ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি নানাবিধ শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। প্রতীকী ছবি।
ভিটামিন বি১২-এর অভাবে কেবল শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া বা ভুলে যাওয়ার সমস্যাই দেখা দেয় তা নয়, সমস্যা হয় আরও গভীরে। ভিটামিন বি১২ শরীরের কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করে। তাই এর অভাব হলে, নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে থাকে। মুম্বইয়ের কেজে সোমাইয়া মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চিকিৎসকেরা গত দু’বছর একটি সমীক্ষা চালাচ্ছিলেন। পিয়ার-রিভিউড্ বিজ্ঞান পত্রিকা ‘কিউরিয়াস’-এ এই সমীক্ষার খবর ছাপাও হয়েছে। চিকিৎসকদের দাবি, এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে তার প্রভাব বেশি পড়ে পুরুষদের শরীরে। রক্তাল্পতা, স্নায়ুর রোগের পাশাপাশি আরও কিছু শারীরিক সমস্যাও দেখা দেয়।
১৮০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষকে নিয়ে সমীক্ষাটি চলেছে। যাঁদের বেছে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের বয়স ১৮ বছর থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। প্রত্যেকেরই শরীরে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসকেরা দাবি করেছেন, বছর দুয়েক তাঁদের পর্যবেক্ষণে রেখে দেখা গিয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ পুরুষের শরীরে রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ বেড়েছে অনেকের, ডায়াবিটিসের উপসর্গও দেখা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, অনেকেই বলেছেন তাঁদের হাত-পা অসাড় হয়ে যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই, প্রচণ্ড ঝিমুনি হচ্ছে। কোনও কিছু ধরতে গেলে হাত কাঁপছে। ওঠা বা বসার সময় অথবা চলাফেরা করার সময় পা কাঁপছে বা পায়ের পেশিতে টান ধরছে।
ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। ছবি: ফ্রিপিক।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এমনটা ‘ম্যাক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া’-র কারণে হচ্ছে। এই ধরনের রক্তাল্পতায় লোহিত রক্তকণিকার আকার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই কম হয়। ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি এমন রক্তল্পতার অন্যতম কারণ। এই রোগ হলে হাত-পা কাঁপা, পেশির অসাড়তা, পেশিতে টান ধরা, ঝিমুনি, মাথা ঘোরার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৬.৭ শতাংশেরই এমন রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল বলে দাবি। অসুখ সারাতে প্রতি সপ্তাহে তাঁদের একটি করে ভিটামিন বি১২ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। লাগাতার ৬ সপ্তাহ ধরে ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার পরে দেখা যায়, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়েছে, শরীরও অনেক সুস্থ হয়েছে।
কোন কোন খাবারে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি মিটবে? প্রতীকী ছবি।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডায়েট থেকে ভিটামিন১২ নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়, না হলে সাপ্লিমেন্টেই ভরসা করতে হবে। সময়ান্তরে পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে, ভিটামিনের ঘাটতি হচ্ছে কি না। প্রাণিজ খাবারে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি১২ থাকে। ডিম, মাশরুম, রেড মিট, চিকেন, মাংসের মেটে, সামুদ্রিক মাছের মতো খাবার ভিটামিন বি১২-এর সমৃদ্ধ উৎস। নিরামিষ খাবারের মধ্যে দুধ, দই, ছানা থেকে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যেতে পারে।