পুজো মানেই কি সাবেকিয়ানা?
মেয়েদের সাজগোজ নিয়ে যতটা চর্চা হয়, পুরুষরা সেখানে খানিক ব্রাত্যই বলা চলে। ছেলেদের পুজোর সাজ মানেই নতুন কিছু টি-শার্ট আর ডেনিম। খুব বড়জোর পায়জামা-পাঞ্জাবি। বন্ধু, প্রেমিক, স্বামী, বাবা, কিংবা পাশের বাড়ির ছেলেটিকে সারা বছর যে ধরনের পোশাকে দেখতে পান, পুজোর সময়েও তাতে খুব একটা বদল ঘটে না। ষষ্ঠী থেকে দশমী— পুজোর দিনগুলি অনেকেই সারা বছরের একঘেয়েমি কাটাতে অন্য রকমের বিকল্প হিসাবে ভরসা রাখেন পাঞ্জাবিতে। পুজো মানেই পাঞ্জাবি— এই ধারণা থেকে বেরোনো প্রয়োজন।
পুজোর সাজ বলে কথা। নতুনত্ব থাকা চাই। পুজোর ভিড়ে কি শুধু নজর কাড়বেন মহিলারা? উৎসবের আবহে সাজগোজে ছেলেরা কেন পিছিয়ে থাকবেন? বরং পাল্লা দেবেন মেয়েদের সঙ্গে। কঠিন কোনও ব্যাপার নয়। শুধু পোশাক নির্বাচনের সময়ে সতর্ক থাকলেই হবে। পুজোয় কেমন করে সাজলে সকলের মধ্যমণি হয়ে উঠবেন, তার হদিস দিলেন অভিনেতা নাইজেল আকারা।
অনেক দিন ধরে উৎসব চলার একটি সুবিধা রয়েছে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নানা ধরনের পোশাক পরা যায়। এক দিন সাবেকি, তো অন্য দিন পশ্চিমী। সপ্তমীর সন্ধ্যার জন্য নাইজেল বেছে নিয়েছেন একটি হালকা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি। সঙ্গে সাদা পায়জামা। সপ্তমীর পাঞ্জাবিতে রয়েছে উৎসবের ছোঁয়াও।
সপ্তমীর সাজে রয়েছে সাবেক ছোঁয়া।
দূর থেকে এক রঙা পাঞ্জাবি বলে মনে হলেও আসলে তা নয়। পাঞ্জাবির গায়ে নীল এবং গোলাপি রঙের ছোট ছোট নকশা করা। গলার কাজটি একটু অন্য রকম। সাবেকি পোশাকে যেন আধুনিকতার স্পর্শ রয়েছে।
সাধারণ পাঞ্জাবিতেও নজরকাড়ছেন অভিনেতা।
পাঞ্জাবিকে যদি একটু অন্য ভাবে পরা যায়, তা হলে কিন্তু সকলের চেয়ে আলাদা লাগতে বাধ্য। নাইজেল দক্ষতার সঙ্গে সেটি করেছেন। অভিনেতার চুলের কায়দাই সে কথা বলছে।
সপ্তমীর সাজে তৈরি নাইজেল।
অষ্টমীর অঞ্জলিতে থাকুক সাবেক ছোঁয়া। পুজোর বাকি দিনগুলি রকমারি পোশাকে নিজেকে সাজালেও অঞ্জলি দেওয়ার সময় সাবেক সাজই পছন্দ করেন অনেকে। নাইজেলও তার ব্যতিক্রম নন। অষ্টমীর সকালের সাজের জন্য নাইজেল তাই বেছে নিয়েছেন লাল পেড়ে ধুতি আর সাদা পাঞ্জাবি।
অষ্টমীর সাজে রয়েছে সাদা-লালের কারিকুরি।
পাঞ্জাবির গায়ে লাল দিয়ে নানা নকশা আঁকা। পাঞ্জাবির সঙ্গে মানানসই করে ধুতিতেও একই ধরনের কাজ করা। সঙ্গে কোলাপুরি জুতো। অষ্টমীর সকালে এমন জমাটি সাজ না হলে চলে?
ধুতি-পাঞ্জাবিতে দারুণ মানিয়েছে অভিনেতাকে।
অঞ্জলি দেওয়ার পর অনেকেরই নানা ধরনের পরিকল্পনা থাকে। অনেকেই বন্ধুর বাড়ি যান। কেউ আবার প্রেমিকার হাত ধরে উৎসবের ভিড়ে হারিয়ে যান। যেখানেই যান, অষ্টমীর দিন এমন সাবেকি সাজে নিঃসন্দেহে সকলের মধ্যমণি হয়ে উঠবেন।
প্রিয়জনের মন কাড়তে এমন সাজ যথেষ্ট।
সারা বছর বাঙালি প্রহর গোনে শারদোৎসবের। অষ্টমীর রাত তেমনই প্রতীক্ষিত সময়। উৎসবের আমেজ সে দিন যেন মধ্য গগনে। সাজগোজও হওয়া চাই অন্য রকম। অষ্টমীর রাতে নাইজেলের পছন্দ নীলরঙা গলাবন্ধ একটি শেরওয়ানি। সঙ্গে ঘিয়ে রঙের চুড়ি প্যান্ট।
অষ্টমীর সন্ধ্যায় জমকালো সাজে অভিনেতা।
নাইজেলের মতো অনেকেই বড় চুল রাখতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে শেরওয়ানি সঙ্গে কেশসজ্জাও কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শার্ট কিংবা টি-শার্টের সঙ্গে যেমন পনিটেল করে বেরিয়ে পড়েন, এ ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা মানাবে না। জমকালো কোনও পাঞ্জাবি হোক বা শেরওয়ানির সাজ, তার সঙ্গে কাঁধের উপর এক গোছা চুল এসে পড়লে যে মন্দ হয় না, তা-ই দেখালেন অভিনেতা।
শেরওয়ানির সঙ্গে কেশসজ্জাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
বিয়েবা়ড়ি বা পারিবারিক কোনও উৎসব-অনুষ্ঠান ছাড়া শেরওয়ানি পরার চল এখন অনেকটা কমে এসেছে। কিন্তু পুজোর কথা আলাদা। ভিড়ের মাঝে নিজেকে আলাদা করে চেনাতে ঝলমলে পোশাক না পরলে চলে না। তাই অষ্টমীর রাতে নিজেকে আলাদা করে চেনাতে পরতে পারেন এমন একটি শেরওয়ানি।
নাইজেলের পোশাকে যেন উৎসবের আঁচ।
নবমী নিশির জন্য নাইজেল বেছে নিয়েছেন একেবারে অন্য ধারার একটি পোশাক। ছিমছাম কিন্তু সপ্রতিভ। সাদা শার্টের সঙ্গে কালো জ্যাকেট। বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তরাঁ হোক কিংবা নাইট ক্লাব, এ সাজ মানানসই।
অন্য ধারার সাজে অভিনেতা।
এমন কেতাদুরস্ত পোশাকের সঙ্গে আনুষঙ্গিক সাজগোজেও থাকা চাই আধুনিকতার ছোঁয়া। নাইজেল পাঁচ আঙুলে পরেছেন এক বিশেষ ধরনের আংটি।
হাতের আংটি কিন্তু শান দিচ্ছে নাইজেলের ধারালো লুকে।
আংটির দিকে আগে চোখ যাবে নাকি চুলে? এমন ভাবে চুল বাঁধা বেশ সময় সাপেক্ষ কাজ। কিন্তু এক বার ঠিক ঠাক করে বেঁধে ফেলতে পারলে সাজে আর কোনও কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। অলঙ্কার থেকে জুতো, সবই সেখানে কম প্রয়োজনীয়।
ছিমছাম কিন্তু স্মার্ট।
সাবেকি,পশ্চিমী কিংবা ইন্দো-ওয়েস্টার্ন— আপনাকে কোন ধরনের পোশাকে মানাচ্ছে তা আপনিই ভাল বুঝবেন। স্বচ্ছন্দের কথাটাও কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না। ওটা সবচেয়ে জরুরি। পুজোর সাজে থাকুক উৎসবের ছোঁয়া। তবে যেকোনও পোশাক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্যারি করতে পারাটাই আসল। ভিড়ের মাঝে মধ্যমণি হয়ে উঠতে সেটাই যথেষ্ট।
ছবি: শুভদীপ ধর
মেক আপ: সৌরভ দাস
স্টাইলিং: নীল এবং সুদীপ
পোশাক সৌজন্যে: হমসফর
স্থান সৌজন্যে: হার্ড রক কাফে