Language

মাতৃভাষায় কথা বলতে লজ্জা পেও না

উচ্চশিক্ষা, চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজি জানাটা বাধ্যতামূলক। কথোপকথনের সময় কে কী ভাষায় কথা বলবে, সেটা তার নিজস্ব পছন্দ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০০:০১
Share:

প্রশ্ন: আমি মফস্সল-এর মেয়ে। নামী কলেজে পড়ছি, কলকাতায় ঘর ভাড়া করে থাকি। আমার সমস্যা হল, ছোট শহর থেকে আসার ফলে খুব তাড়াতাড়ি কারও সঙ্গে মিশতে পারি না। বেশি কথা বলি না বলে লোকে ভাবে আমার খুব দম্ভ। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল নম্বর পেয়েছিলাম। ক্লাসে শহরের মেয়েরা আমার সঙ্গে কথাই বলতে চায় না। কথা বলতে গেলে ইংরেজিতে বলে। আমি বাংলায় বললে মুচকি হেসে চলে যায়। আমার খুব খারাপ লাগে। দু’একটা ক্ষেত্রে বেশ অপমানিতও হয়েছি। মা-বাবাকে কথাটা বলতে পারছি না, কারণ তাঁরা অনেক আশা করে আমাকে এখানে পড়তে পাঠিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

Advertisement

উত্তর দিচ্ছেন
পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

তোমার সমস্যার সমাধান দু’ভাবে হতে পারে। প্রথমত, তোমার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে তুমি এক ধরনের হীনম্মন্যতায় ভুগছ। ছোট শহর, ইংরেজি ভাল ভাবে বলতে না-পারা নিয়ে তোমার নিজের খারাপ লাগছে। প্রথমেই এই খারাপ লাগাটাকে মন থেকে মুছে ফেলো। দেখবে এতে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে তোমার সুবিধেই হবে। নিজেকে গুটিয়ে না রেখে মন খুলে মেশো। ছোট শহর থেকে কলকাতায় এসে ঘর ভাড়া করে পড়াশোনা তুমি একা করছ না। খোঁজ করলে দেখতে পাবে, প্রচুর ছেলেমেয়ে বাইরে থেকে এসে এখানে পড়াশোনা করে। অনেকেই ভাল রেজ়াল্ট করে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তোমার আগামী দিনের লক্ষ্য হবে যে সুযোগটা পড়ার ক্ষেত্রে তুমি পেয়েছ, সেটাকে পুরোপুরি ব্যবহার করা। অন্য দিকে মন কম দেওয়া। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, তুমি নিজে যেখান থেকে এসেছ, সেটা নিয়ে কখনও লজ্জিত হবে না। নিজের স্কুল, নিজের শহর, নিজের বাড়ি— যেমনই হোক না কেন, এগুলোই তোমার পরিচয়। তাই, সেগুলো নিয়ে যদি কেউ তাচ্ছিল্য বা অপমান করে, তা হলে তাদের এড়িয়ে চলাই ভাল। তুমি বাংলায় কথা বললে তারা যদি উত্তর না দেয়, তা হলে সেটা তাদের সমস্যা, তোমার নয়। বাংলা তোমার মাতৃভাষা। এই ভাষাতেই কথা বলার সম্পূর্ণ অধিকার তোমার আছে। কোনও সভ্য সমাজে মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য কাউকে লজ্জিত হতে হয় না। বিদেশে অনেক জায়গাতেই দেখবে, মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় তারা কথা বলতেই চায় না। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাংলা ভাষীদের অনেকেই নিজের ভাষাকে সজ্ঞানে পরিত্যাগ করে অন্য ভাষাকে আপন করে নিয়েছে। সেই স্রোতে গা না-ভাসানোই ভাল।

দ্বিতীয় যে বিষয়টা নিয়ে তোমাকে চর্চা করতে হবে, সেটা ইংরেজি। ইংরেজি আমাদের কাজের ভাষা। উচ্চশিক্ষা, চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজি জানাটা বাধ্যতামূলক। কথোপকথনের সময় কে কী ভাষায় কথা বলবে, সেটা তার নিজস্ব পছন্দ। কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে এগিয়ে যেতে হলে ইংরেজি জানতেই হবে। সুতরাং, ইংরেজি ভাষাটায় শান দাও। ইংরেজি খবরের কাগজ পড়ো, নিউজ় চ্যানেল দেখো। এতে কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের কথা বলতে হয়, তার একটা ধারণা পেয়ে যাবে। সঙ্গে ইংরেজি গল্পের বই পড়ো। অনেক জায়গাতেই এখন ইংরেজিতে কথা বলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানেও ভর্তি হতে পারো। তবে নিজের চেষ্টা না থাকলে শুধুমাত্র ট্রেনিং নিয়ে কোনও ভাষাকে আয়ত্ত করা সহজ নয়। কোনও একটা বিষয় নিয়ে যখন ভাববে, চেষ্টা করো সেটা ইংরেজিতে ভাবতে। এতে বলার কাজটাও সহজ হয়ে যায়। বলার জড়তা কাটিয়ে ওঠার জন্য নিজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইংরেজিতে কথা বলা অভ্যাস করো।

সঙ্গে নিজের ব্যক্তিত্ব তৈরি করো। কথা বলার সময় বা তোমার আচরণে যেন সব সময় একটা ঝকঝকে বুদ্ধিদীপ্ত ভাব বজায় থাকে। অনেকে মনে করেন, শুধু ভাল ইংরেজি বলতে পারলে বা ভাল পোশাক পরতে পারলেই বুঝি ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়ে যায়। এটা ভুল ধারণা। অবশ্যই ভাষা, পোশাক সব কিছুই ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার জন্য জরুরি। কিন্তু তার সঙ্গে প্রয়োজন ভিতরের শিক্ষা। তোমার শিক্ষা, দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, ব্যবহার সব কিছুই সুন্দর ব্যক্তিত্বের জন্য প্রয়োজন। সেটা তৈরি করতে পারলেই দেখবে, যারা এখন তোমার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে, তারাই তোমার বন্ধু হতে চাইবে। এর পরেও যদি কেউ তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড, বাংলা বলা নিয়ে উপহাস করে, তা হলে তাদের কথা ভুলে সামনে এগিয়ে যাও। জীবন অনেক বড়। চলার পথে সঙ্গীর অভাব হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement