সেরার সেরা তনুকা চৌধুরী। ফাইল ছবি।
বাংলার দুই পার যখন মিলে যায় এক পাতে এসে, তখন লড়াই হয় জমজমাট। তবে সে লড়াই স্বাদের, তাই বৈরিতা নেই। এই প্রতিযোগিতারই আয়োজন করেছিল ‘নিউট্রেলা জীবন উৎসব নিবেদিত পত্রিকা এক পাতে দুই বাংলা, পাওয়ার্ড বাই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট’। সহযোগিতায় বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশন, কলকাতা এবং সপ্তপদী রেস্তরাঁ। প্রতিযোগিতার রেডিয়ো পার্টনার ৯১.৯ ফ্রেন্ডস এফএম এবং ডিজিটাল পার্টনার আরও আনন্দ।
প্রায় সাড়ে চারশোরও বেশি এন্ট্রি থেকে বেছে নেওয়া হয়েছিল ১৬০ জনকে। সেখান থেকে দুই পার মিলিয়ে দশজন পৌঁছেছিলেন চূড়ান্ত পর্বে, জানালেন কনসালট্যান্ট শেফ দেবজিৎ মজুমদার। গত ১৩ ও ১৪ মে সিটি সেন্টার টু-এ দেখা গেল ‘এক পাতে দুই বাংলা’র চূড়ান্ত কয়েকটি পর্ব, যেখানে দুই বাংলার নানা নিরামিষ পদ রেঁধে দেখালেন সেমিফাইনালিস্ট, ফাইনালিস্টরা। তাঁদের কেউ হোম শেফ, কেউ হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ছেন কলেজে, কেউ আবার পুরোদস্তুর গৃহবধূ, শখে রান্না করেন। এ পার এবং ও পার বাংলার কিছু সনাতন পদ এবং নিউট্রেলা দিয়ে তৈরি বেশ কিছু চমকপ্রদ রেসিপি দিয়ে বিচারকদের মুগ্ধ করেছেন এ বারের প্রতিযোগীরা।
ও পার বাংলার সেরা রূপশ্রী হালদার।
চূড়ান্ত পর্বের বিচারের দায়িত্বে এ বার ছিলেন শেফ বনফুল বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট তারাতলা, শেফ শিব বিসওয়াল, এগজ়িকিউটিভ শেফ, তাজস্যাটস কলকাতা, কালিনারি কনসালট্যান্ট সুমন্ত চক্রবর্তী, প্রাক্তন কর্পোরেট শেফ, অম্বুজা হসপিটালিটি এবং শেফ জোসেফ গোমস, ডিরেক্টর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট। এই চার বিচারকের তুল্যমূল্য বিচারে এ বছরের প্রতিযোগিতায় সেরার সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বেহালার তনুকা চৌধুরী। ফাইনালিস্টদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বরিষ্ঠ। এ পার বাংলার সেরা রাঁধুনিও তিনিই। অন্য দিকে, ও পার বাংলার সেরা হয়েছেন গতবারের বিজয়ী বেহালা ঠাকুরপুকুরের রূপশ্রী হালদার। রানার্স-আপ হয়েছেন এ পার বাংলা থেকে দীপান্বিতা গোস্বামী এবং ও পার বাংলার গোধূলি দাঁ।
এই প্রতিযোগিতা উপলক্ষে গত সপ্তাহান্তে সিটি সেন্টার টু চত্বর ছিল জমজমাট। প্রতিযোগিতার মঞ্চ ঘিরে ভিড়, মঞ্চের উপরে চলা হাতাখুন্তি নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, মনকাড়া সব খাবারের স্টলের সামনে উপচে পড়া ভিড়... গত শনি ও রবিবারের শপিং মলের দৃশ্য খানিকটা এই রকমই ছিল। এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনও, তাই তাদেরও দু’টি খাবারের স্টল ছিল উৎসবে। মঞ্চের লাইভ রান্না দেখার পাশাপাশি কেউ ‘পিঠেবিলাসী’র ভেটকি পাটিসাপটায় কামড় বসাচ্ছিলেন, কেউ আবার ‘সপ্তপদী’র ভেটকি চিংড়ির কাবাবের স্বাদ নিতে ব্যস্ত ছিলেন। ভিড় ছিল ‘লস্ট অ্যান্ড রেয়ার রেসিপি’র স্টলেও। মুখ চালানোর ফাঁকেই উপস্থিত দর্শক জেনে নিচ্ছিলেন, কী রেসিপিতে বিচারকদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন প্রতিযোগীরা। বিজয়ী তনুকা চৌধুরী যেমন সেঁকা বড়ার ঝোলে-ঝালে, সয়া-ছানার দম পিরিতির মতো রেসিপি দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন বাকিদের চেয়ে। এই প্রথম কোনও রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তনুকা বলছিলেন, কী ভাবে স্বামীর বদলির চাকরির সুবাদে তিনি বিভিন্ন রাজ্যের রান্না তুলে নিয়েছেন নিজের রান্নাঘরে। ‘‘সেমিফাইনাল রাউন্ডে নিউট্রেলা সয়া বাটি পোস্ত ভাপা আর লাউপাতায় মুড়ে শ্যালো ফ্রাই করে সবুজ ছানা ভাজা তৈরি করেছিলাম। বিচারকদের খুশি করতে পেরেছি।’’
ও পার বাংলার রানার্স আপ গোধূলি দাঁ।
স্বাদ না পরিবেশনা? বিচারের সময়ে অগ্রাধিকার পায় কোনটা? শেফ বনফুল বললেন, ‘‘আই ইট ফার্স্ট, কথাতেই আছে। পহলে দর্শনধারী। তবে স্বাদটাও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সব উপকরণ মিশেলের ঠিক আন্দাজ, এটাই রান্নার আসল কথা। এই প্রতিযোগীদের সকলেই প্যাশন থেকে রান্নাটা করেন। ইন্টারনেটের দৌলতে দেশ-বিদেশের বহু আইডিয়া এঁরা রপ্ত করেছেন। আমরা বিচার করতে এসে বরং ওঁদের থেকে অনেক অভিনব আইডিয়া পাই।’’ শেফ শিব বিসওয়ালও জানালেন, যে ভাবে এ বারের প্রতিযোগীরা পড়াশোনা করে এসেছেন, তা মুগ্ধ করেছে তাঁদের। তবে চার বিচারকই একটা ব্যাপারে সহমত— সীমিত উপকরণে, অচেনা রান্নাঘরে নিজেদের সেরাটা বার করে আনার চ্যালেঞ্জ বড় সহজ নয়। আর সেটাই করে দেখিয়েছেন এঁরা।
তবে কমফর্ট জ়োন থেকে বেরোনোই একজন রন্ধনশিল্পীর কাছে স্বাভাবিক, মনে করেন ও পার বাংলার সেরা রাঁধুনি রূপশ্রী হালদার। পেশায় ভূগোলের শিক্ষিকা রূপশ্রী বিচারকদের নম্বর পেয়েছেন পনিরের পুর ভরা পেঁয়াজু আর সয়াবিনের স্টাফিং দেওয়া বাকরখানি তৈরি করে।
প্রতিযোগিতার মঞ্চে এ পার বাংলার রানার্স-আপ দীপান্বিতা গোস্বামী।
পেশাদার নন, শুধুমাত্র প্যাশন থেকে রান্নাবান্না করেন, এমন রন্ধনপটিয়সীদের খুঁজে বার করার জন্যই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। সেই সঙ্গে উদ্যাপন করা দুই বাংলার স্বাদের মেলবন্ধনকেও।