ছবি : সংগৃহীত।
এক থালা ভাতে একটু গাওয়া ঘি পেলে শুধু গন্ধেই থালা ফাঁকা হয়ে যায় বাঙালির। যেকোনও খাবারের আগে ‘ঘিয়ে ভাজা’ শব্দদু’টি ব্যবহার করুন, দেখবেন খাদ্যরসিক বঙ্গসন্তানেরা অন্ধের মতো এগিয়ে আসছেন সেই স্বাদের টানে। বাঙালির ঘি-প্রীতির বহর বোঝা যায় ঘিয়ের ব্র্যান্ডের নামেও— ঝর্ণা, সুরভী, শ্রী, লক্ষ্মীশ্রী— সর্বত্রই বেশ একটা শ্রী-মন্ত ভাব। ত্বকের চিকিৎসকেরা বলছেন, নিয়মিত ঘি খেলে চেহারাতেও শ্রী ভাব ফুটবে। তবে একান্তই যদি ঘি খাওয়ার সমস্যা থাকে, তবে ত্বকের শ্রী ফেরাতে ঘি মাখাও যেতে পারে!
ঘি দিয়ে রূপচর্চা!
এ ব্যাপারে অবশ্য বাংলা একা এগিয়ে, বলা যাবে না। বলিউড তারকাদের ত্বকের চিকিৎসক কসমেটিক ফিজ়িসিয়ান যমুনা পাই বলছেন, ‘‘আমার দিদার ত্বক ছিল তুলোর মতো তুলতুলে নরম। আর সবসময় ঝকঝক করত। দিদাকে দেখেছি সময় পেলেই সামান্য ঘি নিয়ে হাতে মুখে বুলিয়ে নিতে। আমাকেও শীতকালে রুক্ষ্ম ত্বকে ঘি লাগাতে বলতেন।’’ যমুনা মহারাষ্ট্রের কন্যা। তিনি বলছেন, ঘি দিয়ে ত্বকের পরিচর্যার কথা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও বলা আছে। ঘিয়ে আছে জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা শুধু ত্বককে পুষ্টিই জোগায় না, ত্বকে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি মেরামতও করে। পাশাপাশি খুব ভাল ময়েশ্চারাইজ়ারেরও কাজ করে ঘি। যমুনা ত্বক পরিচর্যার প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে বই লিখেছেন, তাঁর নিজস্ব ত্বকের চিকিৎসার ক্লিনিক্যাল ল্যাবও রয়েছে। ঘি দিয়ে ত্বকের পরিচর্যার ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ, ‘‘সামান্য ঘি গরম করে রুক্ষ্ম ত্বক বা ফাটা ঠোঁটে লাগালে মসৃণ ত্বক পাওয়া যাবে।’’
আয়ুর্বেদের ঘি-তত্ত্ব
আয়ুর্বেদ বলছে, গরুর দুধ থেকে তৈরি শুদ্ধ দেশি ঘি হল ‘অমৃত সমান’। ২০০৯ সালের একটি গবেষণাও বলছে, গরুর দুধ থেকে তৈরি ঘি আমাদের সমস্ত রকম শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জন্যই উপকারী। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আয়ূষ আগরওয়াল বলছেন, ‘‘দেশি ঘিয়ে আছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। যা আমাদের হজমের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।’’ তবে কেউ যদি ল্যাক্টোস ইনটলারেন্ট হন অর্থাৎ দুগ্ধজাত খাবার হজমের সমস্যা থাকে, তা হলে? তিনি কি উপকার পাবেন না! আয়ুর্বেদ চিকিৎসক যতীন গুজরাটি বলছেন, ‘‘ঘিয়ের উপকার পেতে যেমন নিয়মিত খাবারের তালিকায় ঘি রাখতে পারেন, তেমনই ত্বকেও মাখতে পারেন। ঘিয়ের গুণ হল, এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বকে জেল্লা আনে। শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি জুগিয়ে ত্বকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বলতা দেয়।’’
কী কী গুণ আছে ঘিয়ে?
গবেষণা বলছে ঘিয়ে রয়েছে ভিটামিন এ, বি১২, ভিটামিন ডি, ই, কে এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড। যা ত্বকের আর্দ্র ভাব দীর্ঘ ক্ষণ ধরে রাখতে সাাহায্য করে। এ ছাড়া ঘি ত্বকের রং উজ্জ্বল করে, দাগ ছোপ দূরে রাখতে সাহায্য করে, ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করার পাশাপাশি ত্বককে মসৃণ রাখতেও সাহায্য করে বলে জানাচ্ছেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা। যতীন বলছেন, ‘‘ঘিয়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। ত্বকের টিস্যুর স্তরে প্রবেশ করে কোলাজেন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। তাতে ত্বকের টান টান ভাব বজায় থাকে।’’
কী ভাবে ব্যবহার করতে পারেন?
১। ঘি ত্বকের উপরে ব্যবহার করা যেতে পারে নানা ভাবে। মধুর সঙ্গে ঘি মিশিয়ে মুখে ফেসপ্যাক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। মুখের ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে ওই ফেস প্যাক।
২। ত্বকে র্যাশ বা কালসিটের উপরে ঘি লাগালে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। ত্বক সুস্থ হয় দ্রুত।
৩। ঘিকে রাতে শোওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজ়ার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪। ঘিয়ের সঙ্গে চিনি, লেবুর রস, হলুদ এবং বেকিং সোডা মিশিয়ে মুখে মাখলে ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।