সনাতন দিন্দা। —ফাইল চিত্র।
পুরস্কার ফেরতের পর এ বার সরকারি পদ থেকে ইস্তফা! আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজ্য চারুকলা পর্ষদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন শিল্পী সনাতন দিন্দা। পদত্যাগের বিষয়টি শিল্পী জানিয়েছেন সমাজমাধ্যমের পাতায়।
ফেসবুকে সনাতন দিন্দা লেখেন, ‘‘আমি সনাতন দিন্দা । পিতা স্বর্গত শ্রী রতি কান্ত দিন্দা, মাতা স্বর্গত শ্রীমতি পারুল দিন্দা, বোন নিহত ‘তিলোত্তমা’ দিন্দা। আদি নিবাস ‘কুমারটুলী’ আরজি কর হাসপাতাল সংলগ্ন প.ব। দীর্ঘ দিন ‘রাজ্য চারুকলা পর্ষদের ‘কার্যকরি সদস্য ছিলাম। দীর্ঘ অনুপস্থিত এবং আমার কোনও ভূমিকা সেখানে ছিল না। তার পরেও এখানকার সদস্য পদ থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম।’’ (বানান ও বাক্য অপরিবর্তিত)
২০১১ সাল থেকে রাজ্য চারুকলা পর্ষদের সদস্য সনাতন। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার ‘বোনের’ হত্যার জন্য প্রতিবাদ প্রয়োজন। রাজ্যে যা হয়েছে, তার পর সরকারি কোনও পদে থাকার অধিকার আমার নেই বলে মনে করি।’’
সনাতন জানালেন, তিনি বৃহস্পতিবার পর্ষদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘আমি আর ইমেল বা অন্য কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করতে চাইনি। তার প্রয়োজনীয়তাও আছে বলে মনে করছি না। সরকারের থেকে কোনও সাহায্যও আগামী দিনে নিতে চাই না।’’
সম্প্রতি উত্তরপাড়ার বিধায়ক ও অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সরকারি পুরস্কার ফিরিয়ে দেন নাট্যকার চন্দন সেন ও বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং অভিনেতা সুদীপ্তা চক্রবর্তী। কাঞ্চন বা বিধায়ক লাভলি মৈত্রের মন্তব্যের জেরেই কি সরকারি সদস্যপদ ছাড়লেন? সনাতনের কথায়, ‘‘তাঁদের আমি খুব ভাল চিনি না। আমি আমার গোষ্ঠীর মানুষ, যাঁদের দেখে এক সময়ে অনুপ্রাণিত হয়েছি, তাঁদের নীরবতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
সনাতন তাঁর পদত্যাগের নেপথ্যে তোপ দেগেছেন চারুকলা পর্ষদের সদস্যদের একাংশের দিকে। তাঁর কথায়, ‘‘চাটুকার কিছু শিল্পী বাড়িতে চুপ করে বসে রয়েছেন। অথচ তাঁদের তুলির এক আঁচড়েই কিন্তু আরও অগণিত মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে পথে নামতে পারেন। আমি এই শিল্পীদের ঘৃণা করতে শিখছি। যেটুকু মেরুদণ্ড অবশিষ্ট রয়েছে, তার জেরেই পদত্যাগ করেছি।’’
নিজের পোস্টে নির্যাতিতাকে ‘বোন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সনাতনের যুক্তি, রক্তের সম্পর্কের বাইরেও এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বৃহত্তর মানবতাকেই আগলে তিনি প্রতিবাদ করতে উদ্যোগী। বললেন, ‘‘নির্যাতিতাও আমার বোন। ১৪ তারিখ থেকে আমি রাস্তায়। যত দিন না বিচার পাব, স্বাভাবিক জীবনে ফিরব না।’’ আরজি-কর-কাণ্ড তাঁর শিল্পের উপরেও গভীর প্রভাব ফেলেছে বলে জানালেন সনাতন। বললেন, ‘‘দুটো দুর্গা তৈরি করছি, জানি না, মানুষ তা মেনে নেবে কি না।’’
আরজি কর-কাণ্ডের জেরে দুর্গাপুজো বয়কটের প্রসঙ্গ উঠছে। কিন্তু সনাতন পুজোর পক্ষে। তাঁর যুক্তি, ‘‘এই বছর আরও বড় করে দুর্গাপুজো করা উচিত। ১৪ অগস্ট বোধন হয়েছে, ৪ সেপ্টেম্বর দীপাবলিও হয়ে গেল। সমাজের প্রত্যেক কোণে বাস্তবের মা-বোনেরা দুর্গা হয়ে উঠুক।’’
উল্লেখ্য, প্রাবন্ধিক ও লেখক আশীষ লাহিড়ী বুধবার ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ ফিরিয়ে দিতে চেয়ে রাজ্যের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। একই পথে হেঁটেছেন প্রাবন্ধিক তথা কবি শঙ্খ ঘোষের ভাই অভ্র ঘোষও।