শাড়ি কেনাকাটার জন্য গড়িয়াহাট বাজারের কোনও তুলনা নেই। নিজস্ব চিত্র
পুজো আসতে আর দিন দশেকও বাকি নেই। প্রস্তুতি একেবারে শেষের পথে। দু’বছর পর বাঙালি দুর্গাপুজোর জন্য মন খুলে কেনাকাটা করার সুযোগ পেয়েছে। তাই কেনাকাটায় কোনও আপস করতে রাজি নন কেউই। অনলাইনে টুকিটাকি কেনাকাটা সারলেও বাজারে গিয়ে দশটা দোকান ঘুরে পোশাক বাছাই করতে না পারলে পুজোর কেনাকাটা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
তবে করোনার দৌলতে পকেটের অবস্থা খুব একটা ভাল নেই মধ্যবিত্তের। বুঝেশুনে খরচ না করলেই নয়! পকেটে যতই টান পড়ুক না কেন, পুজোর কেনাকাটা তো সারতেই হবে। যাঁদের শাড়ির কেনাকাটা এখনও শেষ হয়নি, তাঁরা কোথায় যাবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন? একটি-দু’টি নয়, নিজের শাড়ির পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের জন্যও কিনতে হবে পুজোর উপহার। কম দামে ভাল শাড়ির খোঁজ কোথায় পাবেন! আপনার মুশকিল আসান করতে আনন্দবাজার অনলাইন ঢুঁ মারল গড়িয়াহাটের অলিগলিতে।
গত দু’বছরের তুলনায় এ বছর পুজোর বাজার বেশ ভালই চলছে গড়িয়াহাটে। নিজস্ব চিত্র
শাড়ি কেনাকাটার জন্য গড়িয়াহাট বাজারের কোনও তুলনা নেই। সিল্ক থেকে তাঁত, শিফন থেকে জামদানি, পাবেন নানা ধরনের শাড়ির সম্ভার। গড়িয়াহাট ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার ধারে চোখে পড়ল এক শাড়ির দোকানে। ঢাকাই জামদানি থেকে তসর, কী নেই সেই দোকানে! দাম জিজ্ঞাসা করতেই চক্ষু চড়কগাছ! সফ্ট ঢাকাই শাড়ি যা বড় দোকানে ১,১০০-১,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এখানে তার দাম ৮০০ টাকা! দরদাম করলে ৬০০-তেও মিলে যেতে পারে সফ্ট ঢাকাই। ভাবছেন, শাড়ির গুণমান আদৌ ভাল হবে তো? দাম অনুযায়ী শাড়িগুলির গুণমান বেশ ভাল। উপহার হিসাবে হোক কিংবা নিজের সপ্তমীর সাজ— স্বল্প দামে গড়িয়াহাটের ফুটেই পেয়ে যাবেন নানা ধরনের শাড়ি। খাদি থেকে ভাগলপুরি, তসর থেকে বেনারসি, গড়িয়াহাটের ফুটের দোকানগুলিতেও পাবেন হাজার রকমের শাড়ির সম্ভার!
এ বছর কেমন বাজার চলছে গড়িয়াগাটের ফুটপাথের দোকানগুলিতে?
মোড়ের কাছেই ‘ইউনিক কালেকশন’। সেখানকার কর্ণধার রাজু সাহা বললেন, ‘‘গত দু’বছরের তুলনায় এ বছর পুজোর বাজার বেশ ভালই চলছে। বৃষ্টিবাদলের জন্য খানিকটা সমস্যা হলেও মোটের উপর বাজারের অবস্থা মন্দ না। এই বছর অল্প বাজেটেই কেনাকাটা সারছেন মানুষজন। এ বছর ঢাকাই, ফ্যান্সি কাতান, হাকোবা, লিনেন ও অরগ্যাঞ্জা শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে। গরমে খুব বেশি ভারী শাড়ি পরতে চাইছেন না কেউই। তাই মহিলারা কম দামে হালকা শাড়ির খোঁজ করছেন বেশি। ৫০০ থেকে ১,২০০ টাকার মধ্যেই শাড়ি দেখতে চাইছেন লোকেরা।’’
স্বল্প দামে গড়িয়াহাটের ফুটেই পেয়ে যাবেন নানা ধরনের শাড়ি। নিজস্ব চিত্র
অনেকেই এমন আছেন যাঁরা, বরাবর বড় বুটিক থেকেই শাড়ি কিনতে পছন্দ করেন। তাঁদের দাবি বুটিকে একটু অন্য ধাঁচের শাড়ির সম্ভার মেলে। তবে এই বছর গড়িয়াহাটের ফুটের শাড়ির দোকানগুলিতেও দেখা মিলল বুটিক ধাঁচের শাড়ি। হাকোবা সঙ্গে কলমকরি, ফ্যান্সি সিল্কের উপর ডিজিটাল প্রিন্ট কিংবা ভাগলপুরির উপর কপার জড়ির কারুকাজ একটু গড়িয়াহাট ঘুরে দেখলেই পেয়ে যাবেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হল দাম একেবারে সাধ্যের নাগালে।
গড়িয়াহাটে এ বছর শাড়ির বৈচিত্র চোখে পড়ার মতো। নিজস্ব চিত্র
শাড়ির গুণমান কেমন?
স্কুলশিক্ষিকা রেবিকা সরকার আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘এ বছর ফুটপাথে এত ভাল শাড়ির সম্ভার দেখে চমকে গিয়েছি। বরাবর বড় শাড়ির দোকান থেকে কেনাকাটা করে এসেছি। তবে এ বছর বেশ কয়েকটি শাড়ি কিনে নিলাম ফুট থেকেই। শাড়ির মান বেশ ভাল। আর যে দামে শাড়িগুলি পাচ্ছি, তা সত্যিই ভাবা যায় না।’’ আর এক ক্রেতা রেণু দত্ত জানান, বেশির ভাগ সময়ে তিনি কম চেনা দোকান থেকেই শাড়ি কেনেন। এ বারও দেখলেন, এখানকার সম্ভার ভাল। বললেন, ‘‘প্রতি বছর আমি গড়িয়াহাট থেকেই শাড়ি কিনি। বড় দোকানের তুলনায় অনেক কম দামে ভাল শাড়ি পেয়ে যাই এখানে। তবে এ বছর শাড়ির বৈচিত্র চোখে পড়ার মতো।’’
পকেটের কথা মাথায় রেখে শাড়ি কিনতে হলে ঢুঁ মারতেই পারেন গড়িয়াহাটের ফুটের দোকানগুলিতে। সস্তায় ভাল শাড়ির সম্ভার আপনাকে নিরাশ করবে না।