স্বামীর সঙ্গে মৃত তরুণী এবং সন্তান। ছবি: সংগৃহীত।
বৃষ্টিতে জলমগ্ন দিল্লি। বুধবার সন্ধ্যায় খোলা নর্দমায় পড়ে প্রাণ গিয়েছে ২৩ বছরের এক তরুণী এবং তাঁর তিন বছরের শিশুপুত্রের। পরিবারের দাবি, প্রায় দু’ঘণ্টা পর দেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর পরেও তিন বছরের শিশুপুত্রের হাত ছাড়েননি মা।
মৃতের নাম তনুজা বিস্ত। তিন বছরের পুত্র প্রিয়াংশকে নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পথে বৃষ্টি নামে। নর্দমার মুখ খোলা ছিল। জলমগ্ন রাস্তায় সেই নর্দমা ঠাহর করতে না পেরে পড়ে যান তনুজা এবং শিশুসন্তান। দু’ঘণ্টা পর প্রায় ৫০০ মিটার দূরে দু’জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। তখনও পুত্রের হাত শক্ত করে ধরে রয়েছেন মা।
তনুজার স্বামী গোবিন্দ সিংহ নয়ডার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বুধবার সন্ধ্যায় যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন তিনি নিজের দফতরে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, দ্রুত উদ্ধারের কাজ শুরু করলে মা এবং পুত্রকে বাঁচানো সম্ভব হত। তাঁর কথায়, ‘‘উদ্ধারকাজ দ্রুত শুরু করা হলে আমার স্ত্রী এবং পুত্রের প্রাণ বাঁচত। প্রতি বছর এই ঘটনা হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’
তনুজার কাকা হরিশ রাওয়াত জানিয়েছেন, রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে থাকায় নর্দমা দেখতে পাননি তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘সাড়ে ৭টায় খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দিই। পুলিশ এলেও তাদের সঙ্গে উপযুক্ত সরঞ্জাম ছিল না। ওরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। প্রায় দু’ঘণ্টারও বেশি সময় পর উদ্ধার করা হয় দু’জনের দেহ।’’ হরিশের অভিযোগ, ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও ছিল না। ট্যাক্সিতে চাপিয়ে দু’জনকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘‘যখন দু’জনের দেহ উদ্ধার করা হয়, তখন দেখা যায়, পুত্রের হাত ছাড়েননি মা।’’
স্থানীয়েরা এই ঘটনায় আঙুল তুলেছেন পুরসভার দিকে। এক বাসিন্দা দাবি করেছেন, ‘‘গত তিন মাস ধরে নর্দমার মুখ খোলা। অনেক বার অভিযোগ করেছি। কিন্তু প্রশাসন কাজ করেনি। ২০ বছর ধরে এখানে রয়েছি। প্রতি বছর বর্ষার সময় রাস্তায় জল জমে। বিধায়ক, সাংসদ, প্রশাসনকে জানিয়েছি। কাজ হয়নি।’’ ওই ব্যক্তির অভিযোগ, নর্দমার মুখে ঢাকা বসানোর কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। বুধবার ভারী বৃষ্টির পর থেকে জলমগ্ন দিল্লিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন।