Brain Development

মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত করছে কম আর্সেনিকও, বলছে গবেষণা

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর একটি সংস্থা, ‘সেন্টার ফর এজিং অ্যান্ড মেন্টাল হেল্থ’। জনগণের মধ্যে বার্ধক্য, মানসিক রোগ এবং তার প্রতিকার খোঁজাই লক্ষ্য সংস্থাটির।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৬:৫৫
Share:

কম মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতিও প্রভাব ফেলছে মস্তিষ্কের বিকাশে। প্রতীকী ছবি।

প্রতি লিটার জলে আর্সেনিকের মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রামের কম হলে তা বিপদসীমার নীচে। এমনটাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠি। কিন্তু সেই পরিমাণও আর নিরাপদ নয়। সদ্য প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে সেই তথ্য। তাতে দেখা গিয়েছে, কম মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতিও প্রভাব ফেলছে মস্তিষ্কের বিকাশে। যার জেরে আসতে পারে ‘কগনিটিভ’ (জ্ঞানবুদ্ধি) বৈকল্য। যা ভবিষ্যৎ মানসিক রোগের প্রেক্ষাপটেরও আভাস দিচ্ছে।

Advertisement

এই গবেষণা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, তবে কি আর্সেনিকের মাপকাঠির পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পুনর্মূল্যায়ন করে এক সময়ে শরীরে সীসার ন্যূনতম উপস্থিতি সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছিল। সেই ভাবনাই কি ভাবা উচিত আর্সেনিকের ক্ষেত্রে? তবে, এই কাজ অনেক কঠিন। কারণ, ভাত, গম, মুরগি ও মাছের মতো দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমে আর্সেনিক ছড়িয়ে পড়ছে কম আর্সেনিকপ্রবণ এলাকার মানুষের শরীরেও। সুতরাং, খাদ্যাভ্যাসেরও বড় ভূমিকা থাকছে এতে।

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর একটি সংস্থা, ‘সেন্টার ফর এজিং অ্যান্ড মেন্টাল হেল্থ’। জনগণের মধ্যে বার্ধক্য, মানসিক রোগ এবং তার প্রতিকার খোঁজাই লক্ষ্য সংস্থাটির। ওই সংস্থা এবং বেঙ্গালুরুর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স’ (নিমহ্যান্স) মূল তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি হয়েছে। গবেষণায় আর্থিক সাহায্য করেছে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ এবং ব্রিটেনের ‘মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল’।

Advertisement

মানসিক রোগের সূচনা হয় শিশু গর্ভে থাকাকালীনই। পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই কার্যত নির্ধারিত হয়ে যায় বড় হয়ে তার মানসিক গঠন কেমন হবে। তবে, মানসিক গঠনকে প্রভাবিত করে দু’টি বিষয়। এক, জিনগত এবং দুই, পরিবেশগত। এ ক্ষেত্রে জিনগত গবেষণার কাজটি করেছে নিমহ্যান্স। পরিবেশগত গবেষণা চালিয়েছে সেন্টার ফর এজিং অ্যান্ড মেন্টাল হেল্থ। দেশ জুড়ে আর্সেনিকপ্রবণ নয়, এমন এলাকার ৯০১০ জন, ছয় থেকে তেইশ বছর বয়সি সুস্থ শিশু, কিশোর ও কমবয়সির উপরে সমীক্ষা চলে। দক্ষিণ ভারতে বেঙ্গালুরু ও অন্ধ্রপ্রদেশের একটি গ্রামে, উত্তর ভারতের চণ্ডীগড়ে, পূর্ব ভারতের আসানসোল ও রানিগঞ্জের কয়লাখনি এলাকার শ্রমিক পরিবারে এবং উত্তর-পূর্বে ইম্ফলে সমীক্ষাটি হয় ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৫০০ জনের উপরে এই গবেষণা চলে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে গবেষণার ভিত্তিতে পরবর্তীকালে মিলেছে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

সেন্টার ফর এজিং অ্যান্ড মেন্টাল হেল্থ-এর অধিকর্তা, জনস্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসক অমিত চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, তাঁদের সংস্থার গবেষণার একটি উদ্দেশ্যই ছিল মস্তিষ্কের উপরে আর্সেনিকের প্রভাব খুঁজে বার করা। মানসিক গঠনে তার কতটা প্রভাব, তা জানতে বিশেষ ধরনের এমআরআই করা হয়েছিল।

ইম্ফল ছাড়া নির্বাচিত বাকি এলাকার ১০০০ জনের এমআরআই হয়। প্রসঙ্গত, এঁদের প্রত্যেকের মূত্রে আর্সেনিকের উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত পরিমাণের থেকে কম। এই এমআরআই মূলত দু’ভাগে হয়। একটি মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম গঠন বা কাঠামোকে চিহ্নিত করে। অন্যটি, এফ এমআরআই, অর্থাৎ, ফাংশনাল এমআরআই। যার মাধ্যমে দেখা হয়েছে, মস্তিষ্ক এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের সংযোগ কী ভাবে স্থাপন করছে, কী ভাবেসঙ্কেত পাঠাচ্ছে। দেখা গিয়েছে, আর্সেনিকের প্রভাবে মস্তিষ্কের ধূসর অংশ বা গ্রে ম্যাটারের গঠনে পরিবর্তন হচ্ছে। এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের সংযোগ স্থাপনেও বিঘ্ন ঘটছে। সিদ্ধান্তমূলক কাজ, বুদ্ধি, স্মৃতি, শিক্ষা— মস্তিষ্কের প্রভৃতি কাজেও প্রভাব পড়ছে। এতে অনুঘটকের কাজ করেছে নিম্ন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও অপুষ্টি।

অমিত বলেন, ‘‘এই গবেষণায় উঠে আসছে এক অজানা দিক। শিশুর মস্তিষ্কের গঠনজনিত ত্রুটি থেকে ভবিষ্যতে যে মানসিক রোগ হতে পারে, তার চিকিৎসা ও প্রতিকারের নতুন দিক খুলতে সাহায্য করবে এই গবেষণা। কারণ, মস্তিষ্কের গঠন ও বিকাশের ত্রুটিতে শুধু জিনইনয়, পরিবেশ দূষণকারী বিভিন্ন উপাদানও দায়ী। সেটাই জানা যাচ্ছে গবেষণায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement