নতুন সঙ্গী। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কিরণ বেদী। ছবি: পিটিআই।
অরবিন্দ কেজরীবালের জবাব কিরণ বেদী। দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের তিন সপ্তাহ আগে কিরণ বেদীকে বিজেপিতে নিয়ে মোক্ষম চাল দিলেন নরেন্দ্র মোদী। হাবেভাবে নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবেও তুলে ধরলেন কিরণ। তাঁর পরে জয়া প্রদা, সাজিয়া ইলমির মতো পরিচিত মুখও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
একার ক্ষমতায় দিল্লি বিধানসভা জয়ের পথে কেজরীবাল যে এখন পথের কাঁটা, গত সপ্তাহে রামলীলা ময়দানের সভাতেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই অরবিন্দ কেজরীবালকে এ বারে সরাসরি টক্কর দেওয়ার জন্য আজ এক সময়ে তাঁর সহযোগী অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস কিরণ বেদীকে বিজেপিতে নিয়ে এলেন তিনি। বিকালে বিজেপির সদর দফতরে অমিত শাহ, অরুণ জেটলির উপস্থিতিতে দলে যোগ দেওয়ার আগে বেনজির ভাবে মোদী স্বয়ং দেখা করেন কিরণের সঙ্গে। যার থেকে বার্তা স্পষ্ট এখন ঘোষণা না হোক, দিল্লিতে গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে কিরণের যোগদান। অমিত শাহ শুধুমাত্র ঘোষণা করেছেন, বেদী নির্বাচন লড়বেন। কিন্তু বেদী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে নিজের ইচ্ছাটি পরোক্ষে প্রকাশই করে ফেললেন। অমিত শাহ তা খণ্ডন না করে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়টি স্থির করবে সংসদীয় বোর্ড। শাহের নির্দেশে আগামিকাল দিল্লিতে বেনজির ভাবে কিরণকে সংবর্ধনা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লির এক বিজেপি নেতা বলেন, “আমরা এ বারে ভোট লড়ব কিরণ বেদীর নেতৃত্বেই।”
দলের মধ্যে একটি প্রস্তাব রয়েছে, নয়াদিল্লি আসনে অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে বেদীকে প্রার্থী করে সরাসরি টক্কর দেওয়ার। অথবা অজয় মাকেনের বিরুদ্ধে লড়িয়ে জেতার পথ আরও সুগম করার। এক সময় অণ্ণা হজারের আন্দোলনে একসঙ্গে লড়াই করেছেন দুই নেতা। যে কারণে কিরণের বিরুদ্ধে প্রচারের বেশি সুযোগ থাকবে না অরবিন্দ কেজরীবালের। এর ফলে মোদী বনাম কেজরীবাল লড়াইয়ের যে ছবিটি তৈরি হয়েছে, তা বদলে কিরণ বনাম কেজরীবাল হবে। তা ছাড়া হিন্দুত্ব-ঘেঁষা না হওয়ায় কিরণ সংখ্যালঘুদের মনও জয় করতে পারেন বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন। দিল্লির ভোটে মহিলাদের নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু। এক জন সফল প্রশাসক হিসেবে কিরণ মহিলাদের সমীহও আদায় করবেন, এমনটাই আশা বিজেপি নেতৃত্বের।
কিন্তু কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার এই রাজনীতিতে কিরণকে সামনে রেখে সমস্যাও অনেক। একে তো কিরণ রাজনীতিক নন। ফলে তাঁর রাজনীতির মাত্রাজ্ঞান নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে। দিল্লির গত বিধানসভা ভোটেও তাঁকে নিয়ে আসার একটি প্রস্তাব ছিল। কিরণ সেই সময়ও প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি। কিন্তু দিল্লির বিজেপি নেতাদের তাঁকে নিয়ে সমস্যা ছিল। সেটি এখনও আছে। আজ যে ভাবে মোদীর সঙ্গে দেখা করে আসার পর কিরণ কার্যত নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরলেন, তাতে খুশি নন দিল্লির অনেক বিজেপি নেতা।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার লাইনে থাকা সাজিয়া ইলমিকে নিয়েও সমস্যা রয়েছে। বিজেপি সূত্রের মতে, সাজিয়া দিল্লির আর কে পুরম আসন থেকে লড়তে চাইছিলেন। এই আসনে গত বার আম আদমি পার্টির টিকিটে লড়ে অল্পের জন্য হেরেছিলেন। বিজেপি তাতে রাজি নয়। সাজিয়া আজ নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি কেজরীবালের বিরুদ্ধে লড়ছেন না। এই সুযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে অতীতে সাজিয়া যে মন্তব্য করেছিলেন, তা আজ টুইট করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কেজরীবাল। এরই মধ্যে অমর সিংহের সহযোগী জয়া প্রদা প্রধানমন্ত্রীর তারিফ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বিজেপি নেতারাও জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই আলোচনা চলছে।