—প্রতীকী চিত্র।
এক জন মানুষ কোনও শারীরিক সমস্যার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা যত সহজে বলতে পারেন, মনোরোগ চিকিৎসক বা মনোবিদের কাছে যেতে হলে তাঁদের ঠিক উল্টোটা হয়। সেখানে যেতে কিংবা যাওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলতেও অনেকে দ্বিধা বোধ করেন। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এই জায়গাতেই পরিবর্তনের কথা বলছেন চিকিৎসকেরা।
মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি স্তরে বহু জায়গাতেই আয়োজন করা হয়েছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ বারের থিম ছিল, ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার’। সেই সূত্র ধরেই সমস্ত দ্বিধা সরিয়ে নিজের এবং অন্যের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথাই এ দিন এক অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মানসিক স্বাস্থ্যের উপদেষ্টা ও মনোরোগ চিকিৎসক প্রদীপ সাহা।
যোধপুর পার্কে মানসিক রোগের চিকিৎসার একটি বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত সম্মেলনে প্রদীপ জানান, করোনা-পরবর্তী বিশ্বের সব থেকে বড় অতিমারি এখন মানসিক অবসাদ। করোনার আগে বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে এক জন আত্মহত্যা করতেন। এখন সেই সময়ের ব্যবধান কমে হয়েছে ৩৪ সেকেন্ড। প্রদীপ বলেন, ‘‘মানসিক অবসাদ দূর করতে সর্বাগ্রে মানুষকে বিষয়টি সম্পর্কে আরও সচেতন করতে হবে। অবসাদ হলে শুধু মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে নয়, যে কোনও চিকিৎসকের কাছেই যাওয়া যেতে পারে।’’ মনকে সুস্থ রাখা এবং সেই সম্পর্কে সচেতন হওয়ার অধিকার সকলের রয়েছে বলে জানান ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’ (আইওপি)-র অধিকর্তা অমিত ভট্টাচার্য। তিনি জানান, এসএসকেএমের ওই ইনস্টিটিউটেও এ দিন আয়োজন করা হয়েছিল অনুষ্ঠানের। যেখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের তৈরি হাতের কাজও প্রদর্শিত হয়।
মানসিক রোগী মানেই তিনি অবহেলার পাত্র কিংবা তাঁকে গোপন করে রাখার মানসিকতা দূর করার কথাও এ দিন উঠে আসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের আলোচনায়। বাড়িতে মানসিক রোগীর কী ভাবে পরিচর্যা করতে হবে, তা-ও তুলে ধরেন প্রদীপেরা। তাঁরা জানান, দেশে মাত্র ৯-১০ হাজার মনোরোগ চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু মনোরোগীর সংখ্যা ও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। তাই রোগীর পরিবারকে সচেতন হতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর প্রতি তাঁর পরিবারের অবজ্ঞা ও অবহেলার কথাই ফিরে ফিরে আসে এ দিনের বিভিন্ন আলোচনায়।
সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এ দিন এসএসকেএমের আইওপি-র তরফে এক পদযাত্রা হয়। নার্স ও পড়ুয়া-চিকিৎসকেরা বিভিন্ন পথনাটিকার মাধ্যমে সচেতনতার কথা তুলে ধরেন। কারণ, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মানসিক অবসাদ বড় রোগের কারণ হয় অনেক সময়ে। যেমন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটি হল দীর্ঘ দিনের অবসাদ। এ দিন যোধপুর পার্কের অনুষ্ঠানে প্রদীপ বলেন, ‘‘এ দেশে মানসিক অবসাদকে অসুখ বলে মানা হয় না। কারণ, আমরা বিষয়টি নিয়ে সচেতনই নই। কিন্তু বিদেশে তেমনটি নয়।’’
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিন্ রাজ্যের মনোরোগ চিকিৎসক নীলেশ শাহ, টি এস এস রাও, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু, প্রাক্তন ডিন দীপঙ্কর ঘোষ-সহ আরও অনেকে।