গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
অ্যাপের ‘ডিল অব দ্য ডে’-তে বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর মহিলাদের ছবি প্রকাশ করে নিলামে তোলা হচ্ছিল, এই অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে চিঠি দিয়ে তদন্তের আর্জি জানালেন ৫৬ জন সাংসদ। বিহারের কংগ্রেস সাংসদ মহম্মদ জাভেদ সাংসদদের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি পৌঁছে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
তিনি চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, গত ৪ জুলাই একটি অ্যাপ এবং একটি ওয়েবসাইটে বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর মহিলাদের ছবি দিয়ে তাঁদের নিলামে বিক্রির জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। এ ছাড়া ইদের দিন, একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে কিছু মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলা হয়, ‘‘এদেরও বিক্রি করা হবে। সর্বোচ্চ দর যিনি দেবেন, তিনি পাবেন।’’ ঘটনার পরেই তোলপাড় শুরু হয় নেট মাধ্যমে। একাধিক মহিলা অভিযোগ করেন, তাঁদের ছবি এই নির্দিষ্ট অ্যাপ ও ইউটিউব চ্যানেলে ব্যবহার করা হয়েছে। গত ১৬ মে এই নিয়ে প্রথম একটি অভিযোগ জমা পড়ে। তারপর থেকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও এখনও তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফ থেকে, অনেকদিন থেকেই বিরোধী দলগুলি এই অভিযোগ করছে।
সেই নিয়েই এ বার তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানালেন সাংসদরা। জাভেদ টুইটারে লিখেছেন, এই আবেদনে দল নির্বিশেষে সাংসদরা স্বাক্ষর করেছেন। চিঠিতে জাভেদ দাবি করেছেন, যাঁরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাঁরা অপরাধী। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলেই এই ধরনের অপরাধ করার মতো আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। সেই কারণেই দ্রুত এঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি হানা খান নামে এক মহিলা টুইটে জানান, সম্প্রতি আত্মীয়-পরিজন-বন্ধুরা একের মেসেজ করে চলেন তাঁকে। সঙ্গে ট্যাগ করা নেটমাধ্যমের একটি পোস্ট। সেখানে দেখা যায়, পেশায় পাইলট ওই মহিলার ছবি আপলোড করে তাঁকে বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়েছে! হানা একা নন। অভিযোগ, গত কয়েক সপ্তাহে একটি ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে অন্তত ৮৩ জন ভারতীয় মহিলার ছবি দিয়ে তাঁদের ‘বিক্রির আয়োজন’ করা করেছে। ঘটনাচক্রে, ওই মহিলাদের সকলেই এক নির্দিষ্ট ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর। সেই তালিকায় ছাত্রী, সমাজকর্মী এমনকি, সাংবাদিকেরও নাম এবং ছবি রয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে টুইটারে দেওয়া তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য।
ওই বিশেষ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মহিলাদের সম্পর্কে ব্যবহৃত একটি অবমাননাকর শব্দ রয়েছে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ও অ্যাপটির শিরোনামে। হানা বলেছিলেন, ‘‘ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য অবমাননার উদ্দেশ্যেই এমন কাজ করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।’’ তিনি জানিয়েছেন, ওই ওয়েবসাইটে প্রায় ২০ দিন ধরে তাঁর ছবি ও টুইটারে দেওয়া তথ্য ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমি প্রথমে বিষয়টি জানতেও পারিনি। আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।’’ এরপর পুলিশে অভিযোগ জানান হানা। টুইট করে বিষয়টি সামনেও আনেন।