মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মনো-সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়।
সম্প্রতি সমকামিতা নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন। তার পর থেকে মনে হচ্ছে যেন সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট তিনি। ঘর ভরা অপরিচিতের মাঝে অকপট চল্লিশ পেরনো এক মা।
পরিবারে মানসিক রোগ, আত্মহত্যার ইতিহাস আছে। বংশানুক্রমে চলছে অবসাদ, মানসিক অসুখ। কিন্তু এমন সমস্যা কি সত্যিই বংশগত হতে পারে? প্রশ্ন গেল মনোবিদদের কাছে। অনুষ্ঠান লাইভ হচ্ছে নেটমাধ্যমে। তবু অস্বস্তির লেশমাত্র নেই কোথাও।
লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে নানা কথা বলা হয়েই থাকে। তবে পরিবারের অন্দরে যে বৈষম্যের টানাপড়েন প্রতিনিয়ত চলে, তা বলা কি সহজ? নিজের বাবা-মায়ের প্রসঙ্গ তুলে সে কথাও বললেন এক কন্যা। পরামর্শ চাইলেন উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের কাছে।
এক ছাদের তলায় এমন নানা বিষয় নিয়ে হল খোলাখুলি আলোচনা। বৃহস্পতিবার, শহরের এক হোটেলে বসেছিল সভা। শহর ও আশপাশের নানা অঞ্চলের মানুষ যোগ দিয়েছিলেন সেখানে। মঞ্চে ছিলেন দুই নারী। মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মনো-সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। তাঁদের কাছে যাচ্ছিল একের পর এক খোলামেলা প্রশ্ন।
মনোবিদের কাছে একান্তে নিজের সমস্যা খুলে বলা এক কথা। আর এক ঘর পরিচিত-অপরিচিতের মাঝে ব্যক্তিগত অস্বস্তি উজাড় করে দেওয়া আর এক। ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী সমারোহ’ দেখাল রোজের জীবনে যে সব বিষয়ে হোঁচট খেতে হয়, সে সব অস্বস্তি কাটিয়েও ওঠা যায়। জনসমক্ষে আলোচনা করা যায় তা নিয়ে।
রত্নাবলী ও অনুত্তমা।
এক বছর ধরে চলছে ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’। নেটমাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার হয় এই আলোচনাসভা। নানা প্রান্তের মানুষ হাজির হন নিজেদের প্রশ্ন নিয়ে। জীবনের নানা মোড়ে যে সব বিষয় সঙ্কটের মুখে দাঁড় করাতে পারে, সেগুলিই হয়ে
ওঠে ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনাসভার বিষয়। কখনও আত্মহত্যা, তো কখনও নার্সিসিজম, বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। অকপট প্রশ্নও আসে।
কিন্তু সে তো গেল নেটমাধ্যমের প্রোফাইল থেকে লিখে প্রশ্ন করার কথা। আর সেই অনুষ্ঠান যখন মুখোমুখি আলোচনার সুযোগ করে দিচ্ছে, তখন উপচে পড়ল যোগ দেওয়ার আবেদন। জনসমক্ষে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করলেন নিশ্চিন্তে। সাক্ষী ও সখী হয়ে থাকল যেন ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’র মঞ্চ। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠান এক অর্থে বোঝাল, একটি আরামের জায়গা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন অনুত্তমা, রত্নাবলী। সমষ্টিগত ভাবে সামাজিক অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠার একটি সমারোহ হয়ে উঠেছে যেন।
অনুত্তমাও উপলব্ধি করেছেন বিষয়টি। নেটমাধ্যমে শুক্রবার তিনি লিখেছেন, ‘কাল টের পেলাম ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’আসলে একটা ঘর। একটা এমন পরিসর যেখানে মানুষ সব দ্বিধা, লজ্জা, আড়াল অনায়াসে খুলে ফেলতে পারছেন।’
দ্বিধা কাটিয়ে এগিয়ে চলার এই পরিসরে অনুত্তমা-রত্নাবলীর উৎসাহে ঢুকে পড়বে আরও নতুন প্রসঙ্গ। দ্বন্দ্ব পেরিয়ে বড় হবে পরিধি। সমারোহ সেই আশ্বাসই দিল।