শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং ঠেকাতে আগেই নানান ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এ বার ওই ব্যাধির মোকাবিলায় শৌচাগারেও আচমকা পরিদর্শন চালানোর নিদান দিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কেন্দ্রীয় সংস্থার এমন বিজ্ঞপ্তি বলবৎ করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। শৌচাগারে পরিদর্শনের জেরে আবার শ্লীলতাহানির দায়ে পড়তে হবে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
র্যাগিং রুখতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং-বিরোধী কমিটি গড়া বাধ্যতামূলক। প্রয়োজনে পুলিশেও অভিযোগ জানানোর কথা কর্তৃপক্ষের। সম্প্রতি র্যাগিং রুখতে ফের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইউজিসি। তাতে বলা হয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগাতে হবে। নিয়মিত আলোচনা ও কাউন্সেলিং ছাড়াও হস্টেল, ক্যান্টিন, ছাত্রছাত্রীদের কমন রুমে আচমকা পরিদর্শন করতে হবে। সেই পরিদর্শনের তালিকাতেই আছে শৌচাগারের কথাও। আর সেটাই রীতিমতো বিস্মিত করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।
ইউজিসি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, সম্প্রতি কিছু ঘটনার সূত্র ধরেই এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি ঘটনা দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের। গত সেপ্টেম্বরে ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের মৃত্যু ঘিরে অভিযোগ উঠেছিল, উঁচু ক্লাসের কয়েক জন ছাত্রী তাকে শৌচাগারে আটকে রাখে। সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলেই ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে ঐন্দ্রিলা। শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
তা বলে শৌচাগারে আচমকা পরিদর্শন কতটা যুক্তিসঙ্গত?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ শিক্ষকের কথায়, এটা যে একেবারেই অসম্ভব, তা নয়। ছাত্রীদের শৌচাগারের জন্য কোনও মহিলাকে এবং ছাত্রদের জন্য কোনও পুরুষকে পরিদর্শনের দায়িত্ব দেওয়া যেতেই পারে। “তবে খুব সূক্ষ্ম ও পরিশীলিত ভাবে করতে হবে কাজটা,” বলেন তিনি। যদিও ইউজিসি-র এমন কোনও বিজ্ঞপ্তির কথা তাঁদের জানা নেই বলে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
যাদবপুরেও এমন বিজ্ঞপ্তির কথা জানা নেই কারও। সেখানকার এক আধিকারিক রসিকতার ছলে বলেন, “যিনি শৌচাগারে পরিদর্শনে যাবেন, তাঁকে হয়তো মারধরের শিকার হতে হবে!” ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্য এক আধিকারিকের বক্তব্য, কোনও পাঁচতারা হোটেলেও শৌচাগারে নজরদারি চালানো যায় না। ইউজিসি-র বিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্য মহৎ হলেও শৌচাগারে নজরদারি চালালে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে কি না, শ্লীলতাহানির দায়ে ফাঁসতে হবে কি না, সে-সবও ভেবে দেখা দরকার।
প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্ত সাফ বলে দেন, “আমাদের এখানে তো র্যাগিং অসুখটাই নেই। তা হলে আর ওষুধের দরকারটা কী!”
কোনও পড়ুয়া র্যাগিংয়ের শিকার হলে অ্যান্টি-র্যাগিং হেল্পলাইন বা ওয়েবসাইটে অভিযোগ জানাতে পারে। তার জন্য টোল-ফ্রি হেল্পলাইন নম্বরটি হল: ১৮০০-১৮০-৫৫২২। ওয়েবসাইটটি: http://www.antiragging.in। কিন্তু এ-সব বন্দোবস্তের পরেও র্যাগিং একেবারে রোখা যে সম্ভব হয়নি, ঐন্দ্রিলার ঘটনাই তার প্রমাণ। যাদবপুর, বেসু-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে।
ইউজিসি-র মতে, শুধু র্যাগিং-বিরোধী ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। নজরদারি ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে। আর এমন ভাবনার জেরেই পরিদর্শনের তালিকায় ঠাঁই হয়েছে শৌচাগারের।