Wayanad Landslide

বড় বড় পাথরের নীচে চাপা পড়ে নিশ্চিহ্ন গোটা গ্রাম, ‘মৃত্যুপুরীতে’ বদলে গিয়েছে ওয়েনাড়ের চুরালমালা

মেপ্পাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে এই দৃষ্টিননন্দন পাহাড়ি গ্রামটি। ১০০টি পরিবার ছিল এই গ্রামে। পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর নেমে এসে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ৮৫টিরও বেশি বাড়ি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৪ ১৫:৫০
Share:

চুরালমালাতে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই।

এখানেই তো সোমবার খেলছিল স্কুলের শিশুরা। কয়েক পা এগিয়েই আবারও থমকে দাঁড়ালেন প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক ভিলসন সি ড্যানিয়েল। বিড়বিড় করে বললেন, “ওই তো, সোমবারও ওখানে আমার স্কুল ছিল!” গত ৭২ ঘণ্টায় সেই ছবিটা পুরোটাই বদলে গিয়েছে প্রকৃতির রোষে। কেরলের ওয়েনাড়ে যে চারটি গ্রামে ধস নেমে সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছে, তার মধ্যেই একটি চুরালমালা।

Advertisement

মেপ্পাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে এই দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি গ্রামটি। ১০০টি পরিবার ছিল এই গ্রামে। পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর নেমে এসে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ৮৫টিরও বেশি বাড়ি। পাথরের মাঝে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বাকি বাড়িগুলি। এক ঝলকে দেখে মনে হতে পারে, কোনও ‘ভূতুড়ে’ জায়গায় এসে পড়া গিয়েছে। এখানে যে একটা গ্রাম, পাকা রাস্তা, স্কুল ছিল, সেই অস্তিত্বই ধস আর বড় বড় পাথরের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছে।

ধসের ঘটনার পর চুরালমালায় এসেছিলেন ড্যানিয়েল। কিন্তু এসে যা দৃশ্য দেখলেন, তাতে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। চুরালমালার সরকারি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ছিলেন ড্যানিয়েল। সংবাদমাধ্যম ‘অনমনোরমা’কে তিনি বলেন, “এই গ্রামকে আমি চিনতে পারছি না। এখানেই আমার ছাত্র-ছাত্রীরা থাকত। ওদের সন্তানেরা এখানেই বেড়ে উঠছিল। কিন্তু যে ভাবে ওরা সব হারিয়ে গেল, ভাবতে পারছি না।” এক কৃষক মইদিনকুট্টি জানান, সোমবার রাতে হেলিকপ্টারের মতো ঘড়ঘড় শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। কী হচ্ছে বুঝতে না পারলেও মনে একটা সন্দেহ জেগেছিল। রাতে ঘুম ভাঙতেই তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।

Advertisement

মইদিনকুট্টি বলেন, “বাইরে আসতেই মনে হল বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছে। সেই ভারী বাতাসে মাটি পোড়া আর বারুদের মতো গন্ধ ভেসে আসছিল।” তার পরই বিকট একটা শব্দ শুনতে পান। আওয়াজটা আসছিল পাহাড়ের দিক থেকে। সে দিকে তাকাতেই চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায় তাঁর। ভয়ানক বিপদ ছুটে আসছে আঁচ করতে পেরেই বাড়িতে ফিরে হাতের সামনে যা পেয়েছেন, তাই নিয়েই নিরাপদ স্থানের দিকে ছোটা শুরু করেন। যাওয়ার সময় পড়শিদের চিৎকার করে সতর্ক করে দেন। কিন্তু সকলে তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মইদিনকুট্টি বলেন, “আসলে বারুদ এবং পোড়া মাটির যে গন্ধ বাতাসকে ভরিয়ে তুলেছিল, সেই গন্ধ সৃষ্টি হয়েছিল পাহাড় থেকে নেমে আসা বড় বড় পাথরের ঘর্ষণে।”

গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ নিখোঁজ। পাথরের খাঁজে, কাদা আর বালির স্তূপের নীচ থেকে খুঁজে খুঁজে বার করা হচ্ছে দেহ। এই ধসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৭৬ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ দু’শোরও বেশি মানুষ।

ওয়েনাড়ের যে অঞ্চলে ধস নেমেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্ডাক্কাই এবং চুরালমালা। ছোট একটা সাজানো-গোছানো গ্রাম। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই চুরালমালা। প্রতি বছর বহু পর্যটক এখানে দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাতের আকর্ষণে ছুটে আসেন। সূচিপাড়া জলপ্রপাত ছাড়াও রয়েছে ভেলোলিপাড়া এবং সীতা হ্রদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement