রোজ হাসিখুশি, চনমনে থাকার উপায় জেনে নিন। ছবি: ফ্রিপিক।
জীবনে ভাল থাকতে গেলে সব থেকে জরুরি খুশি থাকা। খুশি হতে কে না চায়। শুধু খুশি থাকার জন্যই তো জীবনে এত কিছু। কিন্তু তা-ও কেন খুশি থাকতে পারছেন না বলুন তো? রোজকার জীবনে গুচ্ছ গুচ্ছ জটিলতা আর খুশি থাকতে দিচ্ছে কই? আপনাকে খুশি রাখার দায় কিন্তু অন্যদের নয়। নিজেকে খুশি রাখার মূল দায়িত্ব আদতে আপনারই। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে গিয়ে উদ্বেগ যদি আকাশছোঁয়া হয়ে যায়, তা হলে সুখ মনের জানলা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। রোজ হাসিখুশি, ফুরফুরে মেজাজে থাকতে গেলে কিছু অভ্যাস রপ্ত করতেই হবে। জেনে নিন সেগুলি কী কী।
১) রোজের কাজের তালিকা বানান
কোন কাজ কখন করবেন, ঠিক সময়ে তা শেষ হবে কি না কিংবা এত কাজের মধ্যে কোনওটি যদি করতে ভুলে যান— এই সব নিয়ে অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ দেখা দেয়। তাই মনোবিদেরা বলেন, কাজের সুনির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করে নেওয়া জরুরি। তা হলেই কোনটা করছেন আর কোনটা ভুলে যাচ্ছেন, বুঝতে পারবেন নিজে। অযথা উদ্বেগে ভুগতে হবে না।
২) সকাল সকাল শরীরচর্চা
দিনের শুরুটা যদি শরীরচর্চা দিয়ে হয়, তা হলে গোটা দিনটাই শরীর ও মন তরতাজা থাকবে। যাঁরা জিমে যান, তাঁদের রুটিন মেনে শরীরচর্চা করান ফিটনেস প্রশিক্ষকেরাই। আর যদি জিমে যাওয়ার সময় না থাকে, তা হলে বাড়িতেই করতে পারেন যোগাসন, প্রাণায়াম। তারও সময় না থাকলে হাঁটুন। বাড়ির সামনে, ছাদে যেখানে সুবিধা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। তাতেও শরীর ভাল থাকবে।
৩) সোনা রোদ মাখুন গায়ে
শরীর ও মন যদি ভাল রাখতে হয়, তা হলে কিন্তু গায়ে রোদ লাগানো খুব জরুরি। ঠাকুরমা, দিদিমারা রোদে পিঠ দিয়ে বসতেন। বাতের ব্যথা সামাল দিতে এই টোটকা বহু পুরনো। আর এখন পেশার তাগিদে মানুষ প্রায় সারা দিন ঘরবন্দি। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা— দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে। চিকিৎসকেরা বলেন, হরমোনের ক্ষরণ এবং উৎপাদনের পিছনেও রোদ এবং অন্ধকারের আলাদা আলাদা ভূমিকা রয়েছে। পর্যাপ্ত রোদ গায়ে না লাগলে ‘সেরোটনিন’ হরমোনের মাত্রা হ্রাস পায়। যা মানসিক চাপ, অবসাদের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
৪) দুশ্চিন্তাকে বলুন টাটা
বাস্তববাদী ও ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ান। উদ্বেগপ্রবণ মানুষের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন। দুশ্চিন্তা নয়, ভাল চিন্তা করুন। সুখের স্মৃতি মনে করুন, তা হলেই মন আনন্দে ভরে উঠবে। শ্বাসের ব্যায়াম করুন। এতে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়বে। মন শান্ত থাকবে।
৫) বানান ফুড ডায়েরি
মানসিক চাপ কমাতে ভুলভাল খেতে শুরু করবেন না। এতে বিপদ বাড়বে। তখন উদ্বেগ কমাতে পারে যে সব স্বাস্থ্যকর খাবার, তা অল্প করে নিয়ে খাবারের স্বাদ-গন্ধ উপভোগ করে ধীরেসুস্থে খান। যাকে বলে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’। খাওয়ার আনন্দ পাবেন, উদ্বেগ কমবে, পুষ্টিও পাবে শরীর। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ব্রাজিল নাট ও আমন্ড খান। সপ্তাহে অন্তত দু’বার তৈলাক্ত মাছ খান। সয়াবিন, আখরোট, তিসির বীজ, চিয়া বীজ রাখার চেষ্টা করুন ডায়েটে। চিকেন, ডিম, চিজ, মাছ, বাদাম, কুমড়ো বীজ, তিল, দুধ, কলা খান মাত্রা রেখে।
৬) শখ মেটান
একঘেয়ে লাগলে কিছু না খেয়ে মিনিট দশেক শব্দজব্দ করুন। নতুন কোনও রান্না করতে পারেন। বা যা আপনার ভাল লাগে তা করুন। উদ্বেগ হলে, দুশ্চিন্তা বাড়লে পুরোপুরি ডুবে যেতে পারেন এমন কোনও কাজ করতে হবে। বই পড়ুন, লেখালিখি করতে পারেন, ছবি আঁকুন, গান শুনুন। বাগানের শখ থাকলে সেটা করুন। সৃষ্টিশীল কিছু করার অভ্যাস থাকলে তো কথাই নেই।
৭) মন খুলে হাসুন
যে যা-ই বলুক, মন খুলে হাসুন। হাসির জোরে জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অনেক রোগও বশে রাখা যায়। মন খুলে হাসিঠাট্টা করতে মেলামেশা বাড়ান। বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে গুল্প করুন। পুরনো দিনের মজার কথা মনে করুন। সকালে উঠে মেজাজ বিগড়ে থাকলে হাসির গল্প পড়ুন আর জোরে জোরে হাসুন।