ছবি: পিটিআই।
ছক্কা মারার বল ছিল। ভুল করেননি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন প্রধান। ‘স্টেপ আউটে’ বল মাঠের বাইরে ফেলেছেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার। ৫২ বছর ধরে রাজনীতি করা ব্যক্তিত্বের এক চালে পুণে-বারামতী, সাতারা, সাংলির মতো পশ্চিম মহারাষ্ট্রের কেন্দ্রে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে তাঁর দল।
লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়, ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভাইপো অজিত পওয়ারের দল ছাড়ার হুমকি—মাস খানেক আগেও ছত্রভঙ্গ দশা ছিল এনসিপি-র। এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তে উঠে আসে শরদের নাম। জল্পনা শুরু হয়, ইডি ডাকতে পারে বর্ষীয়ান ওই নেতাকে। পওয়ার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জানান, তিনি নিজেই যাবেন মুম্বইয়ের ব্যালার্ড এস্টেটে থাকা ইডি দফতরে।
ব্যালার্ড এস্টেটেই দফতর এনসিপির। ঠিক হয়, গোটা মহারাষ্ট্রের দলীয় কর্মীরা প্রথমে জড়ো হবেন। সেখান থেকে পওয়ারের নেতৃত্বে যাওয়া হবে ইডি দফতরে। প্রমাদ গোনে মুম্বই প্রশাসন। শহর অচল হওয়ার আশঙ্কায় পওয়ারকে পরিকল্পনা বাতিলের অনুরোধ করেন পুলিশ কমিশনার। আবেদন মেনে নেন শরদ।
দলীয় দফতরে বসে সেই গল্প বলছেন আর হাসছেন গজেন্দ্র মোতে। বললেন, “ইডির দফতরে উনি গেলে কী হত জানি না, কিন্তু পওয়ার গ্রেফতার হতে পারেন শুনেই জেগে উঠেছেন এনসিপি কর্মীরা। বিশেষ করে দলে বসে যাওয়া প্রবীণেরা। পওয়ারের অসম্মানের জবাব দিতে দল মরিয়া। প্রবল সাড়া পাচ্ছি জেলাগুলিতে।” ঘনঘন বাজছে মোরের সামনে রাখা তিনটি মোবাইল। নির্দেশ যাচ্ছে জেলায়-জেলায়। মোরের দাবি, “বারামতী এনসিপির গড়। পুণে, সাতারা, সাংলি ছাড়াও বিদর্ভে দল ভাল করবে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। চাষিদের জন্য সরকার কিছুই করেনি। ঋণ মকুবের পরিকল্পনা রূপায়িত হয়নি।” কৃষকদের ক্ষোভকে উস্কে দিয়ে লড়াই জমিয়েছেন পওয়ার। মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজে নর্থ অ্যাভিনিউ রোডের এনসিপি দফতরে বসে থাকা রাহুল কস্তুরের আক্ষেপ, “কংগ্রেসের অন্তর্কলহ না থাকলে ভাল ধাক্কা দেওয়া যেত শাসক শিবিরকে। কিন্তু মুম্বইয়ে যা অবস্থা কংগ্রেসের!” দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মোবাইলে ব্যস্ত রাহুল।
পওয়ারের পুনরুজ্জীবনে অনেকে বিজেপির হাত দেখছেন। তাঁদের মতে, ইডির জুজু দেখিয়ে এনসিপি-কে চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বিজেপি। পিছনে রয়েছে বিজেপি-শিবসেনার আধিপত্যের দ্বন্দ্ব। মাতুঙ্গা এলাকায় শিবসেনার কার্যালয়ে আলাপ হল দিগম্বর ভোঁসলের সঙ্গে। বর্ষীয়ান ওই নেতার মতে, “এনসিপি ও শিবসেনা দু’দলের শক্তিকেন্দ্র হল পশ্চিম মহারাষ্ট্র ও মরাঠাওয়াড়া অঞ্চল। এনসিপি শক্তিশালী হলে, আসন কমবে শিবসেনার। সে ক্ষেত্রে সরকার গড়ার সময়ে দর কষাকষিতে দুর্বল অবস্থায় থাকবে সেনা। ফায়দা বিজেপির।”
ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টার মধ্যেই উত্তরাধিকার প্রশ্নে এখনও বিভক্ত এনসিপি নেতৃত্ব। পওয়ার মুখে বলছেন, বিজেপি-শিবসেনাকে কবরে না পাঠানো পর্যন্ত তিনি বিশ্রাম নেবেন না। কিন্তু গজেন্দ্ররা মনে করছেন, বিধানসভা নির্বাচনের পরেই বাণপ্রস্থে যেতে পারেন পওয়ার। সে ক্ষেত্রে রাজ্যপাট কার হাতে দেবেন? লড়াই মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে ও ভাইপো অজিত পওয়ারের মধ্যে। মুম্বইয়ের স্থানীয় এনসিপি নেতা অনিল কামাথ জানান, লোকসভায় অজিতের ছেলে পার্থের জন্য মাভাল কেন্দ্র ছেড়ে দেন শরদ। পার্থ হেরে যাওয়ায় পারিবারিক লড়াইয়ে দুর্বল অজিত। পাল্টা চালে শরদ দাদা আপ্পাসাহেবের নাতি রোহিতকে জামখেড় থেকে প্রার্থী করেছেন। জিতলে হাত আরও শক্ত হবে শরদের। বিধানসভার লড়াইয়ের সঙ্গেই পশ্চিম মহারাষ্ট্রের বাতাসে তাই একটি প্রশ্ন অবধারিত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অতঃপর কে?
মেয়ে না ভাইপো?