—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অহেতুক দুশ্চিন্তা নয়, বরং সচেতনতা ও চিকিৎসক-রোগীর নিবিড় সম্পর্কই বড় হাতিয়ার হয়ে উঠুক ‘লুপাস’-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। শুক্রবার এমনই বার্তা দিলেন শহরের একাধিক রিউম্যাটোলজিস্ট ও স্ত্রীরোগ চিকিৎসক। যাঁরা স্পষ্ট জানালেন, বছর ২০ আগেও ‘সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমেটোসাস’ বা লুপাস রোগে মৃত্যুর হার ছিল ৫০ শতাংশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে তা নেমে এসেছে আট-নয় শতাংশে।
এ দিন বিশ্ব লুপাস দিবস উপলক্ষে শহরের একটি সভাগৃহে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ওই অসুখ নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের সম্পাদক ও আহ্বায়ক, রিউম্যাটোলজিস্ট অলোকেন্দু ঘোষ বললেন, ‘‘মারাত্মক এই অসুখ কিন্তু সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তার জন্য আরও বেশি মাত্রায় সচেতনতা ও রোগী-চিকিৎসকের নিবিড় সম্পর্ক প্রয়োজন।’’ তিনি জানাচ্ছেন, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ০.০৩ শতাংশ লুপাসে আক্রান্ত। যার সিংহভাগই মহিলা। অর্থাৎ, ১০ জন রোগীর মধ্যে ন’জনই মহিলা। আর এই ‘অটোইমিউন ডিজ়িজ়’ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পাশাপাশি প্রভাব ফেলে মহিলাদের প্রজননতন্ত্রেও।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুভাষ বিশ্বাস জানালেন, ১০ বছর আগে এই রোগে আক্রান্ত মহিলাদের মাত্র ৫০ শতাংশের গর্ভধারণ সম্ভব হত। কিন্তু রিউম্যাটোলজি ও স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের মিলিত প্রচেষ্টায় সেই হার ক্রমশ বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে তা ছিল ৬০ শতাংশ। আর এখন প্রায় ৮৭ শতাংশ লুপাস রোগী গর্ভধারণ করছেন। সুভাষ বলেন, ‘‘ঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে ও নিয়ম মেনে চিকিৎসা চললে গর্ভধারণে কোনও সমস্যাই নেই।’’ লুপাসে আক্রান্ত অনেক মহিলাই এ দিন তাঁদের সন্তানদের নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। যেমন, ২০০৭ সালে লুপাস ধরা পড়েছিল এমবিবিএসের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী দেবযানী ভট্টাচার্যের। তখন থেকেই চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। দু’বছর পরে তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে এন আর এস হাসপাতালের চিকিৎসক দেবযানী এ দিন ছেলেকে নিয়েই এসেছিলেন অনুষ্ঠানে।
গর্ভস্থ ভ্রূণের শরীরেও মায়ের থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে। তবে, সেই সম্ভাবনা মাত্র দু’শতাংশ বলে জানান অলোকেন্দু। বলেন, ‘‘গর্ভস্থ শিশুর মধ্যেও যদি ওই অসুখ থাকে, তা হলে জন্মের পরেই চিকিৎসা শুরু হলে শিশুটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।’’ এর জন্য পেডিয়াট্রিক রিউম্যাটোলজিস্ট রয়েছেন। এ দিন ওই আলোচনাসভায় চিকিৎসার মাধ্যমে লুপাস নিয়ন্ত্রণে আছে, এমন তরুণী ও মহিলারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন। প্রয়োজনে তাঁদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর হতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন, উপস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন শিল্পমন্দিরের প্রশাসনিক প্রধান স্বামী বেদাতীতানন্দও।