জাইডাস ক্যাডিলা। ফাইল চিত্র।
প্রতিকূলতা কাটিয়ে, সারা দেশের মতো এ রাজ্যেও তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক গবেষণা শেষ করল ভারতে তৈরি প্রতিষেধক জ়াইকোভ ডি।
ডিএনএ মাধ্যমে তৈরি ওই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক গবেষণার প্রথম দু’টি পর্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এক হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবকের উপরে সেটি প্রয়োগ করা হয়েছিল। ওই দু’টি পর্বের পরীক্ষামূলক গবেষণার ফলাফল খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি তৃতীয় ট্রায়ালের ছাড়পত্রও দিয়েছিল। সেই পরীক্ষামূলক গবেষণাতে ক্লিনিক্যাল সাইটে বঙ্গের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৬টি হাসপাতালের নাম ছিল। কিন্তু এথিক্স কমিটির ছাড়পত্র মেলার পরেও মাত্র ২টি বেসরকারি হাসপাতালে ওই প্রতিষেধকের ট্রায়াল হয়েছে। রাজ্যে ওই প্রতিষেধক গবেষণার সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্তা স্নেহেন্দু কোনার বলেন, ‘‘৬টি সাইট মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার জনের উপরে ওই প্রতিষেধক পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় স্বেচ্ছাসেবক মেলেনি। সে জন্য মাত্র ২টি হাসপাতালে ১২০০ জনের উপরই ট্রায়ালটি করতে হয়েছে আমাদের।’’
জানা গিয়েছে, আমদাবাদের জ়াইডাস ক্যাডিলা সংস্থার ‘জ়াইকোভ ডি’ প্রতিষেধকটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক গবেষণাতে সারা দেশে ২৮ হাজার ২১৬ জনের উপর তা প্রয়োগ করা হয়েছে। কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন এবং স্পুটনিক ভি এই টিকাগুলি সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাংসপেশিতে দেওয়া হলেও, জ়াইকোভ ডি প্রতিষেধকটি দিতে শরীরে সূচ ফোটানোর প্রয়োজন পরে না বলেই জানা গিয়েছে। ‘ফার্মাজ়েট’ নামক একটি বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে ওই প্রতিষেধক ত্বকের উপরে দেওয়া হয়। যেমন ভাবে আগে বিসিজি টিকা দেওয়া হত। প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞ এবং শহরে জ়াইকোভ ডি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এমআরএনএ প্রতিষেধক শরীরে ঢুকে সরাসরি প্রোটিন তৈরি করে। আর সেখানে এক ধাপ বেশি কাজ করে ডিএনএ প্রতিষেধক। সেটি শরীরে প্রবেশ করে প্রথমে এমআরএনএ তৈরি করে। তার পরের ধাপে সেটি ট্রান্সমিশন হয়ে প্রোটিন তৈরি করে। যা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে।
সূত্রের খবর, ডিএনএ-র মাধ্যমে তৈরি এই জ়াইকোভ ডি প্রতিষেধকটি সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত রাখা যায়। সব ঠিকঠাক থাকলে মে মাসের মাঝামাঝি ওই প্রতিষেধকটিকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারে সংস্থাটি। জানা যাচ্ছে, জ়াইকোভ ডি-র প্রথম ডোজ়ের ২৮ দিন পরে দ্বিতীয়টি নিতে হবে। তারও ৫৬ দিন পরে তৃতীয়টি নিতে হবে। প্রশ্ন হল, দুটি ডোজ়ের প্রতিষেধকে প্রথমটির পরে দ্বিতীয়টি পেতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটছে। সেখানে তিনটি ডোজ়ের প্রতিষেধক নিতে কী রাজি হবেন সকলে? স্নেহেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘এতে ইমিউনিটি বুস্টিং ভাল হবে। শেষ ডোজ়টি বুস্টার ডোজ় হিসেবে কাজ করবে। সেটিই শরীরে তৈরি হওয়া ইমিউনিটিকে দীর্ঘ স্থায়ী করবে।’’