আলিয়া থেকে দীপিকা, সকলের বিয়ের সাজেই ছিল ডলি জৈনের ছোঁয়া!
দেশের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের শাড়ি পরানোর জন্য সবার আগে ডাক পড়ে তাঁর। বিয়ে হোক কিংবা কান-এর মতো বড় কোনও চলচ্চিত্র উৎসব, শাড়ি পরতে হলেই দীপিকা পাড়ুকোন থেকে ক্যাটরিনা কইফ, সকলেরই প্রথম পছন্দ ডলি।
মাত্র সাড়ে ১৮ সেকন্ডে শাড়ি পরাতে পারেন ডলি। ভারতের সব প্রদেশের শাড়ি পরানোর কায়দা জানেন। সঙ্গে জানা আছে ফিউশন সাজের কায়দাও। দেশের নামী পোশাক-শিল্পীরাও ডলির শরণাপন্ন হন।
এই ‘অন্য রকম’ পেশায় আসার যাত্রা শুরু হয়েছিল বছর ১৭ আগে।
সম্প্রতি শহরের এক হোটেলে আয়োজিত হয় বিয়ের সাজ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠান। হবু বধূদের পোশাকের কী ‘ট্রেন্ড’ চলছে, নববধূদের কোন রঙের পোশাক এখন ফ্যাশনে ‘ইন’— সব কিছুরই হদিস দিতে আয়োজিত হয়েছিল অনুষ্ঠান। সেখানে এসেছিলেন ডলি জৈন। কী ভাবে শাড়ি পরেও আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, সেই ফন্দি-ফিকির শেখালেন ডলি।
সেই বিশেষ অনুষ্ঠানে ছিল তারকাদের সমাহার।
অনুষ্ঠান শেষে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে ডলি জানালেন, ‘‘এই পেশায় আসার যাত্রাপথের শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। সকলেই মনে করেছিলেন এই পেশায় কোনও ভবিষ্যৎ নেই। আমি আমার সময়, টাকা সবই অপচয় করছি। বিয়ের আগে আমি শাড়ি পরতেও পারতাম না। তবে বিয়ের পর নানা কায়দায় শাড়ি পরা আমার নেশায় পরিণত হয়। এক বার প্রয়াত অভিনেত্রী শ্রীদেবীকে শাড়ি পরানোর সুযোগ হয়। তিনি বলেছিলেন, আমার হাতে নাকি জাদু আছে। এই কাজকে পেশা করে নেওয়ার উৎসাহ দেন তিনিই। এর পর আমার বাবার সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে ছ’মাস সময় দেন। আর সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন যাত্রা। নিজের মনের কথা শুনে চলেছি আর তাতেই সাফল্য পেয়েছি।’’
ডলির মতে, ক্যানভাস জুতো বা চামড়ার বেল্ট, সব কিছুর সঙ্গেই পরা যায় শাড়ি। শুধু পরার কায়দা পাল্টাতে হবে। শাড়ি পরার কায়দায় থাকতে হবে আধুনিকতার ছোঁয়া।
আলিয়া থেকে দীপিকা, সকলের বিয়ের সাজ সম্পূর্ণ করতে তিনিই ছিলেন ভরসা। কোন অভিনেত্রী তার সবচেয়ে প্রিয়? ডলি বলেন, ‘‘আমি সবচেয়ে বেশি দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে কাজ করি। বি-টাউনে তিনিই আমার সবচেয়ে প্রিয়।’’ তবে ডলির জানান, এই পেশায় তাঁর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে আমি যে যে অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরা সকলেই আমার কাজের উপর ভরসা দেখিয়েছেন। সকলেই সহযোগিতা করেছেন। তারকাদের হাতে সময় কম। আর কম সময়ে শাড়ি পরানোই আমার ‘ইউএসপি’। তাই কোথাও যেন এই দুইয়ের মেলবন্ধনই আমাকে এই পেশায় সাফল্য পেতে সাহায্য করেছে।’’
এই পেশায় যাঁরা যুক্ত হতে চান তাঁদের উদ্দেশে ডলির পরামর্শ, কাউকে দেখে নয়, শাড়ি পরানোয় আগ্রহ থাকলে তবেই এই পেশায় আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘১৭ বছরের অভিজ্ঞতায় যেটুকুই শিখেছি, আমার কাছে তা এলে আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব। কোনও যুদ্ধই একা জেতা সম্ভব নয়, সকলে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারলে আমার বিশ্বাস ভারতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শাড়ি পরার আগ্রহ আরও বাড়বে।’’
ইদানীং ছেলেদের সাজেও থাকছে শাড়ির ছোঁয়া। ডলি জানান, কোথাও বলা নেই যে, শাড়ি কেবল মহিলাদেরই পোশাক। বরং আগেকার দিনে ছেলেরাও শাড়ি পরতেন। ধুতির মতো করে। আমি বেশ কয়েক জন পুরুষকে শাড়ি পরিয়েছি ছবি তোলার জন্য। তবে বিয়েতেও ছেলেদের শাড়ি পরানো যায়। তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। যদি দেখেন বিয়েতে ছেলেরাও শাড়ি পরতেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’
বিয়ে সংক্রান্ত ওই অনুষ্ঠানে ডলি ছাড়াও ছিলেন মেকআপ শিল্পী আরতি নায়ার। তিনি হবু কনেদের শেখালেন বিয়ের মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করার নানা কায়দা। অনুষ্ঠানে হবু কনেদের জন্য তাঁর ‘সাজ কালেকশন’ প্রকাশ্যে আনলেন পোশাকশিল্পী পল্লবী পোদ্দার। শাড়ি, ককটেল গাউন, লেহঙ্গা, সবই ছিল পল্লবীর সম্ভারে। ছেলেদের পোশাকের সম্ভার নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পোশাক-শিল্পী রাতুল সুদ। পল্লবীর নকশা করা লেহঙ্গা পরে র্যাম্পে হাঁটলেন অভিনেত্রী নুসরাত জাহান, প্রিয়াঙ্কা রতি পাল, দর্শনা বণিক ও মডেল রিচা শর্মা।