ঋতুকালীন সময়ের ব্রণ, ফুসকুরি দূর করার সহজ উপায় ছবি: ফ্রিপিক।
ঋতুস্রাবের ওই চারটে দিন সব মেয়ের কাছেই অস্বস্তিকর। কেউ ভোগে তলপেটের অসহ্য ব্যথায়, কারও আবার ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগেই সারা মুখ ভরে যায় গুটি গুটি ব্রণ, ফুসকুরিতে। ঋতুকালীন সময়ে ত্বক অতি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে যায়। ব্রণর পাশাপাশি ত্বকে চুলকানির মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকেরা বলেন, ঋতুস্রাবের সময়ে হরমোনের ওঠানামার কারণেই এমনটা হতে দেখা যায়। তাই ঋতুকালীন সময়ে ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতেই হয়।
ঋতুস্রাবের সময়ে ব্রণর সমস্যা ভোগায় কেন?
ঋতুস্রাবের মোটামুটি ৭-১০ দিন আগে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা সারা মাস এক থাকলেও, ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে সেটি সরাসরি ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। একই সঙ্গে প্রোজেস্টেরন হরমোনেরও তারতম্য হয় ঋতুকালীন সময়ে।
ঋতুস্রাবের ১২-১৩ দিন পর ডিম্বস্ফোটনের সময়ে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। তখন ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকে জ্বালা ভাব দেখা দেয়, লালচে র্যাশ দেখা দিতে পারে। আবার যখন ঋতুস্রাব শুরু হয়, তখন ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে ব্রণর সমস্যা দেখা দেয়। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস থাকলে এই সমস্যা আরও বাড়ে।
ঋতুকালীন ব্রণ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
১) বেশি করে জল খেতে হবে ওই সময়টাতে। পর্যাপ্ত জল খেলে ত্বক আর্দ্র থাকবে, ফলে ব্রণ, ফুসকুরির সমস্যা হবে না।
২) ত্বক তৈলাক্ত হয়ে গিয়েই যেহেতু ব্রণর সমস্যা হয়, তাই ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করা জরুরি। ফেসওয়াশ কেনার সময় দেখে নিন তা অয়েল-ফ্রি ফেসওয়াশ কি না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩) অনেকেই ব্রণ খুঁটে ফেলেন। বার বার ব্রণ স্পর্শ করলে বা ব্রণ সারা ক্ষণ পরখ করে দেখলে ব্রণের জীবাণু ত্বকের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ব্রণ তো কমেই না, উল্টে বেড়ে যায়।
৪) অতিরিক্ত তেলমশলা যুক্ত খাবার খাওয়া চলবে না। ভাজাভুজি, নরম পানীয়, চকোলেট, মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি না খাওয়াই ভাল। পাতে রাখুন শাকসব্জি ও প্রচুর পরিমাণে মরসুমি ফল। এই সময় যত পারবেন ফাইবার জাতীয় খাবার খান। চিনি কম খান, কফি খাওয়ার মাত্রা কমান। হালকা মেকআপ ব্যবহার করুন।
৫)বাজার চলতি বেশি রাসায়নিক দেওয়া ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন না। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার অন্তত সাত দিন আগে থেকে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড দেওয়া ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন দিনে একবার। স্যালিসাইলিক অ্যাসিডদেওয়া ফেস সিরাম ব্যবহার করতেও ভুলবেন না। এটি আপনি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে ব্রণর সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৬) ডিম্বাশয়ে সিস্ট হচ্ছে কি না তা একবার পরীক্ষা করিয়ে নিন। গালে, থুতনিতে ব্রণর সমস্যা যদি একান্তই না কমে তাহলে চিকিৎসককে দেখান। তিনি ঠিক মতো পরীক্ষা করলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন। সিস্ট থাকলে চিকিৎসা করতে হবে।
৭) রোজের ব্যস্ততা যতই থাকুক, নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে। দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা সময় রাখতে হবে শরীরচর্চার জন্য। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত ঘুমও দরকার। প্রতি দিন টানা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।