ভি কে সিংহ ও দলবীর সিংহ সুহাগ
প্রাক্তন সেনাপ্রধান তিনি।
সেটা বড় কথা নয়! কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একজন সদস্য যদি বর্তমান সেনাপ্রধানকে ‘অপরাধী’ বলে মন্তব্য করে টুইট করেন, তা হলে সেনাবাহিনীর মনোবল কোথায় দাঁড়াবে!
এই যুক্তির উপরে দাঁড়িয়েই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহের ইস্তফার দাবি আজ আরও জোরালো করে তুলল কংগ্রেস। যদিও ভি কে সিংহকে অপসারণে রাজি নয় সরকার। কিন্তু সেনাপ্রধান পদে জেনারেল দলবীর সিংহ সুহাগের নিয়োগে সমর্থন জানিয়ে আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, “এই বিষয়টিকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখাই ভাল হবে।”
ভি কে সিংহ যখন সেনাপ্রধান ছিলেন, তখন তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল দলবীর সিংহের বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ভি কে সিংহের সেই সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে এখন সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে সরকার। তাতেই ক্ষেপে উঠে গতকাল বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ ট্যুইট করে বলেছেন, “যদি সেনার কোনও ইউনিট নিরীহদের হত্যা করে এবং ডাকাতি করে, আর তার পরেও যদি সেই ইউনিটের প্রধান সে সব আড়াল করার চেষ্টা করেন, তা হলে তাঁকে দায়ী করা যায় না! অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হবে!”
সুপ্রিম কোর্টে সরকারের হলফনামা পেশ হওয়ার পরই ভি কে সিংহের ইস্তফা দাবি করছিল কংগ্রেস। আর তাঁর টুইটের পর কংগ্রেস আজ সংসদেও বিষয়টি উত্থাপন করে। লোকসভা ও রাজ্যসভায় দলের দুই উপনেতা অমরেন্দ্র সিংহ এবং আনন্দ শর্মা সরকারের কাছে প্রশ্ন তোলেন, এতে সেনাবাহিনীর মনোবল দুর্বল হবে না? কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য যদি সেনাপ্রধানকে এই ভাষায় সমালোচনা করেন, তা হলে সেনা সম্পর্কে দেশের মানুষের মনোভাবই বা কী হবে? পরে অমরেন্দ্র বলেন, হয় সরকারের হলফনামা মিথ্যে এবং ভি কে সিংহ ঠিক বলছেন। তা হলে সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে। নইলে সরকারের হলফনামা সত্যি। এবং তাতে কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর প্রতি সরকারের অনাস্থা প্রকাশ পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে।
এই অবস্থায় আজ রাজ্যসভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, “কিছু বিষয় রাজনৈতিক বিতর্কের উর্ধ্বে থাকে। সেনাপ্রধানের পদটি তেমনই। ইউপিএ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে দেশের নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল দলবীর সিংহ সুহাগকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সেই নিয়োগকে বর্তমান সরকারও সমর্থন জানাচ্ছে। বিতর্ক এখানেই শেষ হওয়া দরকার।”
কিন্তু ভি কে সিংহের অপসারণের ব্যাপারে সরকার কী ভাবছে? তাঁর টুইট নিয়েই বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কী বক্তব্য? এ ব্যাপারে জেটলির মন্তব্য, “রাজনৈতিক সমালোচনার মুখে পড়ে ভি কে সিংহ হয়তো আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কিছু কথা বলেছেন।” কিন্তু দায়সারা ভাবে এই জবাব দিয়ে আর কিছু বলতে চাননি জেটলি। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, তাতে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে ভি কে-কে সমর্থন করছে না বিজেপি বা সরকার। তা ছাড়া ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারা ভি কে-র সমালোচনাই করছেন। তাঁদের মতে, দুম করে রাজনীতিতে চলে আসা ব্যক্তিদের বুঝে সুঝে কথা বলা উচিত।
মজার বিষয় হল, ভি কে সিংহ যখন সেনাপ্রধান, তখন তাঁকে নিয়ে ভুগতে হয়েছিল কংগ্রেসকে। বিজেপি তাতে মজা পেয়েছিল। এখন বিজেপি-র পালা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসও বিষয়টা সহজে ছাড়তে চাইছে না। পাঁচ মাস বাদে হরিয়ানায় ভোট। তার আগে সেখানে এ সব নিয়ে প্রচারের কথা ভাবছেন কংগ্রেস নেতারা। এর পিছনে দুটি কারণ রয়েছে। এক, হরিয়ানা থেকে প্রচুর তরুণ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দুই, বর্তমান সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ একজন জাঠ। আর সব থেকে বড় কথা হল, কেন্দ্রে মোদী সরকার গঠনের পর এই প্রথম কোনও একটি বিষয় হাতে পেয়েছে কংগ্রেস। তাই এটা নিয়েই এখন মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়াতে চাইছেন তারা।