চাপের মুখে ব্যপম কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানাতে বাধ্য হলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। কিন্তু এই চাপ যতটা না বিরোধীদের, তার থেকেও অনেক বেশি তাঁর নিজের দলের থেকে।
এই সিবিআই তদন্তের মাধ্যমে শিবরাজ সিংহ চৌহানকে আরও চাপের মধ্যে রাখতে পারবেন নরেন্দ্র মোদী, এটাই এখন জোর আলোচনার বিষয় বিজেপি শিবিরে।
কাল পর্যন্তও শিবরাজ সিংহ চৌহান বলে এসেছেন, সিবিআই তদন্তে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আদালতকে। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট থেকে হাইকোর্ট এর আগে সিবিআই তদন্তের দাবি খারিজ করে এসেছে। ফলে রাজ্য সরকার আগ বাড়িয়ে এর দাবি জানাবে না। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোদ রাজনাথ সিংহ কাল শিবরাজকে পাশে নিয়ে একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, গত কাল গভীর রাতেই অমিত শাহের পক্ষ থেকে শিবরাজের কাছে বার্তা পাঠানো হয়, রাজ্য সরকার নিজে থেকে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাক। যুক্তি হিসেবে অবশ্য দেখানো হয়েছে, এতে বিরোধীদের দাবি ভোঁতা হয়ে যাবে। আর হাইকোর্ট এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষেও এখন তাতে হস্তক্ষেপ করা কঠিন হবে।
ভারতের ইতিহাসে বরাবরই দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রে যে দলই ক্ষমতায় থাকে, তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে সিবিআইকে ব্যবহার করে। ইউপিএ আমলেও বিজেপি বরাবর এই অভিযোগ করে এসেছে। সিবিআইকে ‘কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’ বলে কটাক্ষ করেছে। এখন মোদী জমানাতেও অমিত শাহের বিরুদ্ধে মামলাকে সিবিআই লঘু করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এক বার ব্যপম মামলা সিবিআইয়ের হাতে এলে অভিযোগের তির শিবরাজ পর্যন্ত যেতে বাধ্য। শিবরাজ-বিরোধী নেত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী ইতিমধ্যেই ঘনিষ্ঠ মহলে বলতে শুরু করেছেন, ‘‘আমার এক সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় আমাকে যদি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, তা হলে শিবরাজের সচিব অভিযুক্ত হওয়ায় কেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না? গোড়া থেকেই তো আমি সিবিআইয়ের দাবি তুলে আসছি।’’
বিজেপি-র একাংশের মত, এক বার ব্যপম মামলা সিবিআইয়ের হাতে এলে পরিণতি যা-ই হোক, অন্তত শিবরাজকে চাপের মুখে রাখতে পারবেন নরেন্দ্র মোদী। আর এই সুযোগে যে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা এত দিন নরেন্দ্র মোদীর বিপক্ষে শিবরাজকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে আসতে চাইছিলেন, তাঁদের অস্ত্রও ভোঁতা করে দেওয়া যাবে। দলের মধ্যে মোদী-বিরোধীদের বিক্ষোভও প্রশমিত করা সম্ভব হবে। আর এখানেই অনেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলির প্রথম দিনের মন্তব্যটিকে স্মরণ করছেন। তাঁরা বলছেন, প্রথম দিনেই যখন জেটলি একটি নিরপেক্ষ তদন্তের কথা বলেছিলেন, সে দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, মোদী কী চান। হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্তের থেকে গোটা বিষয়টি কেন্দ্রের অধীনে সিবিআই-তেই নিয়ে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। আর সেটিই ঠেকিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন শিবরাজ। রাজনাথকেও এ ব্যাপারে পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
এই মুহূর্তে ললিত মোদী বিতর্কের পর সুষমা স্বরাজ নিজেই প্রবল চাপের মুখে। চাইলে যে কোনও সময় তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। কিংবা দফতর বদল করতে পারেন। ফলে তাঁর পক্ষে এখন আগ বাড়িয়ে আগের মতো শিবরাজের সমর্থনে এগিয়ে আসা সম্ভব নয়। লালকৃষ্ণ আডবাণীকে দলের কোনও বিষয়ে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয় না। এ বারে শিবরাজকেও চাপে রাখার মোক্ষম সুযোগ এসেছে। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘আগামী দিনে দেখুন, কী ভাবে দলের মধ্যে নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের জোট একে একে ছত্রভঙ্গ হয়।’’ কিন্তু শিবরাজ শিবির বলছে, আদালত এ যাবৎ তাদের অধীনে তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করে এসেছে। এখন হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারে আদালত সেই অবস্থানে অনড় থাকবে না কি সরাসরি সিবিআই-এর হাতে তদন্ত সঁপে দেবে, সেটার জন্য অপেক্ষা করা দরকার।