রাতে ত্বকের পরিচর্যা করবেন কী ভাবে, রইল টিপ্স। ছবি: ফ্রিপিক।
সারা দিনের ব্যস্ততায় নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। ত্বকের পরিচর্যা না হয় না-ই হল। ঘুম ভেঙে উঠে সেই যে রোজের যুদ্ধ শুরু হয়েছে, বিশ্রাম একেবারে রাতে। প্রতি দিনের এই ছুটে চলায় সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হচ্ছে ত্বক ও চুল। দিনভর ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে চোখে-মুখে। বাইরের ধুলোধোঁয়া, দূষণে চুল হয়ে উঠছে রুক্ষ, নির্জীব। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হয়তো আপনিই চমকে ওঠেন রোজ। মনে মনে বলেন এ কী অবস্থা হয়েছে ত্বক, চুলের? দিনের ব্যস্ততা না হয় গেল, কিন্তু রাতে? মোবাইল, ট্যাবে চোখ না রেখে বরং ঘুমোনোর আগে ত্বকের রূপচর্চায় একটু নজর দিন। প্রতি দিন মিনিট পনেরো সময়েও যদি দিতে পারেন, তা হলেও ত্বক হয়ে উঠবে সতেজ ও জেল্লাদার।
রাতের বেলা ত্বকের পরিচর্যা কী ভাবে করবেন, ধাপে ধাপে শিখে নিন পদ্ধতি।
ত্বক পরিষ্কার
শুরুটা করুন ত্বক পরিষ্কার করা দিয়ে। আগে জল দিয়ে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন। বাইরে বেরোলে তো বটেই, সারা দিন বাড়িতে থাকলেও কিন্তু ত্বকে তেল, ঘাম ইত্যাদি জমা হয়। আর যদি মেকআপ করেন, তা হলে সেটা তোলাও জরুরি। প্রথমে তুলোয় করে মেকআপ রিমুভার নিয়ে ভাল ভাবে মেকআপ তুলে নিন। নাকের দু’পাশ, চোখের তলা ভাল করে মুছবেন। তার পর সামান্য অলিভ তেল নিয়ে মুখে মাসাজ করুন। বাড়তি তেল টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিয়ে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। যাঁরা রোজ বাইরে বেরোচ্ছেন, তাঁদের দিনে অন্তত দু’বার ফেসওয়াশ ব্যবহার করা জরুরি। এর পর স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।
ফেসপ্যাক
যদি সময় থাকে তা হলে ঘুমোনোর আগে ফেসপ্যাক লাগিয়ে নিতে পারেন। যে হেতু ত্বক সারা রাত বিশ্রাম পায়, তাই ফেসপ্যাক লাগালে তার ফলও ভাল পাওয়া যায়। আপনার ত্বক তৈলাক্ত না শুষ্ক, সেই বুঝে ফেসপ্যাক বাছতে হবে। না হলে বাড়িতেই বানিয়ে নিন। গোলাপ জল এবং মুলতানি মাটি (স্বাভাবিক এবং তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে) কিংবা টক দই, মধু এবং পাকা কলা (শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে) একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’দিন এই প্যাক লাগাতে পারেন।
টোনার
ত্বকে নিয়মিত টোনার ব্যবহার করলে দেখবেন ব্রণ, ফুসকুড়ি, র্যাশের সমস্যা দূর হবে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার বাছুন। তৈলাক্ত ত্বকে নিম, তুলসী, টি-ট্রি অয়েল, গ্রিন টি সমৃদ্ধ টোনার খুব ভাল কাজ করে। আর ত্বক যদি শুষ্ক হয় তা হলে গোলাপ জল, মধু ইত্যাদি দিয়ে তৈরি টোনার ভাল কাজ করবে। খেয়াল রাখবেন, টোনার যেন অ্যালকোহল-বেসড না হয়। তা হলে ত্বকের ক্ষতি হবে।
ময়েশ্চারাইজ়ার
শরীর যতই ক্লান্ত হোক রাতের ঘুমনোর আগে ময়েশ্চারাইজ়ার লাগাতে ভুলবেন না। ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হলে, মুখ ভিজে থাকা অবস্থাতেই ত্বকে অল্প ময়েশ্চারাইজ়ার লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে তুলো দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। মুখের পাশাপাশি গলায় এবং ঘাড়েও ময়েশ্চারাইজ়ার লাগান। হাত, পায়ের পাতা, হাঁটু, কনুইতে ময়েশ্চারাইজ়ার লাগাতে যেন ভুলবেন না। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ঘরেও ময়েশ্চারাইজ়ার তৈরি করে নিতে পারেন। অল্প দুধ, লেবুর রস, দু’টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ়ার। এই ময়েশ্চারাইজ়ারে থাকা দুধ ত্বক কোমল করবে ও অলিভ অয়েল ত্বকের পিএইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।
পায়ের ত্বকের যত্ন
মুখের রূপটান হয়ে গেলে নজর দিন পায়ের দিকে। ত্বক চিকিৎসকেরা বলছেন, চড়া রোদ, বাইরের ধুলো ময়লা লেগে পায়ের পাতায় খুব তাড়াতাড়ি কালচে ছোপ পড়ে যায়। পা ঢাকা জুতো যাঁরা পরেন না, তাঁদের পায়ের পাতায় চটজলদি ট্যান পড়ে যায়। মুখে যত ক্ষণে ফেসপ্যাক বা ময়েশ্চারাইজ়ার লাগাচ্ছেন, তত ক্ষণ পায়ের পাতাতেও প্যাক লাগিয়ে রাখুন। পেঁপের কয়েকটি টুকরো নিয়ে পেস্ট করে নিন। এ বার তাতে মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন। এই মিশ্রণ পায়ের পাতায় ভাল করে মেখে নিন। অথবা পাকা কলার সঙ্গে মধু মিশিয়েও স্ক্রাব বানাতে পারেন। মিনিট পনেরো রেখে উষ্ণ গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। সব দাগছোপ দূর হয়ে যাবে।