পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতিনিধি সকলের কাছে পৌঁছে দিতে। প্রশ্ন হল, দেশের অর্ধেকের বেশি পড়ুয়ার হাতে যেখানে স্মার্ট ফোন নেই, ল্যাপটপ নেই, ইন্টারনেট পরিষেবা যেখানে দুর্বল, সেখানে শুধু ভার্চুয়াল শিক্ষাদান কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।
প্রতীকী ছবি।
সমীক্ষা বলছে, পড়াশোনার ক্ষেত্রে দেশে ডিজিটাল অসাম্যকে প্রকট করে দিয়েছে অতিমারি। এমনকি স্মার্টফোন থাকলেও নিম্নমানের ইন্টারনেট পরিষেবায় ভুগতে হয়েছে বড় সংখ্যক পড়ুয়াকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন দেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ডিজিটাল অসাম্য দ্রুত কমে আসছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে আগামী বছরের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা করার প্রশ্নে আজ ওই দাবি করেন তিনি।
বর্তমান দেশের অধিকাংশ রাজ্যই ধাপে ধাপে স্কুল-কলেজ খুলে দিলেও, একাধিক সমীক্ষা জানিয়েছে, গত দু’বছর অতিমারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়েছে পড়ুয়াদের একটি বড় অংশের। আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন সংস্থার সমীক্ষা বলছে, আর্থিক অবস্থা দুর্বল থাকায় অন্তত ষাট শতাংশ পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ক্লাস করার জন্য স্মার্টফোন কিনে দিতে পারেননি সমাজের বিরাট সংখ্যক মানুষ। যার ফলে বড় একটি সময় ধরে পড়াশোনা শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ওই পড়ুয়ারা। অন্য দিকে অক্সফার্ম সংস্থার একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, গ্রামীণ এলাকায় স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ থাকলেও, নিম্নমানের ইন্টারনেট পরিষেবার কারণে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে পড়ুয়ারা। যাদের সংখ্যা মোট পড়ুয়ার প্রায় কুড়ি শতাংশ। ডিজিটাল শিক্ষার লাভ-ক্ষতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে আজ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, অতিমারির সময়ে সব কিছু যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেই সময়ে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে পড়াশোনাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। ডিজিটাল শিক্ষার কারণে পড়াশোনা একেবারে শুকিয়ে যায়নি। মোদীর দাবি, “আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশে যে ডিজিটাল অসাম্য রয়েছে, তা দ্রুত মুছে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের নতুন আবিষ্কার সমাজের সব শ্রেণিকে নিয়ে চলাকে উৎসাহিত করে চলেছে।”
চলতি বাজেটে জাতীয় ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কেন ওই পরিকল্পনা তার ব্যাখ্যায় আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন নিয়ে কোনও সংখ্যাগত বাধানিষেধ থাকবে না। সীমাহীন আসন থাকায় আসনের সমস্যা অনায়াসে মেটানো যাবে। ফলে পড়ুয়ারা যারা যে বিষয় নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক, তারা ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন। সে জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত খোলার জন্য অনুরোধ করছি।” পাশাপাশি ই-বৈদ্য, ডিজিটাল গবেষণাগারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি পড়ুয়াদের প্রভূত সাহায্য করবে বলে জানান মোদী। তাঁর দাবি, এ ধরনের
ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শিক্ষাকে গ্রাম, গরিব, দলিত, পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতিনিধি সকলের কাছে পৌঁছে দিতে। প্রশ্ন হল, দেশের অর্ধেকের বেশি পড়ুয়ার হাতে যেখানে স্মার্ট ফোন নেই, ল্যাপটপ নেই, ইন্টারনেট পরিষেবা যেখানে দুর্বল, সেখানে শুধু ভার্চুয়াল শিক্ষাদান কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।