‘কোভ্যাক্সিন’-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে এমসে— ফাইল চিত্র।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)-এ প্রথম পর্যায়ের ‘হিউম্যান ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু ভারতে তৈরি করোনার টিকা কোভ্যাক্সিন নিয়ে অযথা তাড়াহুড়ো করতে নারাজ প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থার চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণ এলা সোমবার জানিয়েছেন, সুরক্ষা এবং গুণমানের বিষয়ে তাঁরা কোনও রকম আপস করতে রাজি নন।
চেন্নাই ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ এন্ডগেম সিনারিওজ’ শীর্ষক আলোচনায় আজ কৃষ্ণ বলেন, ‘‘করোনার টিকা তৈরির বিষয়ে আমরা প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছি। কিন্তু সুরক্ষা ও গুণমানের বিষয়টি আমাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভুল ভ্যাকসিন দিয়ে আমরা আরও বেশি মানুষকে মেরে ফেলতে পারি না।’’
কৃষ্ণের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এমস-এ প্রথম পর্যায়ে মানবদেহে পরীক্ষা-পর্বের পরে করোনা টিকা বাজারে আসতে আরও কত দিন সময় লাগবে। তাঁর জবাব, ‘‘আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল গবেষণা হচ্ছে। বিষয়টির সঙ্গে আমাদের দেশ এবং সংস্থার সুনামের প্রশ্ন জড়িত। স্বল্প মেয়াদের গবেষণা নয়, সেরা মানের ভ্যাকসিন তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।’’
ভারত ভ্যাকসিন গবেষণার ক্ষেত্রে ইউরোপ ও আমেরিকার থেকে পিছিয়ে নেই বলেও এ দিন দাবি করেন কৃষ্ণ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জিএসকে বা সানোফির চেয়ে মোটেই পিছিয়ে নেই। যাঁরা আমাদের দক্ষতা নিয়ে অতীতে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, তাঁরা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন। অভিজ্ঞতা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মিশেলে ভারত পোলিও, রোটাভাইরাস এবং অন্য রোগের টিকা উৎপাদন করে দেখিয়েছে। ভারতীয় সংস্থাগুলি গুণমান বজায় রেখেই কম দামের ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পেরেছে।’’ প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কালে জিএসকে-র তুলনায় অনেক কম দামে রোটাভাইরাসের টিকা বাজারে এনেছিল ভারত বায়োটেক। কৃষ্ণের দাবি, সরকারি তহবিল খরচ না করেই সুলভ মূল্যের ভারতীয় করোনা টিকা বাজারে আসবে।
আরও পড়ুন: করোনা পজিটিভ প্রণব মুখোপাধ্যায়, নিজেই জানালেন টুইটে
জুলাই মাসে দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি)-র সহযোগিতায় করোনা ভ্যাকসিন তৈরির কথা জানিয়েছিলেন কৃষ্ণ। সফল প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-র তরফে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমোদন মেলে। শুরু হয় স্বেচ্ছাসেবক খোঁজার পালা।
আরও পড়ুন: মন্দা আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে, মোকাবিলায় তিন দাওয়াই মনমোহনের
গত ২৪ জুলাই এমস-এ প্রথম মানবদেহে করোনা টিকার পরীক্ষা হয়েছিল। এমস-এ কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষার জন্য দিল্লির ‘ডক্টর ডাংস ল্যাব’-এর সহযোগিতা নিচ্ছে হায়দরাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেক। কৃষ্ণ জানিয়েছেন, এখন মানবদেহে দ্বিতীয় পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। প্রথম পর্যায়ের হিউম্যান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে গুজব ছড়িয়েছিল, ১৫ অগস্ট বাজারে আসবে করোনা টিকা! পরে সেই ‘সম্ভাবনা’ খারিজ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। কিন্তু কৃষ্ণের এদিনের মন্তব্য ‘প্রতীক্ষার প্রহর’ দীর্ঘতর হওয়ার ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।