আক্কেল দাঁত এবং তার কারণে ব্যথা—চেনা মহলে এমন কথা প্রায়শই শোনা যায়। আক্কেল দাঁতের সমস্যা কি গুরুতর? দাঁতের অন্য সমস্যার সঙ্গে এর কি সম্পর্ক রয়েছে? আক্কেল দাঁত নিয়ে ভয় না থাকলেও, সজাগ না হলে সংক্রমণ হতে পারে।
আক্কেল দাঁত কী?
দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পারমিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমাদের যে মোলার দাঁতগুলো থাকে, তার শেষ মোলার হল আক্কেল দাঁত বা উইসডম টুথ।’’ মোলার দাঁতগুলি সবচেয়ে বড় আকারের দাঁত। খাবারের মণ্ডকে পিষে খাবার গিলতে সাহায্য করে মোলার দাঁতগুলি।
সাধারণত আঠেরো বছর বয়সের পরে আক্কেল দাঁত গজায়। তবে ডা. গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, সময়ের সঙ্গে গ্রোথ প্যাটার্ন বদলে যাওয়ায়, ষোলো-সতেরো বছরেও এখন এই দাঁত হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দোরগোড়ায় এমন দাঁতের জন্ম, যার অভিজ্ঞতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুখকর নয়। তাই এমন দাঁতের নাম রাখা হয়েছে আক্কেল দাঁত বা উইসডম টুথ।
আক্কেল দাঁত কি সকলের হবে?
ডা.গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, আক্কেল দাঁত সকলের হয় না। অনেকের হলেও ব্যথার উপসর্গ থাকে না। কিন্তু কেন হয় আক্কেল দাঁত? বিবর্তনের কারণে সাধারণত আক্কেল দাঁত বেরোনোর জায়গা থাকে না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নীচের দাঁত পুরোপুরি না গজালেও, উপরের দাঁত বেরিয়ে যায়। নীচের আক্কেল দাঁত বেঁকা ভাবে গজালে, তা পাশের মোলার দাঁত নষ্ট করে দিতে পারে।
উপসর্গ
ব্যথার সঙ্গে আরও কয়েকটি সমস্যা—মুখ হাঁ করতে সমস্যা, মুখ ফুলে যাওয়া, খাবার খেতে-গিলতে সমস্যা।
আক্কেল দাঁত তুলে ফেলাই কি সমাধান?
ডা. গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, অনেকের ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত হওয়ার যে ব্যথা, সেটা এককালীন। অর্থাৎ এক বার ব্যথা হওয়ার পরে আর কোনও সমস্যাই হল না। তাঁদের ক্ষেত্রে যদি পাশের দাঁতে কোনও সমস্যা না হয়, তা হলে আক্কেল দাঁত তোলা হয় না।
মুখের ভিতরে এক্স রে করতে গিয়ে আবিষ্কার হল, কারও আক্কেল দাঁত রয়েছে। কিন্তু সেটার অবস্থান এমনই যে, হয়তো কখনও সমস্যা তৈরি করবে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে এমন ভাবে আক্কেল দাঁত বেরোয় যে, গালে ঘষা লাগে। একে বলা হয় বাক্কোভার্টেড উইসডম টুথ। এ ক্ষেত্রে হয়তো সরাসরি ব্যথা হচ্ছে না। তবে আক্কেল দাঁতের কারণে মুখের ভিতরে আলসার বা ওই দাঁত সংলগ্ন টিসুতে সমস্যা তৈরি হয়। তখন দাঁত তুলে ফেলা সমীচীন। আক্কেল দাঁত তির্যক ভাবে বেরোলে, দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে যেতে পারে। এতে আক্কেল দাঁত ও তার পাশের দাঁতে ক্যাভিটি হতে পারে।
বাড়িতে যত্ন
* আক্কেল দাঁতের ব্যথায় বা মুখ ফুললে বাইরে থেকে সেঁক দেওয়া একেবারে বারণ।
* হালকা গরম জলে মুখ ধুতে পারেন। দাঁতের ওই জায়গা পরিষ্কার রাখতে পারেন। ব্যথার সময়ে নরম খাবার খেতে পারেন।
* ব্যথা বাড়াবাড়ি হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন। অনেক ক্ষেত্রে মাসল স্প্যাজ়ম হতে পারে এর কারণে। সংক্রমণও হতে পারে আক্কেল দাঁতের কারণে।