এ যেন এক রূপকথার গল্প! বেড়ে ওঠা গঙ্গার গা ঘেঁষে। কাঁকিনাড়ায়। বাড়ি ছিল এক চটকলের চত্বরে। চিড়ধরা চশমা পরে স্কুলে যাওয়া সেই ছেলেটির পৃথিবীজুড়ে এখন মস্ত বড় নামডাক। ফ্যাশন দুনিয়ায় খুব কম বয়সেই আলোড়ন তুলেছেন। তিনি আর কেউ নন, পোশাকশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।
বিশ্বজুড়ে নামডাক। তবু দেশজ নকশার প্রতি ভালবাসা অমলিন। এর প্রমাণ মেলে তাঁর তৈরি পোশাকেই। যেখানে অবলীলায় খাদির সঙ্গে বেনারসি, নেটের সঙ্গে ভেলভেট মিশিয়ে গড়ে তোলেন এক ঋদ্ধ ক্যানভ্যাস। শাড়ি, লেহঙ্গা, পাশ্চাত্য পোশাক, সবেতেই তাঁর অবাধ-অনায়াস গতি।
১৯৭৪ সালে জন্ম। বুধবার পা রাখলেন ৪৮-এ।কিন্তু ছোটবেলায় প্রকৃতির মাঝে কাটানো মন যে আজও সজীব ও সতেজ, তা বুঝিয়ে দেবে সব্যসাচীর নকশা। তাঁর তৈরি বেশির ভাগ পোশাকের প্রেরণাই প্রকৃতি। মাটি, পাতা, ফুলের প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহারেই তৈরি করেন পোশাক।
পড়াশোনা শুরু চন্দননগরের শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরে। বাংলা সাহিত্য ছিল প্রিয় বিষয়। কোনও বিষয়ের উপর রচনা লিখতে দিলেও তাঁর কলম চলত ঝড়ের বেগে। স্কুল শেষ হলে কাঁকিনাড়া ছেড়ে কলকাতায় চলে আসা।
কলকাতার‘সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ’ থেকে পাশ করে ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ফ্যাশন টেকনোলজি’-তে ভর্তি হওয়া। ছেলের পোশাকশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাবা-মা প্রথমে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে সব্যসাচী থামেননি।
সব্যসাচী যে পোশাক শিল্পী হবেন, তা যেন ছিল পূর্ব নির্ধারিত। শোনা যায়, ছেলেবেলাতেই বাবার পায়জামা দিয়ে জামার হাতা বানিয়ে ‘কিং লিয়র’ নাটকের পোশাক অবলীলায় বানিয়ে ফেলেছিলেন।
বাবা-মা চাননি সব্যসাচী পোশাক শিল্পী হন। তাই এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনার জন্য বাড়ি থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়াও দুষ্কর ছিল। নিজের যাবতীয় বই বিক্রি করে ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ফ্যাশন টেকনোলজি’-তে ভর্তি হন তিনি।
১৯৯১ সালে সেখান থেকে পাশ করে পরপর দুটি প্রদর্শনী। তার পর সোজা মুম্বই। সে বছরই তিন জন কারিগর নিয়ে তৈরি করেন নিজের পোশাক ব্র্যান্ড ‘সব্যসাচী’।
বন্ধু সেলিনা জেটলি যাবেন দেশের সর্বোচ্চ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়। তাঁর জন্য আলাদা পোশাক বানাতে হবে। এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে করতেই বিভিন্ন রঙের খাদির কাপড় জুড়ে জুড়ে তৈরি করে ফেললেন একটি স্কার্ট। সঙ্গে হল্টার নেক জামা আর মাথায় পাগড়ি। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার সেই মঞ্চে সেলিনার পোশাক নিয়ে সেদিন হইচই পড়ে গিয়েছিল।
আর ফিরে তাকাতে হয়নি ‘পেপসি’-কে। বন্ধুমহলে এই নামেই পরিচিত সব্যসাচী। সিঙ্গাপুর, দিল্লি, মুম্বইয়ের ‘ফ্যাশন উইক’ তো আছেই, এক মাত্র ভারতীয় হিসাবে আমন্ত্রিত হন ফ্যাশনের মক্কা মিলানেও। আমন্ত্রিত হয়েছেন লন্ডন, নিউ ইয়র্কের বহু অভিজাত ফ্যাশন শোয়ে।