গোটা বিষয়ে এখনও নিশ্চুপ জুবিন নিজে। —ফাইল চিত্র।
অসম বিধানসভায় বিজেপি-র ক্ষমতায় আসার পিছনে অন্যতম ইন্ধন ছিল তাঁর গান। এ বার সেই গায়ক জুবিন গর্গের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করল রাজ্য বিজেপি। অভিযোগ, দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন-এর বিরুদ্ধে অপমানজনক উক্তি করেছেন জুবিন। যদিও জুবিনের এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভারতরত্ন এবং পদ্ম-সম্মান প্রাপকদের নাম ঘোষণা করার পর শুক্রবার রাত থেকেই জুবিনের একটি গান ভাইরাল হয়। হোয়াট্সঅ্যাপে ঘুরতে থাকে তাঁর নতুন গান ‘পলিটিক্স না করিবো বন্ধু’। অভিযোগ, তাতে অসংদীয় শব্দ ব্যবহার করেছেন গায়ক। এর পর শনিবার সকালে জুবিনের বিরুদ্ধে অসমের হোজাই জেলার লঙ্কা থানায় এফআইআর করেন রাজ্য বিজেপি-র কিষান মোর্চার সহ-সভাপতি সত্যরঞ্জন বরা।
নিজের ফেসবুক পোস্টে সত্যরঞ্জন বলেন, “জুবিন গর্গের সঙ্গে আমার কোনও ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। তবে তিনি যে আচরণ করছেন তা অসমের সুস্থ এবং সংস্কৃতিবান সমাজের পক্ষে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।” ভারতরত্নের অসম্মান ছাড়াও ওই গানে অসমের আর এক ভূমিপুত্র ভূপেন হাজরিকার বিরুদ্ধেও অপমানজনক উক্তি করেছেন বলে দাবি করেছেন সত্যরঞ্জন।
আরও পড়ুন: ‘রাম জন্মভূমি মামলা ২৪ ঘণ্টায় মিটিয়ে দেব’, সুপ্রিম কোর্টকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন যোগী
ভূপেন হাজরিকাকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। জুবিনের বিরুদ্ধে এফআইআরে সত্যরঞ্জনের দাবি, “দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্নের অসম্মান, অশ্রদ্ধা এবং অপমান করা ছাড়াও অসমের গর্ব প্রয়াত ভূপেন হাজরিকাকে অসংদীয় এবং অসামাজিক শব্দে অপমান করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন: মোদীর অস্বস্তি বাড়ালেন নবীনের বোন
সত্যরঞ্জন ছাড়া গুয়াহাটির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ নাথও জুবিনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। দিসপুর থানায় বিশ্বজিতের অভিযোগ, ঘৃণার বাণী ছড়াচ্ছেন জুবিন। নিজের অভিযোগপত্রের সঙ্গে জুবিনের গানের ওই হোয়াট্সঅ্যাপ অডিয়ো ক্লিপটিও থানায় জমা করেছেন বিশ্বজিৎ।
যদিও যে গানটিকে নিয়ে এত বিতর্ক, তাতে ভারতরত্ন নিয়ে জুবিন গর্গ অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করেছেন কি না, এখনও পর্যন্ত তার সত্যতা যাচাই করা হয়নি। গোটা বিষয়ে এখনও নিশ্চুপ জুবিন নিজেও।
অনেকে আবার এই গোটা বিতর্কে রাজনীতির গন্ধ দেখছেন। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র হয়ে প্রচারে বিশিষ্ট মুখ ছিলেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে তাঁর গাওয়া গানের জনপ্রিয়তার ফায়দাও ঘরে তুলেছে বিজেপি। সম্প্রতি অবশ্য রাজ্যের বিজেপি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে জুবিন গর্গের। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে অসমের বহু বিশিষ্টজনের সঙ্গে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন জুবিন। ১৯৫৫ সালের সেই বিল সংশোধন করে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে এ দেশে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ওই বিল। সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, ১২ বছরের বদলে মাত্র ৬ বছর এ দেশে থাকলেই ভারতের নাগরিক বলে গণ্য করা হবে পড়শি দেশের ওই সংখ্যালঘুদের। তবে এ নিয়ে তীব্র জনরোষ দেখা দেয় অসমে। রাজ্যবাসীর একাংশের দাবি, এই বিল আইনে পরিণত হলে তাতে রাজ্যে একঘরে হয়ে যাবে অসমিয়ারাই। এ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের উদ্দেশে ফেসবুকেও লেখেন জুবিন। ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে তাঁর গান ব্যবহার করে যে ভোট কুড়িয়েছিল বিজেপি, তা ফিরিয়ে দেওয়ারও কথা বলেন জুবিন। অনেকের প্রশ্ন, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলাতেই কি জুবিনের বিরুদ্ধে সরব হল রাজ্য বিজেপি?
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)