সোনালি ফুসফুস! তবে এই ফুসফুস বুকের ভিতরে নয় বাইরে থাকে। বক্ষ আবরণী হয়ে। কান চলচ্চিত্রোৎসবে আমেরিকার সুপারমডেল বেলা হাদিদের পরা ওই বক্ষ আবরণী আপাতত গোটা বিশ্বের নজরে। ফ্যাশন সমালোচকরা তাতে মুগ্ধ হয়ে জানিয়েছেন, এমন পরিচ্ছদ কানের লাল কার্পেটে তাঁরা আগে কখনও দেখেননি।
নামে চলচ্চিত্রোৎসব। তবে কান-এ কী ছবি দেখানো হচ্ছে, তা নিয়ে চর্চা কমই হয়। বরং লাল কার্পেটে আমন্ত্রিত অতিথিরা কোন পোশকে হাজির হলেন, তা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে বরাবর। তারকাদের সেই ‘রেড কার্পেট লুক’ আতসকাচের তলায় ফেলে বিচার করেন ফ্যাশন দুনিয়ার নামী ব্যক্তিত্বরা। এ বছর সেই ফ্যাশন প্রহরীদেরই প্রশংসা কুড়িয়েছেন বেলা।
৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বেলা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ‘ট্রে পিয়ানি’ ছবির প্রদর্শনে। সেই আমন্ত্রণ রাখতে বেলা যে পোশাকে হাজির হয়েছিলেন, তাতে তাঁর ফ্যাশনবোধে মুগ্ধ হয়েছে দুনিয়া। নেটমাধ্যমে ইতিমধ্যেই ভাইরাল এই ছবি।
কালো রঙের একটি গাউন পরেছিলেন বেলা। তবে গাউনটির বিশেষত্ব তার গলার নকশায়। কল্পনার অবকাশ না রেখে ঊর্ধ্বাঙ্গের প্রায় পুরোটাই উন্মোচন করা ছিল পায়ের গোড়ালি ছাপিয়ে মাটিতে লুটনো সাহসী ওই পোশাকে।
বক্ষ আবরণ হিসেবে বেলা ব্যবহার করেছিলেন একটি নেকলেস। জালের কাজ করা সোনালি রঙের ওই নেকলেসের নকশাটি ফুসফুসের আদলে। তাতে অজস্র জলের বিন্দুর মতো ছোট ছোট পাথর বসানো।
বেলার এই ‘টপলেস গাউন এবং ফুসফুস নেকলেস’ নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাশন সমালোচকেরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন বেলার এই পোশাক কানে এ যাবৎ কালের সেরা ‘লুক’। তাঁরা বলেছেন, বেলা তাঁর ফ্যাশনবোধে নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে গিয়েছেন।
বেলার ওই পোশাক ডিজাইন করেছেন ইতালির নামী ফ্যাশন সংস্থা শিয়াপারেলির প্রধান শিল্পী ড্যানিয়েল রোজবেরি। ইনস্টাগ্রামে বেলার পোশাকের ছবি ভাগ করে নিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, বেলার জন্য তাঁরা গর্ববোধ করছেন।
সুপার মডেল বেলা অবশ্য বরাবরই তাঁর পোশাকে চমক দিয়েছেন, সে কান হোক বা মেট গালা। বেলা কোন পোশাক পরে আসছেন, তাতে বরাবরই নজর থাকে ফ্যাশন দুনিয়ার।
২৪ বছরের এই মডেলের কেরিয়ারও তাঁর ফ্যাশন বোধের মতোই ঝকঝকে। দুনিয়ার প্রথমসারির ফ্যাশন পত্রিকা, ব্র্যান্ড এবং আন্তর্জাতিক ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং এখনও করছেন তিনি।
ওয়াশিংটনে জন্ম বেলার। তিন ভাই বােন। বাবা মুসলিম, মা খ্রিস্টান। বেলার পুরো নাম ইসাবেলা খাইর হাদিদ। নিজেকে গর্বিত মুসলিম বলেই পরিচয় দেন তিনি।
বাবা-মা দু’জনেই স্বক্ষেত্রে পরিচিত। মহম্মদ হাদিদ একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিলাসবহুল হোটেল এবং বড়বড় ইমারত তৈরি করেন। মা ইয়োলান্ডা হাদিদ প্রাক্তন ডাচ মডেল এবং টিভি অভিনেত্রী। পিতৃসূত্রে আরবের এককালের শাসক জাহির আল উমরের সঙ্গে সম্পর্কিত বেলা।
তাঁর থেকে দু’বছরের বড় দিদি জিজি হাদিদও জনপ্রিয় মডেল। তবে বেলা নিজে মডেল হতে চাননি কখনও।
বেলা অলিম্পিকসে ইকোয়েস্ট্রিয়ান (অশ্বারোহী) হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০১৬ সালের অলিম্পিকসের প্রস্তুতি শুরুও করেছিলেন। তবে তার আগেই ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি অসুখে আক্রান্ত হন তিনি। অলিম্পিকসের স্বপ্ন আর ছোঁওয়া হয়নি তাঁর।
ইকোয়স্ট্রিয়ান না হতে পারার দুঃখ ভুলতে ফোটোগ্রাফি শেখা শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষে ক্যামেরার লেন্সের পিছন থেকে তাঁর সফর এসে থামে ক্যামেরার সামনে। ১৬ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেন বেলা। তবে ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে তিনি ফ্যাশন দুনিয়ার নজরে পড়েন।
এক বছরের মধ্যেই ফ্যাশন দুনিয়ার বড় বড় ব্র্যান্ড এবং ডিজাইনাররা বেলাকে নিজেদের মডেল হিসেবে বেছে নিতে শুরু করেন। দিদি জিজি জনপ্রিয় মডেল। প্রথমে জিজির বোন হিসেবে পরিচিত হলেও ক্রমশই মডেলিংয়ের জগতে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে শুরু করেন বেলা।
২০১৬ সালে প্যারিসে আন্তর্জাতিক একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের ফ্যাশন সপ্তাহের জন্য বেছে নেওয়া হয় বেলাকে। তারপর পূর্ণগতিতে ছুটেছে তাঁর মডেলিং কেরিয়ার। সেই সঙ্গে একাধিক ছোট, বড় ছবি এবং গানের ভিডিয়োতে মুখ দেখিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে একের পর এক ভোগ ফ্যাশন পত্রিকার প্রচ্ছদে দেখা যায় বেলাকে। মিলানের ফ্যাশন সপ্তাহে একাধিক আন্তর্জাতির প্রথম সারির ব্র্যান্ডের হয়ে হাঁটেন।
তবে বেলার সৌন্দর্য্যের সেরা তারিফ করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৯ সালে তাঁরা অঙ্ক কষে জানান বিশ্বের সেরা সুন্দরী মহিলা বেলা-ই। এক জন সুন্দরী মহিলার নাক-মুখ-চোখ-থুতনি এমনকি কপাল ও গালের গড়ন যেমন হওয়া উচিত, বেলার মুখ তার সঙ্গে ৯৯ শতাংশেরও বেশি মেলে।
যদিও কান চলচ্চিত্র উৎসবে বেলার ওই পোশাক-ই দুনিয়াজোড়া পরিচিতি এনে দিল তাঁকে।
বেলার ওই গাউন এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে তা নিয়ে নেটমাধ্যমে তৈরি হয়েছে একাধিক মিম বা ব্যঙ্গচিত্রও। তবে এ সব কিছুই বেলাকে এনে দিয়েছে বৃহত্তর প্রচার।