ফাইল চিত্র।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রবণশক্তি কমে আসার বিষয়টি স্বাভাবিক ও খুবই পরিচিত ঘটনা। তবে ইএনটি বিশেষজ্ঞদের নজরে বেশি করে থাকে কমবয়সিদের বধিরতা। অনেক সময়ে তা হতে পারে কনজেনিটাল, অর্থাৎ জন্মগত বধিরতা। আবার প্রাপ্তবয়স্তদের ক্ষেত্রে কিছু কারণে হতে পারে সাডেন
হিয়ারিং লস।
জন্মবধিরতা ও তার নির্ণয়
জেনেটিক কারণে, মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মায়ের কোনও সংক্রমণ হলে, কোনও দুর্ঘটনার কারণে, শিশুদের জন্ডিস বা মেনিনজাইটিসের মতো অসুখ হলে কমবেশি শ্রবণশক্তি চলে যেতে পারে শৈশবে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট এ ক্ষেত্রে পরিচিত চিকিৎসা। খুব ছোট অবস্থায় চিকিৎসা শুরু না হলে একটু বড় হওয়ার পরে শিশুর কথা বলাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এদেরই মূক ও বধির বলা হয়। এর প্রতিরোধে শিশুর জন্মের অব্যবহিত পরেই ইউনিভার্সাল নিয়োনেটাল স্ক্রিনিং সুনিশ্চিত করানোর দাবি করে আসছেন ইএনটি বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার আগেই শিশুর শ্রবণশক্তির পরীক্ষা করানো জরুরি। এই প্রযুক্তির খরচও খুব বেশি নয়।’’
বধিরতার কারণ
অনেক শিশু কথা বলা শুরু করার পরেও আচমকা তাদের শ্রবণশক্তি চলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসা করা একটু সহজ হয়ে যায় বলে জানালেন ডা. দাশগুপ্ত। ‘‘যেহেতু শিশুটি কথা বলতে জানে, তাই শুধুমাত্র শ্রবণশক্তিটুকু তাকে ফিরিয়ে দিলেই সে আর পাঁচজন শিশুর মতোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে সে ক্ষেত্রে।’’
অনেক সময়ে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে (সাধারণত বারো, চোদ্দো কিংবা ষোলো বছর বয়স থেকে) ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ ওষুধ, টক্সিসিটি বা বিষপ্রয়োগ প্রক্রিয়ার ফলেও কানে শোনার ক্ষমতা চলে যেতে পারে। একেই বলে সাডেন সেন্সরি নিউরাল হিয়ারিং লস। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ এক কানে কম শোনা, সঙ্গে ভোঁ-ভোঁ আওয়াজ, মাথা ঘোরার উপসর্গ দেখা দেয়। কারণ, কান শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শোনার ক্ষমতা চলে গেলে সেই ভারসাম্যও বিঘ্নিত হতে পারে।
এ ছাড়া ভাইরাল ইনফেকশন, মাইক্রো স্ট্রোক, কোনও বিরল ব্রেনের অসুখ বা টিউমর, মাথায় আঘাত লাগা বা ট্রমার কারণেও প্রাপ্তবয়স্কদের শোনার ক্ষমতা চলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্টেরয়েডের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবিটিস থাকলে অনেক সময়ে স্টেরয়েড না দিয়ে ইনজেকশনও দেওয়া হয় কানে।
ভরসা যখন হিয়ারিং এড
মাইক্রোফোনের সাহায্যে বাইরের আওয়াজকে রিসিভ করে, তাকে অ্যামপ্লিফাই করে শোনানোই হল হিয়ারিং এডের মূল কাজ। ইদানীং উন্নত মানের ডিজিটাল প্রোগ্রামেবল হিয়ারিং এড পাওয়া যায়। কেউ স্বাভাবিক আওয়াজ শুনতে পেলেও আওয়াজ আস্তে হলে শুনতে পান না। তাঁদের ক্ষেত্রে হিয়ারিং এডের প্রোগ্রাম সে ভাবেই সেট করা সম্ভব। ব্লুটুথ অ্যাডাপ্টেবিলিটি থাকলে ফোনের সঙ্গেও জুড়ে নেওয়া যায়।
শ্রবণশক্তি ৮০-৯০ শতাংশ চলে গেলে ইমপ্লান্টেবল হিয়ারিং এড কানের পিছনে বসিয়ে দেওয়া যায়, তার একটি অংশ অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করিয়ে। বোন কনডাক্টিং হিয়ারিং এড বসানো হয় কানের পিছনে হাড়ের মধ্যে। মিডল ইয়ার ইমপ্লান্ট করা হয়, মধ্যকর্ণের মধ্যে তিনটি ছোট হাড়ের মধ্যে যন্ত্রটি বসিয়ে।
ঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রবণশক্তি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই দুশ্চিন্তা নয়, সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।