রাজ্যসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচনকে ঘিরে আবার সঙ্কটের মুখে পড়েছেন নীতীশ কুমার। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দলে ক্ষোভ-বিক্ষোভকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। নতুন মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করে তখনকার মতো ক্ষোভ-বিক্ষোভ ধামাচাপা দিলেও নতুন মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় সম্প্রসারণকে ঘিরে তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ বার রাজ্যসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচনকে ঘিরে তা আবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
রাজ্যসভার তিন সদস্য এলজেপি-র রামবিলাস পাসোয়ান, বিজেপি-র রাজীবপ্রতাপ রুডি এবং আরজেডি ছেড়ে আসা বিজেপি-র রামকৃপাল যাদব লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ায় এই তিনটি আসন খালি হয়। নির্বাচন কমিশন তিনটি আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই তিন আসনে উপনির্বাচনের কথা ঘোষণা করে। আজই ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন।
এই উপনির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, বিধায়করা প্রত্যেক আসনের জন্য আলাদা করে ভোট দিতে পারবেন। সেই কারণেই এই ভোটে প্রত্যেক প্রার্থীকে জিততে হলে ৫০%+১টি ভোট পেতে হবে। বিহার বিধানসভার মোট সদস্য সংখ্যা ২৪৩। এই মুহূর্তে মোট সদস্য রয়েছে ২৩২। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রার্থীকে ১১৭টি ভোট পেতেই হবে। তেমন শক্তি জেডিইউ ছাড়া আর কারও নেই। ১১৭ জন বিধায়ক নিয়ে তিনটি আসনই জেডিইউয়ের দখলে যাবে।
স্বাভাবিক ভাবেই জেডিইউ তিন আসনের জন্য তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। তিন প্রার্থী হলেন লোকসভা ভোটে পরাজিত দলের সর্বভারতীয় সভাপতি শরদ যাদব, পবন বর্মা এবং গুলাম রসুল বালিয়াভি। এর পরেই শুরু হয়ে যায় দলের মধ্যে বিক্ষোভ। শরদ যাদবের বিষয়ে দলীয় বিধায়কদের আপত্তি না থাকলেও আপত্তি রয়েছে দুই ‘বহিরাগত’ বিশিষ্ট জন, লেখক পবন বর্মা ও কবি গুলাম রসুলকে নিয়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নীতীশ-সহ জেডিইউ নেতারা গত কাল বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করতে গত কাল রাতেই বৈশালীর এক বিধায়ক রবীন্দ্র রাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
কিন্তু তাতে লাভ বিশেষ হয়নি। আজ মনোনয়ন পেশের শেষ দিনে বর্মা ও রসুলের বিরুদ্ধে জেডিইউয়ের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দু’জন মনোনয়ন পেশ করেন। পবন বর্মার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে জেডিইউ নেতা অনিল শর্মাকে। তিনি জেহানাবাদ লোকসভা আসনে জেডিইউয়ের প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি গুলাম রসুল বালিয়াভির বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে জেডিইউয়ের প্রাক্তন রাজ্যসভা সদস্য তথা দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবির আলিকে।
এ ছাড়াও এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন ‘নির্দল’ দিলীপ জায়সবাল। তিনি লোকসভা ভোটে কিষাণগঞ্জে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। এ বার তিনি নির্দল হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। শরদের বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থী না থাকায় তাঁর জয় ঘোষণার খবর এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
অর্থাৎ সরকারি ভাবে বিজেপি কোনও প্রার্থী দেয়নি। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির নন্দকিশোর যাদব বলেন, “এখানে বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই। আমাদের কোনও প্রার্থীও নেই। এই নির্বাচনে আমাদের ভূমিকা পরে ঠিক করব।” লালুপ্রসাদ বলেন, “আরজেডি কাউকেই সমর্থন করবে না। কোনও হুইপও জারি করা হবে না। বিধায়করা নিজেদের বিবেক অনুযায়ী ভোট দেবেন।”
আর এই পরিস্থিতিতে নীরব জেডিইউ নেতৃত্ব। নীতীশের কর্তৃত্বের রাশ যে দলে ক্রমশ আলগা হয়ে গিয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন দলেরই এক শীর্ষ নেতা। তবে তাঁর অভিযোগ, এর পিছনে শরদ যাদব এবং বিজেপি-র প্রচ্ছন্ন হাত রয়েছে। এনডিএ-র ঘনিষ্ঠ শরদ এ বার জেডিইউকে নীতীশের হাত থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছেন। তাতে সরাসরি বিজেপি-র মদত রয়েছে। আর বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দাবি, তাঁদের সঙ্গে জেডিইউয়ের অন্তত ৫০ জন বিধায়ক আছেন। পিছনে বিজেপি-র ৯১ জন বিধায়কও রয়েছেন।
অর্থাৎ রাজ্যসভার দু’টি আসন যদি বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর হাতে যায় তবে বুঝতে হবে নীতীশের নেতৃত্বাধীন জেডিইউয়ে ভাঙন প্রায় অবশ্যম্ভাবী।