আমলা-শাসন। কড়া মেজাজে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। সোমবার ধানবাদের প্রেক্ষাগৃহে চন্দন পালের তোলা ছবি।
প্রাক-বাজেট নিয়ে বৈঠক চলছিল ধানবাদের বিসিসিএল কমিউনিটি হলে। মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। গত কাল সন্ধের ঘটনা। আচমকা দর্শকাসনের সামনের সারিতে বসে থাকা ধানবাদের ডিসি মনোজ কুমারের মোবাইল বেজে ওঠে। কানে ফোন চেপে কথা বলতে শুরু করেন ওই আমলা।
হঠাৎ বক্তৃতা থামিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। রীতিমতো ধমকের সুরে তর্জনি উঠিয়ে রঘুবর বলেন, ‘‘ডিসি সাহেব, বাইরে বেরিয়ে যান। এখানে এ সব চলবে না।’’ হতবাক হয়ে যান মনোজ কুমার। মুখ্যমন্ত্রী তখনও হাতের আঙুল উঠিয়ে তাঁকে প্রেক্ষাগৃহের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত করছেন দেখে আর দেরি করেননি তিনি। চুপচাপ বেরিয়ে যান জেলাশাসক।
রঘুবরের রোষ শেষ হয়নি সেখানে।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য চলাকালীন আচমকা সিঁড়ি দিয়ে হনহনিয়ে মঞ্চে উঠে এসেছিলেন ধানবাদের এডিএম (সরবরাহ) অনিল সিংহ। ফের বক্তৃতা থামিয়ে দেন রঘুবর। অনিলবাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেন— ‘‘আপ কৌন?’’ অনিলবাবু নিজের পরিচয় দিতে না দিতেই মুখ্যমন্ত্রী মাইক্রোফোনে বলে ওঠেন, ‘‘এটা চূড়ান্ত অনুশাসনহীনতা। আমি একদম এ সব মেনে নেব না।’’ মঞ্চে দাঁড়িয়েই তিনি অনিলবাবুকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন।
সভা তখন নিশ্চুপ।
তাতেও রঘুবরের রাজ-শাসন শেষ হয়নি। রাঁচি ফেরার সময় হেলিকপ্টারে উঠতে যাওয়ার আগে তিনি ইশারা করে ডাকেন ধানবাদের এসপি রাকেশ বনশলকে। আশপাশে ভিড় ছিল অনেক আমলার। মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজের সাক্ষী ছিলেন সবাই। ভয়ে তটস্থ হয়ে যান সকলে। রঘুবর উঁচু স্বরে এসপিকে বলেন, ‘‘তোমার বিরুদ্ধে অনেক নালিশ কানে আসছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করো। বুঝতে পারলে? আশা করি বুঝতে পেরেছ।’’ এই বলে গটগট করে হেলিকপ্টারে উঠে পড়েন রঘুবর। সকলের সামনে বকুনি খেয়ে শীতের সন্ধেয় ঘামতে শুরু করেন এসপি।
প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ কেন রঘুবর আমলাদের উপর রেগে গেলেন? প্রকাশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী আইএএস, আইপিএস-দের বকছেন, সাসপেন্ড করছেন এ রকম নজির কার্যত নেই।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কয়েক দিন ধরে আমলাদের শৃঙ্খলাভঙ্গের নানা অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছচ্ছিল। তিনি ঠিক করেছিলেন, প্রাক্-বাজেট ভাষণে সকলের সামনে ওই প্রসঙ্গ তুলবেন। মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব অজয় কুমার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী খুবই কোমল স্বভাবের। জনতা-দরদী। কিন্তু কোনও স্তরে শৃঙ্খলাহীনতা উনি পছন্দ করেন না।’’ অজয় কুমারের দাবি, শৃঙ্খলাভঙ্গ হলে সব সময়ই কড়া ব্যবস্থা নেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগেও একটি সভায় দেরিতে পৌঁছনোর জন্য এক আমলাকে সাসপেন্ড করেছিলেন।
অন্য দিকে, গত কাল যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর রোষের মুখে পড়েছেন, তাঁরা এ নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সংবাদমাধ্যমের ফোনও ধরেননি কেউ।