন পড়ছে না। সেই প্রভাব ব্যক্তিগত জীবন কিংবা কাজের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যাচ্ছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে প্রথমেই একটি অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। তা হল এই যে, সারা ক্ষণ নিজেকে বিনোদনের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা যাবে না। বদলে বই পড়া যেতে পারে। কাজের জন্য সমাজমাধ্যমে যদি থাকতেই হয়, সে ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে থামতে জানতে হবে। আর একটু সময় নিয়ে ভাবতে হবে যে, একটি রিল থেকে অন্য একটি রিলে যাওয়ার মাঝে কোন কোন শিক্ষা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারছেন। কারণ, সারা দিন যে এত সময় ব্যয় করছেন, এত জায়গায় বিচরণ করছেন, তার থেকে কিছু আহরণ করতে না পারলে, কোনও শিক্ষা নিতে না পারলে লাভ কী হল? ভিতর থেকেও স্বস্তি মিলছে না। শান্তির অভাব ঘটছে। এই জায়গা থেকে বেরোতে হলে নিজেকে বাঁধতে জানতে হবে। যে কোনও একটি বিষয়ে থিতু হতে হবে। ইচ্ছে করবে বার বার অন্যত্র সরে যেতে। কিন্তু সেই ইচ্ছেকে লাগাম পরাতে শিখতে হবে। কারণ, আমাদের মধ্যে যে ইচ্ছেই চাগাড় দিক না কেন, তাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কিন্তু আমাদের মধ্যেই রয়েছে।”